প্রবাসী
জাপানের পারমানবিক দুর্ঘটনা।
প্রথম ভুমিকম্প তারপর সুনামি আর শেষে পারমানবিক দুর্ঘটনা। বেশ বিপদেই আছে জ়াপান। জাপানের ফুকুশিমা দাইচি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে দুর্ঘটনা ঘটল তা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৭৯ সালের আমেরিকার ৩ মাইল্ দ্বীপের বা ইউক্রেনের চেরনোবিল দুর্ঘটনাকে।
জাপানের বয়েলিং ওয়াটার রিয়াক্টর এর তুলনা করা যায় এক দৈত্যাকৃতির চায়ের কেটলির সাথে।
কেটলিতে পানির মত এখানেও ভিতরকার কয়েল পানিকে বাস্পে পরিনত করে আর তা দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে তৈরী করা হয় বিদ্যুৎ। পানির কাজ হল রিয়াক্টরকে ঠান্ডা রাখা। এই পানি সরবরাহে যদি বিঘ্ন ঘটে তাহলে রিয়াক্টরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়। আর বেশী পরিমান বাস্প তৈরী হয়, বেড়ে যায় বাস্প জমা হওয়ার পাত্রের চাপ। উচ্চ চাপে এক সময় ঘটে বিস্ফোরন।
আর তাপমাত্রা আরো বেড়ে গেলে ভিতরের ধাতব পদার্থ গলে গিয়ে তা জমা হতে পারে নীচের আরো একটা পাত্রে। নিচের এই পাত্রটা খুব ভাল ভাবে বন্ধ করে দেয়া বাইরের জগত থেকে যাতে করে গলিত পদার্থ বেরিয়ে পরিবেশ দুষন না করতে পারে।
পারমানবিক চুল্লীতে রয়েছে অনেক স্তরের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। একটা ফেইল করলে পরের টা এগিয়ে আসে। কিন্তু তারপুর ও দুর্ঘটনা যে ঘটতে পারে ফুকুসীমা দাইচি তার বড় প্রমান।
ভুমিকম্পের ফলে রিয়াক্টর বন্ধ হয়ে যায়, সাথে পানির পাম্প ও। ফলে রিয়াক্টরের ঠান্ডা করার পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাখন ডিজেল জেনারেটর চালু হয় কিন্তু ঘন্টা খানেক পর তা ও বন্ধ হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে বাড়তি নিরপত্তা ব্যাবস্থাও কাজ করে নি। আর পরমানু চুল্লীতে মারাত্মক ব্যাপার হল বিষাক্ত তেজশক্রিয় পদার্থ ভুগরভে বেরিয়ে গিয়ে দীর্ঘস্থায়ী পরিবেশ বিপর্যয়।
আমেরিকার পারমানবিক চুল্লির কোরের গলিত তেজশক্রিয় পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে নি, চেরনোবিলের ভয়াবহ বিস্ফোরন আকাশ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, ফুকুসীমা দাইচি পারমানবিক কেন্দ্রে আংশিক হলেও চুল্লির কোর গলে গিয়েছে কিনা তা এখন ও অস্পস্ট।
এ সম্পর্কে টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানীর বক্তব্য হল কন্ট্রোল রড দিয়ে পারমানবিক চুল্লী নিস্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে,কিন্তু তেজশক্রিয় জ্বালানী থেকে এখন ও তাপ বেরুচ্ছে এবং আংশিক হোলেও চুল্লীর কোর গলেছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। বিস্ফোরনে কংক্রিট দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে, কিন্তু তেজশক্রিয় পদার্থের ছড়িয়ে পড়ার আশংকা নেই কারন ভিতরের “কন্টেনমেন্ট ভেসেল এখন ও অটুট। এমন ই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা
ক্যাবিনেট সচিব ইউকিও এদানো মনে করেন ঠান্ডা করার প্রক্রিয়ার ত্রুটির ফলে হাইড্রোজেন গ্যাস জমা হয়েই এই বিস্ফোরন।
যদি এই “কন্টেন্মেন্ট ভেসেল এ ছিদ্র হয়ে থাকে তাহলে তেজশক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার নিউজ এক সংবাদে বলা হয়েছে যে বয়লারের উচ্চ চাপ কমাতে এবং বিস্ফোরন এড়াতে ইতিমধ্যেই ছিদ্র করা হয়েছে। এর ফলে স্বল্প কালীন গামা রশ্মি বিকিরনকারী তেজশক্রিয় আইসোটোপ যেমন নাইট্রোজেন-১৬ নির্গমন লক্ষ করা যাচ্ছে।
আরো একটা ভাবনার বিষয় হচ্ছে তেজশক্রিয় সিজিয়ামের উপস্থিতি। সিজিয়াম তৈরি হয় চুল্লীর কোরে পারমানবিক বিক্রিয়ার সময়। তাহলে কি বয়লার ভেঙ্গে পড়ছে?
ফুয়েল রড গলে গিয়ে থাকলে বায়মন্ডলে তেজশক্রিয় সিজিয়াম বা আয়োডিন এর উপস্থিতি লক্ষ করা যাবে এমন ই ধারনা করছেন নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অধ্যাপক প্যাডী রিগান।
সব প্রশ্নের উত্তর পেতে হয়ত অনেক দিন লাগবে কিন্তু আশু বিপদের পরিমান বোঝা যাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। জাপানের নিউক্লিয়ার এজেন্সী এবং টেপকো এর উপর নির্ভর্ করছে আশু এবং দীর্ঘকালীন ক্ষয় ক্ষতির হিসেব নিকেশ। পারমানবিক চুল্লীর নিরাপত্তার বিষয় আবার ও ভাবিয়ে তুলছে জাপান এবং পৃথিবীর অনান্য দেশের বিজ্ঞানীদের।
ভুমিকম্প প্রবন এলাকায় পারমানবিক কেন্দ্র স্থাপন নিয়েও প্রস্ন উঠেছে। পৃথিবীর অনেক দেশ ই আজ ঝুকে পড়ছে পারমানবিক শক্তির দিকে বাড়তি জ্বালানি শক্তির চাহিদার কারনে ।
এর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিয়ে আরো সতর্ক হতে ইঙ্গিত দিচ্ছে ফুকুসিমা দাইচি। -বি বি সি অবলম্বনে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।