আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাপানের দুর্যোগ ও আমাদের আহাজারি!

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

টিভিতে দেখার আগে প্রথমে খবরটা জানলাম খোদ জাপান থেকেই- ছোট ভাই ফোন করে বলল, এইমাত্র জাপানে ভয়ঙ্কর ভুমিকম্প হয়ে গেল!কাপুনি কমে গেলেও এখনো থেকে থেকে ঝাকুনি হচ্ছে। টেলিফোনে এপাশ থেকে তার কন্ঠের আতঙ্কিত স্বর ভালভাবেই টের পাচ্ছিলাম। তার কাছে ব্যাপারটা মহা প্রলয়ের সাথে তুলনীয়। সে কাজ করছিল কাঠ আর করগেটের ছাউনি দেয়া একটা ছোট ঘরে। শব্দ ঝাকুনীতে প্রথমে ভেবেছিল টর্নডো – কিন্তু মুহুর্তেই ভুল ভাঙল তার সহকর্মীদের চিৎকারে!কোনমতে হামাগুড়ি দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে পড়’ আরো বিপদে।

সমগ্র পৃথিবী যেন ভয়াবহ ভাবে দুলছে- আর কি কানফাটানো শব্দ। রাস্তাগুলোকে মনে হচ্ছিল ঝঞ্জা বিক্ষুদ্ধ সুমুদ্র বক্ষ-যেন ঢেউয়ের মত দুলছে। কয়েক মুহুর্ত কিংকর্তব্য বিমুঢ় সে- কোথায় যাবে?বড় বড় দালান কোঠা আর পোল গুলো যেন হুড়মুড় করে ভেঙ্গে তার ঘাড়ের উপড় পড়ছে। এটা ওটা ধরে কোনমতে হোচট খেতে খেতে সে অবশেষে পাশের এক সমাধিক্ষেত্রে গিয়ে সে আশ্রয় নিয়েছে। আর বড় ভায়ের কি খবর? তার তিন তিনটে ছেলে মেয়ে আর জাপানীজ বউ নিয়ে সেখানে সংসার! টেনশন বেড়ে গেল বহুগুন।

সি এন এন আর বিবিসিতে ততক্ষনে সরাসরি দেখাচ্ছে এইমাত্র ঘটে যাওয়া ৮.৯ মাত্রার ভুমিক্ম্পের পরে সুনামীর ধেয়ে আসার চিত্র। অবশেষে বড় ভাই ফোন করল। সে বসে ছিল তার গ্রোসারি সপে। ভুমিক্ম শুরু হওয়ার পরেই দৌড়ে দোকানের বাইরে বেড়িয়ে আসতেই, ছোট মেয়ে আট বছরের সেইকা’র ফোন। কান্না জড়িত কন্ঠে চিৎকার করে বলছে সে ‘ বাবা আমাকে বাচাও!ভাবি তখন হিরোশিমায় –তার মৃত নানীর অন্তেস্টিক্রিয়া শেষে ট্রনে ফিরছিল টোকিওতে।

ভাই ভেবেছিল তার তিন ছেলে মেয়েই স্কুলে –ছোট মেয়ে যে অসুস্থতার জন্য যায়নি সেটা সে জানেনা। ভীষন ভাবে ঘাবড়ে গেল সে! গ্রোসারী থেকে বাড়ির দুরুত্ব মাত্র শ’খানেক মিটার। এইটুক পথ যেতেই সে গলদঘর্ম। বাড়ির সিড়ির উপড় ছড়িয়ে ছিটে আছে ভাঙ্গা ফ্লাওয়ার ভাস ওয়াল পেইন্টিংস আর রাজ্যের হাবিজাবি। সেগুলো সরিয়ে দোতালায় ফ্লাটের দরজা খুলে বিধ্বস্ত ঘরের এককোনে টেবিলের তলায় খুজে পেল তার মেয়েকে।

ভুমিকম্পের ভয়াবহতার রেশ তখনো কাটেনি-চিৎকার করে কাদছিল সে! ভুমিকম্প প্রবন দেশ জাপান। বছরে কয়েক হাজার ছোট আর মাঝারি মাত্রার ভুমিকম্প হয়। ওদের এটা গা সওয়া হয়ে গেছে। ছোট বেলা থেকেই স্কুলে ট্রেনিং দেয়া হয় ভুমিকম্পের আগে পরে করনীয় কি! তবে এমন বড় মাত্রার ভুমিকম্প দু’য়েকশ বছরে একবার হয়-আমার ভাতিজি শুধু কেন ওর মা নানাও এমন কাপুনি দেখেনি কখনও। তারপরে বেচারি বাড়িতে একা ছিল- ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক! তবুও কি মানসিক দৃঢ়তা ওদের- মিনিট দশেকের মধ্যেই ধাত্বস্ত হয়েই সাইকেল নিয়ে ছুটল স্কুলে তার বড় বোন আর ছোট ভাইয়ের খবর নিতে!মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই তখন- সব পাতাল রেল ট্রেন এরোপ্লেন বন্ধ হয়ে গেছে! কোথায় আছে ভাবি এই দুঃচিন্তায় ভাই অস্থির।

