আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Adventure - নিঝুম দ্বীপ

অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল নিঝুম দ্বীপ যাব, 20 ই ফেব্রুয়ারী 24 জন সহক র্মী নিয়ে রওনা দিলাম বিকাল ৫-৩০ এর টিপু ৫ লঞ্চ এ, যা আমাদের হাতিয়া পর্যন্ত নিয়ে যাবে। বিকাল ৩ টায় এলিফেন্ট রোড থেকে কিভাবে যে সদর -ঘাট গেলাম সে নিদারুণ কষ্ঠের কথা লিখব না কারন আমরা সবাই কম বেশী এ কষ্ঠের ভুক্তভুগি। টিপু-৫ এ উঠে মন টা খারাপ হয়ে গেল। আমি এর আগে বরিশালের লঞ্চ এ উঠেছি সে তুলনায় এটি খুব ই সাধারন মানের, আমরা সকাল ৮ টায় আমাদের দু জন কে পাঠিয়ে জায়গা দখল রেখে জায়গা পেয়েছিলাম, তা না হলে সবাই কে নিয়ে খোলা ছাদে এ যেতে হত। যারা আমাদের জন্য জায়গা রেখেছে ওদের অনেক ক ষ্ঠ হয়েছে কারন দুপুর ১২ – ১ টার পরপর ই লোকজন আসতে শুরু করে, যারা কেবিন এ যেতে চায় তাদের মিনিমাম এক মাস আগে বুকিং দিতে হয়।

আমরা তাই কেবিন পাই নাই। টিপু ৫ লঞ্চ এ কেবিন খুব ই কম, ডেকও বড় না তাই নিজেদের পছন্দ এর জায়গা নিতে আমি সকাল ৮ টা বাজে লোক পাঠিয়ে ছিলাম। লঞ্চ ছাড়ার পড় সব ভুলে গেলাম আড্ডায়, মুন্সিগঞ্জ ছেড়ে যাবার পড় পেলাম নদীর সাধ, আমাদের মাঝে এমন অনেক এ ছিল যারা আগে লঞ্চ এ চড়ে নি বা বড় নদী দেখেনি তারা খুব এঞ্জয় করেছে এ জারনি টা। রাত ১০ টার পর সবাই কে নিয়ে খাবার খেতে গেলাম লঙ্কের কেন্টিন এ, আমাদের খাবারে ওর্ডার আগে ই দেয়া ছিল তাই মন মত খাবার পেলাম, দেখলাম অনেকে ই খাবার না পেয়ে যা আছে তা ই খেতে বাধ্য হচ্ছে। মুরগি , সবজি , ডাল , অসাধারন রান্না ।

খাবার শেষ করে আবার আড্ডা, গানে খেলায় সবাই মেতে উঠলো, রাত পার হয়ে ভোর তখন ই কেবল সাবাই ঘুমালো ঘন্টা দুয়েক। ভোর বেলা আমাদের ঘুম ভাংলো মনপুরা তে, এখানে লঞ্চ প্রায় খালি হয়ে গেল, আমরা ফ্রেশ হয়ে মনপুরাতে নামলাম, কারন এখানে লঞ্চ প্রায় ১ থেকে ১.৫ ঘন্টা থেমে থাকে । মনপুরাতে মষিশের দুধের চা খেলাম, অসাধারন সে চা। এর প্রায় ১ ঘন্টা পড় লঞ্চ তার শেষ ঘাট হাতিয়া তে পৌছলো। এর মাঝে আমরা খিছুরি আর ডিম দিয়ে সকালের নাস্তা সারলাম লঙ্কের কেন্টিন এ , লঞ্চ এর রান্নার ব্যাপারে আমার দারুন আস্তা জন্ম নিল ওরা আসলেই ভাল রান্না করে।

হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপ যেতে আমাদের টলার নিতে হবে। হাতিয়া থেকে টলারে নিঝুম দ্বীপ প্রায় ৩ ঘন্টার পথ। আমার ধারনা যারা নিঝুম দ্বীপ যাওয়া নিয়ে শংষয় এ থাকেন তারা সুধু এ ৩ ঘন্টার পথের জন্য ই যেতে পারেন না। টলারের বিকল্প ও আছে তা শেষের দিকে জানাব। টলার বেশ বড় ছিল তাই দুলুনি ছাড়া আর কোন প্রব্লেম হয় নি।

