আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি।
ইন্টারমেডিয়েটে আমি পডেছি বি এ এফ শাহীন কলেজ,চট্টগ্রামে। প্রথম দিন থেকে বুঝে গেলাম বাব মা আমাদেরকে কলেজে না দিয়ে জেলখানায় দিয়েছেন। এরপর সিদ্বান্ত নিলাম আমি যারা আমার শত্রু আছে তাদেরকে ছলেবলে কৌশলে এখানে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে। তখন ব্যটারা বুঝবে How many paddyতে How many Rice.
যা হোক যতটা কঠিন ভেবেছিলাম অবস্থা তার চেয়েও কঠিন,কিছু হলেই অভিভাবক নিয়ে টানাটানি করে।
আরে যা করার আমারে করেন,আমার বাপ মা কি করছে?এমনিতে আমি পড়া চোর,তার উপর নতুন যাদের সাথে পরিচয় হল তারা মহা চোর। মনে আছে প্রথম পরিচয় হল মশিউরের সাথে...লম্বা,ছিপছিপে...নাকে,মুখে (আর ও বিশেষ জায়গা দিয়ে) একসাথে কথা বলে,ওকে দেখে মনে পৃথিবীতে কথা বলার দায়িত্ব এবং অধিকার কেবল তার। এরপর আসল রবিন,তার বিশেষত্ব হল মাথা গরম (মাঝে মাঝে বাতাস জোরে বইলেও ওর মেজাজ গরম হয়ে যায়)...। এভাবে আমারা ৭ জন হয়ে গেলাম। সারা জীবন শুনেছি ক্লাসে প্রথম বেঞ্চে বসা নিয়ে মারামারি হয়,আর আমরা পুরো কলেজ লাইফ মারামারি করলাম শেষ বেঞ্চ নিয়ে।
যে আগে আসবে সে শেষ বেঞ্চ দখল করত। এমন হয়েছে শেষ বেঞ্চে জায়গা না পেয়ে প্রথম বেঞ্চ নিয়ে শেষে বসিয়ে দিয়েছি। যত নিয়ম আর কড়াকড়ি থাকনা কেন আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের কারনে আমরা আমাদের সকল প্রকার চুরির, সকল প্রকার পথ আবিস্কার করে ফেললাম। যত আইন তত ফাঁক।
একবার মশিউর ক্লাশ পালাবে,ব্যগ নিয়ে কলেজ গেট পযন্ত চলে গেছে, কিন্তু দারোয়ান কিছুতেই ছাড়বেনা।
টাকা দিতে চাইল,কিন্তু দারোয়ান ব্যাটা ঘুষ ও খায় না। তারপর মশিউর পাশে দাঁড়ানো রাইসুল কে জড়িয়ে ধরে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কান্না শুরু করল ”ওরে আমার দাদা গেলগারে, ও দাদা দাদারে...” তখন রাইসুল তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে “দাদা কারও চিরদিন বেঁচে থাকেনা,দাদারা মরে যায়রে”(বাংলা সিনেমার কোণ দৃশ্য মনে করুন) দারোয়ান এর চোখে ও একটু জল চলে আসল। সে রাইসুলকে বলল”তুই নিজে ওরে বাসায় পৌছাই দিবি” রাইসুল বাধ্য ছেলের মত “আমি পৌছাই দিমু” বলে ভাল ছেলের মত বের হয়ে দুইজন কলেজ থেকে একটু দূরে ঘাসের উপর বসে বসে সিগারেট ফুঁকছিল,আর ঠিক তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সেই দারোয়ান। দুইজনকে দেখে সে রীতিমত থ,কারন জিজ্ঞেস করাতে মশিউরের সহজ উত্তর “দাদা মারা গেছিল আমার জন্মের আগে,হঠাৎ মনে পড়ল তাই কাইন্দা দিছি”
এরপর আরেক দিনের কথা নিয়ম মত প্রথম ক্লাশ শেষ করে (চোর হলেও আমাদের নীতি ছিল,প্রথম ক্লাশটা মিস করতাম না) সবাই মিলে পালানোর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। প্রথম গেট,দ্বিতীয় গেট নিরাপদের সাথে পার হলে ও শেষ গেটে বিমান বাহিনীর দারোয়ান আটকে দিল(প্রভোষ্ট)।