এদিকে আমরা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যানে সরাসরি দেখছি ভয়াবহ দুযোর্গের কবলে পড়েছে জাপান। একুশ ঘন্টায় ছোটবড় আশিটার উপর ভুমিকম্প হয়ে গেল। সুমুদ্র বক্ষ থেকে সুনামী ভয়ঙ্কর আক্রোসে ধেয়ে এসে কয়েকটা শহর দুমড়ে মুচড়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তার মধ্যেই তেল রিফাইনারীতে আগুন-দেখলাম বিশ্বের তৃতিয় বৃহত্তম অর্থনীতি আর আধুনিক বিজ্ঞানে চরম উৎকর্ষের দেশ জাপনের অসহায়ত্ব। তাদের মুখপাত্র বলে দিল এ আগুন নেভানো তাদের কর্ম না।

আর সবশেষে পারমানবিক চুল্লিতে একের পর এক বিস্ফোরন আর ছড়িয়ে পরা তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রনের ব্যার্থতা। জাপানীজ প্রধান মন্ত্রী ঘোষনা করলেন জরুরী অবস্থার আর সেই সাথে বললেন দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধর পর নাকি তারা এমন দুর্দশার সম্মুখিন হননি। ওদিকে চরম আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন জাপানীজরা ক্ষেপে গেল তার এই অসহায়ত্বে- এটা আমরা কি জানি?পরে অবশ্য ওদের রাজা কিছুটা ব্যালেন্স করেছেন। এদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একদিন বাদেই ওদের রাস্ট্রদুতকে ডেকে সমবেদনা জানিয়ে অন দ্য রেকর্ড বললেন, যে কোন সাহায্যের জন্য আমরা প্রস্তুত। আর অফ দ্য রেকর্ড চুপি চুপি জিজ্ঞেস করেছিলেন হয়ত(হয়ত কেন নিশ্চিত,আমাদের দান আর ভিক্ষের টাকা পয়সা পাবতো? জাপানীজ রাস্ট্রদুত মলিন হাসি দিয়ে বললেন,ভিক্ষুকের সিরিয়ালে আপনাদের নাম এখনো পয়লা সারিতেই আছে।

প্রধানমন্ত্রী আর কেবিনেটের মন্ত্রীরা যেন ধড়ে প্রান ফিরেপেলেন!কোন ধরেনের সাহায্য করবেন খোলসা করে এইটা উনারা বলেননা। জানলে ভাল হত এই নিয়ে দুয়েক কলম আলোচনা করা যেত। তেনারা জানেন অবশ্য জাপানীজরা আর যাই হোক বাংলাদেশের কাছে সাহায্য চাইবে না-অতওব কথার কথা বলতে দোষ কি। পদ্মা সেতু নিয়ে মন্ত্রী আমলা আর কিছু ব্যাবসায়ীরা ভীষন দুঃচিন্তা গ্রস্থ। তাদের খাবারে রুচি নাই।

আহারে কত হাজার কোটি টাকা লুটপাটের একটা নীল নক্সা করেছিল-কিন্তু শালার এত হতচ্ছাড়া ভুমিকম্প আর সুনামী সব গুবলেট করে দিল! এক রাস্ট্রদুতের কথায় কি আর শান্তি আসে-ওদিকে জাইকার কর্মকর্তারাও শান্তিতে নেই। কতিপয় প্রভাবশালীদের চামচা সদৃশ্য কিছু সাংবাদিক এবার গিয়ে ধরল তাদের; আমরা আপামর বাংলাদেমীরা আপনাদের কষ্ট দেখে কাদতে কাদতে চউক্ষের পানি শেষ করে ফেলছি-আর কাদতে পারছি নারে ভাই। এইবার আসল কথা বলেন,ওই যে কি পয়সা কড়ি দেয়ার কথা বলেছিলেন, সেইগুলা কি সময় মত পাব? কি বেহায়া জাতি আমরা। ছিঃ ঘেন্না করে ! ভাবি - আর কত নীচে নামব আমরা। তেজস্ক্রিয়তার দোহাই দিয়ে টোকিওতে অবস্থিত বাংলাদেশ এ্যাম্বাসী তাড়াহুড়ো করে সরিয়ে নেয়ার তাগিদ দেখে কিন্তু লেখার ইচ্ছে ছিল- কিন্তু গতকাল প্রথম আলোয় এই নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকায় হওয়ায় আর কিছু লিখে যন্ত্রনা বাড়াতে চাচ্ছিনা।