প্রচন্ড রোদ এ আমরা বেশ কষ্ঠ পেয়েছি। তাই ভেবে রেখেছি এরপ্ড় নিঝুম দ্বীপ গেলে টলারের ছাদে যেন তেরপাল থাকে তা অবশ্যই আগেই বলে নিব। নিঝুম দ্বীপ এর ছোট খালটাতে যখন আমাদের টলার প্রবেশ করেছে নিঝুম দ্বীপ এর সৌন্দর্য সবাই কে গত তিন ঘন্টার কষ্ঠ ভুলিয়ে দিল। আমার আইডিয়া তে নিঝুম দ্বীপ সফর, আমি আগে কখন সেখানে যাইনি তাই আমার মনে অনেক সংশয় ছিল নিঝুম দ্বীপ কেমন হবে, ভাল লাগবে কিনা এ নিয়ে তাই সবচেয়ে খুশী মনে হ্য় আমি ছিলাম। নিঝুম দ্বীপ এর নামা বাজারে দু থেকে তিন টি থাকার জায়গা আছে অবকাশের নিঝুম রিসোর্ট, বন বিভাগের ডাক বাংলো আর মসজিদ বডিং।

আমরা মসজিদ বডিং আর নিঝুম রিসোর্ট এর দুটা ডরমিট্ররিয়াম আগে ই বুকিং দিয়েছিলাম, খাবার দাবার সব দায়ীত্ব অবকাশের ছিলো। কারন ওখানকার রেস্টুরেন্ট গুলর রান্না কেমন হবে জানতাম না, যা জানতাম তা হল রেস্টুরেন্ট গুলুতে মোটা চাউলের ভাত খেতে হবে। অবকাশের আমাদের ঠকায় নি ওদের রান্না ভাল আর খাবারের মান ও বেশ ভাল ছিল। আমরা দুপুরে খেলাম সবজি, ইলিশ মাছ, মোরগ ভুনা, ডাল দিয়ে। একটু রেষ্ঠ নিয়ে আমরা গেলাম মেঘনা আর বঙ্গপো সাগরের মিলন দেখতে স্থানিয়রা এটা কে বলে বিচ।

তারপর আমরা আমাদের মেইন মিশন এ নামলাম। হরিণের পাল দেখা। আমাদের গাইড বলছিল সন্ধার আগে আগে গেলে হরিণের দেখা পাবই পাব। সে অনুযায়ী আমরা একটু দেরি করে ই রওনা দিলাম চৌধুরি খাল এলাকাতে। চৌধুরি খাল নেমে ই আমরা এক কেওরা বনের ভিতর একটি হরিণের দেখা পেলাম।

সে ছুটে বেড়াচ্ছে যেনো বাঘ আক্রমন করেছে। আমরা একটু পরেই টের পেলাম বাঘের চেয়ে ভয়ঙ্গর প্রানীর (মানুষ) দেখা পেয়ে সে দিক বেদিক ভুলে দৌড় দিয়েছে। গাইড আমদের বলল্লো এক জায়গা তে ঘাপ্টি মেরে বসে থাকতে…আমরা তাই করলাম...এর অনেক পরে আমরা টের পেলাম আজ কিছুতেই আর হরিনের দেখা মিলবে না কারণ আমাদের আগেই অনেক টুরিষ্ঠ ওখানে জঙ্গলের অনেক ভিতর এ দাবড়ে বেরাচ্ছে। সুতরাং আজ আর হরিণ ঘাস খেতে এ অঞ্চলে আসবে না। মন খারাপ করে বেশী পাকনা টুরিষ্ঠ দের গালমন্দ করে এ এলাকা টা ঘুরে দেখতে বের হলাম।

চৌধুরি খাল সংলগ্ন এলাকা টি অনেক সুন্দর আর ক্যাম্পিং এর জন্য সর্গ-রাজ্জ্য। মন খারাপ করে ফিরতই পথ ধরলাম, এরপর নামা-বাজারে চা আর আড্ডা এর ফাকে কেউ কেউ অতি কম দামে হরিণের সিং কিনে আনলো। রাতে ফিরে বারবিকিউ দিনার এরপর ছোট একটা পার্টি এবং যে যার বিছানায়। এ পর্যন্ত আমরা সবাই খুশি তখনও জানি না কি বিশাল একটা দিন আর কি দারুন এডভেনচার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে………… (চলবে) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।