জিজ্ঞেস করল” এখন বাজে সকাল৯.৩০,এই সময়তো তোমাদের ক্লাসে থাকার কথা কোথায় যাচ্ছ? রবিন বলল” আসলে আমরা গতকাল সবাই ক্লাশ পালিয়েছি,তাই আজকে আমাদের অভিভাবক ঢেকেছেন,অভিভাবক না আসলে আমাদের ক্লাশে ঢুকতে দিবেন না,তাই আমরা বাসায় ফোন করতে বাইরে যাচ্ছি” বেকুব দারোয়ানটা কীছুক্ষন ভাবল,তারপর বলল-যাও। আমরা অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে বের হলাম এবং পতেঙ্গা সী-বিচে গিয়ে বীচ ফুটবল খেললাম। ক্লাশ পালানোর দোহাই দিয়ে ক্লাশ পালানো।
আমাদের কলেজের ক্যন্টিনের মান ছিল অত্যন্ত খারাপ। তাই আমরা চলে যেতাম বাইরের একটা ক্যন্টিনে পরোটা আর ডাল ভাজি খেতে।
আমাদের সবকিছু আবিস্কারের জনক মশিউর খোজঁ দিল বিমান বাহিনীর হাসপাতালের ভিতরে একটা ক্যন্টিন রয়েছে, যেখানে খচূড়ি ৫ টাকা,বিরিয়ানী্র দাম ৮ টাকা। শুনে বিশ্বাষ করলাম না। কিন্তু মশিউর প্রমান দিল। এই ক্যন্টিনে ছোট প্লেটে পরিবেশন করা বিরিয়ানী এবং খিচূড়ি এক কথায় কঠিন। খেলাম এবং তথ্যটা কলেজিকরন(বাজারজাত করন) করে দিলাম।
আর পায় কে?সবাই মিলে সে কন্টিনে যাওয়া শুরু,আর লাল বাত্তি জ্বলল কলেজ ক্যন্টিনের। সবচেয়ে মজার ব্যপার হল বিমান বাহিনী থেকে অভিযোগ আসল যে বিমান বাহিনীর অফিসারদের খাবার নাকি ছেলে পেলেরা খেয়ে ফেলছে। তারপর শুরু হল ১৪৪ ধারা,কোনমতে ওখানে যাওয়া যাবেনা। কিন্তু প্রবল ইছ্বাশক্তি কি বাঁধা মানে?যেতাম এবং খেতাম বাজি ধরে। মইন একবার ৭ প্লেট খেয়েছিল।
খেয়ে আর বের হতে পারছিল না। না শরীর খারাপের কারনে নয়,বিল না দিতে পারার কারনে।
শাহীন কলজে সবচেয়ে মজার ব্যপার হল বেতন দেয়া। আমাদেরকে মাসের ১০-২০ তারিখের মধ্যে বেতন দিতে হত ব্যংকে লাইন ধরে,আর ২০-২৫ তারিখে দিতে হত জরিমানাসহ। আমরা এই ১৫ দিন প্রথম ক্লাশ শেষে বেতন দিতে যেতাম এবং ঠিক ছুটি হওয়ার একটু আগে আসতাম।
এই সময়ে আমাদের প্রধান কাজ ছিল বিভিন্ন শাখার সাথে ক্রিকেট ম্যচ খেলা,সিগারেট খাওয়া আর টাংকি মারা। মেয়েরা ও কম চোর ছিলনা। উল্লেখ্যযে ব্যংক আমাদের কলেজ থেকে হেঁটে যেতে ১০ মিনিট সময় লাগত।
মশিউর আমাদের উদ্দেশ্য প্রায় হাদিস দিত। সে হাদিস গুলো বাংলা অনুবাদ করলে যা দাড়াত তা এই রকম “বাসে যদি একদল ছাত্র উঠে তবে তার মধ্যে যে সবচেয়ে চিকন সে বাদে বাকি সবাই বাসের ভাড়া দিবে(মশিউর ছিল চিকন)।
’’ “সবাই মিলে যদি এক সাথে খেতে বসে তবে যার জামায় সবচেয়ে পরিস্কার সে বিল দিবে(মশিউরের জামা ছিল স্বাভাবিক ভাবেই ময়লা)।
এই রকম হাজার মজায় কেটে গিয়েছিল আমাদের। সব ঘটনা এক সাথে লিখা আসলেই সম্বভ নয়। সব নিয়মকে ভাঙ্গার পর ও আমরা কিন্তু রেজাল্ট খারাপ করিনি। হয়ত আহামরি কিছু করিনি।
তবে যেটাই করেছি সব কলেজের জন্য।
বিঃদ্রঃ এই লিখায় শিক্ষনীয় কিছু নাই। শিখতে চাইলে ধ্বংশ নিশ্চিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।