ইস ওদের মধুচন্দ্রিমায় তিনি একটু হুল ফোটালেন দেখে এই নিয়ে আফসুস হচ্ছে! শুধু এটকু বলছি জাপানে কামলা গিরি করতে গিয়ে নব্য ধনী যৌবন ধরে রাখতে গিয়ে মেকাপ করা কিছু বাঙ্গালীর যোগ সাজসে জ্বী হুজুর করা আমাদের অতি শ্রদ্ধাভাজন রাস্ট্রদুত এই ফাকে কোটি কামানোর ধান্দা করতে গিয়ে আমাদের পরম বন্ধু(দ্বীমত থাকতে পারে) রাষ্ট্র জাপানের সাথে চরম বৈরী সম্পর্কের সুচনা করতে যাচ্ছে এই কথা এইসব মূর্খ মন্ত্রীদের মাথায় একবারও ঢুকলনা এই ভেবে আমি তীব্র বেদনা আর হতাশায় নুয়ে পড়ছি। এইখানেও কি ভাগের ব্যাপার স্যাপার আছে? সবাই যখন জাপানের ঘটনায় নিজেদের আখের গোছাতে ব্যাস্ত তখন আমাদের কর্পোরেট বেনিয়া ব্যাবসায়ীরা বসে থাকবে কেন? এইদেশের মানুষ চরম পরিবেশ সচেতন- সেইসাথে সেইসাথে শরির সচেতনও বটে! এর দুয়েকটা উদাহরনতো হাতের কাছেই আছে; মেলামাইনের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও আমাদের মানসপটে জীবন্ত। আমরা ফরমালিনআর কার্বরেট দেয়া ফল দুধ মাছ খাইনা। কীটনাশক দেয়া সব্জি খাইনা । আর ভেজাল আরেব্বা ওইটা আবার কি? এমন শব্দতো বাপের জন্মে শুনি নাই! ঢাকার এত বেশী নির্মল আর সাস্থ্যবান্ধব যে পৃথিবীর তাবৎ অসুস্থ লোকেরা সাস্থ্য উদ্ধারের জন্য এইখানে আসার জন্য তড়পায়।

আর তাদের দিকে ধেয়ে আসছে কিনা তেজস্ক্রিয়তা। ভাবুন কি ভয়ঙ্করতম পরিস্থিতি! মার গুলি ;মিথ্যেবাদী বিবিসির নামে মিথ্যাচার করে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ ;ফুকুসিমায় নিউক্লিয়ার প্লান্টে লিক করার দরুন তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে মাত্রারিক্ত ভাবে। এশিয়ান দেশ গুলোর দ্রুত ব্যাবস্থা নিতে হবে। যদি বৃষ্টি আসে তখুনি ঢুকে পড়ুল গর্তের ভিতর। গুল্লি মারুন শালার কার্জ কর্মে –কবেই বা কাজকর্ম করেছেন আপনারা,রেডিয়েশন থেকে বাচলে তবে না কাজ।

গর্তের ফুটোফাটা বন্ধে করে দিবেন। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মরলে সমস্যা নেই- তবুওতো রেডিয়েশন থেকে বাচবেন। হাতের কাছে বোরকা না পেলে নেকার দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন। …থাইরয়েডের মানে বুঝে গেলাম আমরা-কিরে বাবা থাইরয়েডে এ্যাটাক করবে নাকি! ভয়াবহ, ভয়াবহ চরম ভয়াবহ অবস্থা। বেটাডিন’এর এ্যাড হয়ে গেল!আর কয়েক ঘন্টায় কয়েক কোটি ম্যাসেজ।

জাপান প্রবাসী ভাইতো এসব শুনে হাসতে হাসতে মরে! ভাবি নাকি নিয়মিত অফিস করছে-ভিতরে কোন চাঞ্চল্য নেই, টিভি দেখে সময় নষ্ট করতে রাজি নয় সে। বাচ্চারাও নাকি স্কুলে যাচ্ছে সময়মত। তিনিও সময় করে বসছেন তার দোকানে। লাভ হল কার লস হল কার – এই হিসেব করে আর কি হবে। শুধু ভাবছি বিধাতা আমাদেরকে কেন এত লোভী করলে? কেন আত্মমর্যাদাহীন ভিখেরী করে পাঠালে দুনিয়াতে? তবুও পাঠালে যখন - মানুষ করে পাঠালে কি ক্ষতি হত?


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।