সত্য প্রকাশে সংকোচহীন
সুন্দরবনকে রক্ষা করতে পর্যাপ্ত লোকবল ও ঝুঁকি ভাতার প্রয়োজন
রোমান শেখ : বিশ্ব ঐতিহ্য, বৃহত্তর প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ‘সুন্দরবন’ আর এ বন সংরক্ষনের জন্য যে সংখ্যক বন প্রহরী রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। প্রতি ২৮ বর্গ কিঃমিঃ বন পাহারা দিতে হয় একজন বন প্রহরীকে। যা একজন বন প্রহরীর পক্ষে মোটেও সম্ভব নয়।
বিশাল সুন্দরবনের ২৪৩০ বর্গ কিঃমিঃ পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন। সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে সুন্দরবনে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না।
বন সংরক্ষক মোঃ আকবর হোসেন (খুলনা) বলেন, সুন্দরবনে বনদস্যুদের উৎপাত থেকে বনজীবীদের রক্ষা করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। গোলপাতা ও গরান কাঠের মওসুমে সাধারণত সুন্দরবনে বনদস্যুদের উৎপাত বৃদ্ধি পায়। তাদের এ তৎপরতা দমন বন বিভাগের কর্মীদের একার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কারণে প্রতি মওসুমেই যৌথ বাহিনীর সমম্বয়ে অভিযান পরিচালিত হয়।
গহীন সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মৎস্য শিকার চলছে অবাধে।
কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন সংলগ্ন ঢাংমারী, ভোজনখালী, বাণীশান্তা ও খেজুরিয়া এলাকার দুর্বৃত্ত চক্র ভাত চিড়া ও মুড়িসহ মাছের অন্যান্য খাবারের সাথে কীটনাশক মিশিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল ও নদীতে ছিটিয়ে দিয়ে মাছ শিকার করা অব্যাহত রেখেছে। কম পরিশ্রমে অধিক মাছ আহরণে বিক্রয় নিষিদ্ধ রিপকুইড-সি, পেসকিম-ইসি, রোটেনন, ডেনিসথাউদিন ও হিলডন ব্যবহার করা হচ্ছে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশাল সুন্দরবনের ২৪৩০ বর্গ কিঃমিঃ পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন। এই ২৪৩০ কিঃমিঃ মধ্যে বাগেরহাট জেলার শরণখোলায় ১৪৫৫ বর্গ কিঃমিঃ ,মংলায় ৮০৭ বর্গ কিঃমিঃ , মোড়েলগঞ্জে ৩০ বর্গ কিঃমিঃ ও খুলনা জেলার দাকোপে ১৩৬ বর্গ কিঃমিঃ বন রয়েছে।
দুই জেলার চার উপজেলায় শরণখোলা ও চাদপাই দুটি রেঞ্জে বিভক্ত করা হয়েছে । দুটি রেঞ্জে বন প্রহরী রয়েছে ৮৬ জন। ৮৬ জনের মধ্যে তিন জন অনুপস্থিত । তবে পূর্ব বন বিভাগের জন্য প্রহরীদের নির্ধারিত পদ রয়েছে ৮৮ টি । এর মধ্যে দুটি পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ বাগেরহাট থেকে প্রকাশিত সুন্দরবনের ইতিকথা থেকে জানা যায় , সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের জন্য অনুমোদিত জনবলের ৫১৪ টি পদের মধ্যে ৫৬ টি পদ শূন্য। প্রথমশ্রেণীর মঞ্জুরীকৃত ৫ টি পদের মধ্যে ২ টি , ২য় শ্রেণী ১২ টি পদের মধ্যে ৫ টি , ৩য় শ্রেণীর ৯৬ টি পদের মধ্যে ২১ টি ও ৪র্থ শ্রেণীর ৪০১ টি পদের মধ্যে ২৮ টি পদ শূন্য। এছাড়া জনবলের একটি বিরাট অংশ সুন্দরবনের পরিবর্তিত পরিবেশে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নন। ফরেস্ট রেঞ্জার, ডেপুটি রেঞ্জার, ফরেস্টার এবং বন প্রহরীদের একাংশ অন্যত্র বদলীর চেষ্টায় লিপ্ত।
আবার অনেকে চাকুরী ছেড়ে সেচ্ছায় অবসরের মাধ্যমে সুন্দরবন হতে রেহাই পাবার পথ বেছে নিয়েছে।
দীর্ঘদিন নতুন নিয়োগ না থাকায় শূন্যপদ পূরণ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সুন্দরবনে লোকবল ও মনোবল সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সুন্দরবন থেকে অন্যত্র চাকুরিতে চলে যাওয়া এবং চাকুরির প্রতি অনিহার সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন প্রহরী বলেন, পুলিশ, র্যাব ও কোষ্টগার্ড অন্যান্ন প্রশাসনিক দায়িত্বরতরা ঝুঁকিভাতা পেলেও বনরক্ষীরা কোন প্রকার ঝুঁকি ভাতা পায় না। সুন্দরবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেও ঝুকি ভাতা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা না পাওয়া এদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে এবং অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা চালায়।
বন বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বনের মধ্যে চলাচলের একমাত্র মাধ্যমই হচ্ছে জলযান।
বনের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক কাজসহ যাবতীয় বিষয়াদির জন্য বছরে অন্তত ২ কোটি টাকার জ্বালানির দরকার হয়। কিন্তু এ খাতে বছরে বরাদ্দ পাওয়া যায় মাত্র ৭০/৭৫ লাখ
টাকা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনের মত গহীন জঙ্গলে ঝড়-ঝঞ্জা , প্রচন্ড ঢেউ , হিংস্র বন্য প্রাণী আর দস্যুদের আক্রমন ও শিহরন জাগানো আধারের মাঝে হাজার প্রতিকুলতায় বনজ সম্পদ রক্ষায় সার্বক্ষণিক লড়াই করে যাচ্ছে বনরক্ষীরা। সরকারী দায়িত্ব পালনের প্রতি প্রচন্ড নিষ্ঠা, সততা, আর মরণপন দেশ প্রেম ব্যতিত এ ধরনের কর্তব্য পালন কোন ভাবেই সম্ভব নয়। সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে লোকবল বাড়ানো সহ রক্ষীদের জন্য পযাপ্ত নৌযান, ঝুঁকি ভাতা প্রদান ও তাদের বসবাসের উপযোগী ঘর তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।