বর্তমান সময়ে সর্বাধিক আলোচিত ও সমালোচিত বিষয় হচ্ছে ‘ইভটিজিং’ বা ‘যৌন নিপীড়ন’। তথা-মেয়েদেরকে উত্যক্ত করা বা অশ্লীল বাক্য বলা। বর্তমানে যৌন নিপীন মহামারী আকার ধারণ করেছে। যাদের মধ্যে পশুপ্রবৃত্তি প্রবল, তারাই মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। এই উত্যক্তকরণ বা যৌন ‘নিপীড়ন’ একদিনে সৃষ্টি হয়নি।
সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা না করে অপসংস্কৃতির বেড়াজালে আবদ্ধ হওয়ার কারনেই আমাদের সমাজে এই সর্বনাশা অনাচার দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন, নাটক ও চলচ্চিত্রে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির চেয়ে অপসংস্তৃতিই প্রাধান্য পাচ্ছে। এই দ্বারা মানুষের নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় হচ্ছে। এর দ্বারা সৃষ্টি হচ্ছে ‘যৌন নিপীড়ন’ সহ পারিবারিক ও সামাজিক নানা সমস্যা। তাছাড়া আমাদের মাঝ থেকে আজ নৈতিক শিক্ষা হারিয়ে গেছে।
অনেক আগে ছোট বেলায় বাচ্চাদেরকে পারিবারিকভাবে নৈতিক শিক্ষা দেয়া হতো। কিন্তু এখন আর সেসব শিক্ষা পারিবারিকভাবেও দেয়া হচ্ছে না। এই নৈতিক শিক্ষার অভাবেই সামাজিক অনাচার বাড়ছে। সামাজিক অনাচারের মধ্যে ‘যৌন নিপীড়ন’ অন্যতম।
মেয়েদেরকে উত্যক্তাকারী বখাটেরা আমাদের সমাজেরই ছেলে।
তারা আমার পরিবারেরই সন্তান। আমাদের কারো না কারো ভাই বা ছেলে। সেজন্য তাদের ওই পশুপ্রবৃত্তির পথ থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদেরই। এ কাজে সমাজের সকলের ভূমিকা রাখতে হবে। বখাটের সংখ্যা কিন্তু ততো বেশী নয়।
সেজন্য তাদের প্রতিরোধ করাটা তেমন কঠিন নয়। সমাজের কর্তাব্যক্তিরা একটু সোচ্চার হলেই যৌন নিপীড়ন-এর মতো সামাজিক অপরাধ দমন করা সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে ভূক্তভোগীদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। তারা নীরবে সহ্য না করে প্রতিবাদী হলে, তাদের পাশেই তখন অনেক মানুষকে পাওয়া যাবে। সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে সেসব বখাটে আর টিকে থাকবে পারবে না।
কিন্ত দুঃখজনক যে, ‘যৌন নিপীড়ন’- এর শিকার হয়ে অনেক মেয়ে আত্মহননের মতো পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু না, আত্মহত্যার পথে না গিয়ে প্রতিবাদী হতে হবে। বখাটে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। অতিভীরু হয়ে বা অতি আত্মসম্মান দেখিয়ে ওসব বখাটের প্রতিরোধ না করলে, এই অপরাধ আরো বাড়তে থাকবে।
মেয়েদের উত্যাক্ত করার পেছনে বখাটে ছেলেরা যেমন দায়ী, আমার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, মেয়েরা ও কম দায়ী নয়।
মেয়েদের অশালীন ও রুচিহীন পোশাক এবং আপত্তিকর চালচলনেও অনেক ক্ষেত্রে উত্যক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। সেজন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই সংবেদনশীল হতে হবে। আর একটি নিদিষ্ট সময়ের আগে মেয়েদের জন্য মোবাইল ব্যবহার করাটা কতটুকু উচিত বা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে, আজ তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ একথাই বলতে হয় যে, ইভটিজিং বা ‘যৌন নিপীড়ন’ অবসানের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন অপসংস্কৃতি রোধ করা। ‘যৌন নিপীড়ন’ প্রতিরোধ করতে অশ্লীল চলচ্চিত্র, অশালীন পোশাক, আপত্তিকর চালচলন ইত্যাদি এবং সর্বপরি বেপর্দেগী সমাজ থেকে দূর করতে হবে।
সেই সাথে ছেলে/মেয়েদেকে প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। তাহলেই ইভটিজিং বা ‘যৌন নিপীড়ন’ নির্মূল হবে বলে আমি মনে করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।