বাস্তবতাময় প্রকাশ্য
বাংলায় একটা প্রবচন আছে, “পেটের নাম মহাশয়, যাহা সহায় তাহাই সয়”।
আর তাইতো, সবজিতে বিষ, মাছে ফরমালিন, মুড়িতে ইউরিয়া, সবকিছুই অসহায়, হজম করে মহাশয়!
আমি জানিনা, ক্ষমতাশীনদের পেট নিয়ে এমন কোন প্রবাদ আছে কিনা? যে মহাশয়, আরো বড় বিষ্ময়! হজম করে ত্রানের টিন, রিলিফের কম্বল, দুম্বার মাংস। এমন পেট নিয়ে কোন প্রবচন না থাকা সত্যি দূর্ভাগ্যজনক। যা আমাকে করেছে বিষ্মিত ও বন্চিত। তবে এই মুহূর্তে আমি পড়ছিলাম কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা।
যেখানে প্রায় সারা দেশে ক্ষমতাশীন ম্যজিশিয়ানদের দুম্বার মাংস ভ্যানিশের রিপোর্ট এসেছে।
আমি ভাবছিলাম , নীতি ও নৈতিকতার দেউলিয়াত্বে দুই বিঘা জমির মত, দুই টুকরা মাংসের খেলায় ক্ষমতাশীনেরা হয়তো দুস্থদের দুম্বার মাংস খেয়েছেন কিংবা খাননি। কিন্তু এ নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই যে, তারা নিজেদের বিবস্ত্র করে ফেলেছেন এবং সকলকে দেখিয়ে দিয়েছেন কেমন দুস্থ তারা হয়েছেন ইদানিং। এখানে ইদানিং শব্দটা হয়তো দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে । কারন অনেক আগেই রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন “রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি”।
তাই রাজার হস্ত , কাঙ্গালের ধন, ত্রানের টিন, দুম্বার মাংস চুরি করবে এটাই স্বাভাবিক!
কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা কাদের রাজা বলবো, বলছি?
যারা ত্রানের টিন, রিলিফের কম্বল, দুস্থের মাংস, মেরে খান! যাদের রুচি ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়!
দুস্থরা তো কাঙ্গাল সম্পদে, কিন্তু এরাতো কাঙ্গাল মানসিকতায়। তাই এক্ষেত্রে রাজার হস্ত কোন কাঙ্গালের ধন চুরি করেনি! বরং কাঙ্গালেরাই চুরি করেছে কাঙ্গালের ধন!
এখন পাঠক, আপনাদেরকে প্রশ্ন, বড় কাঙ্গাল কে? সম্পদের কাঙ্গাল নাকি মানসিকতার কাঙ্গাল?
আপনারা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পারেন এবং সে সব কাঙ্গালদের চিন্হিত করতে পারেন!
অনেকে হয়তো বলতে পারেন, নিজের খেয়ে মরুর দুম্বা তাড়ানোর দরকার কি? বা এসব কাঙ্গালদের চিন্হিত করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
আমি বলবো, এ প্রয়োজনীয়তা তাৎপর্যময়। এ বছরেই বাংলাদেশে আদমশুমারী হবার কথা রয়েছে। কিন্তু দূঃখজনক হলেও সত্য, আদম বা মানুষ গননার মতো কাঙ্গাল গননা বা কাঙ্গালশুমারী পৃথিবীর কোন দেশেই নেই। আমরা এ কাঙ্গাল গননা করে নজির স্থাপন করতে পারি।
এবং সেইসব চিন্হিত কাঙ্গালদের নিজের টাকায় মশলা কিনে দিতে পারি! কারন যারা গরিবের হক দুম্বার মাংস চুরি করতে পারে, তারা নিজের টাকায় মসলা কিনে সে মাংস রান্না করবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়, তাই আমরা এসব কাঙ্গালদের মশলা কিনে দিয়ে লজ্জা দিতে পারি, এবং তারাও লজ্জা পেয়ে নিজেদের সংশোধন করতে পারে। আর এরপরও যদি তারা নিজেদের সংশোধন না করেন তাহলে বলবো, আমাদের দেশে একসময় ঘোষনা দিয়ে ফকির হবার রেয়াজ ছিলো, ঋনের ভারে জর্জরিত হয়ে উপায়ন্তর না দেখলে যে কেউ ঘোষনা দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করতে পারতো এবং করতো। তেমনি ভাবে দুম্বার মাংস ভ্যানিশ করা ম্যাজিশিয়ানেরা যদি নিজেদের সংশোধন করতে নাই পারেন, তাহলে তারা সমাজে নিজেদের কাঙ্গাল হিসাবে ঘোষনা দিতে পারেন এবং সতিৎকারের কাঙ্গাল হয়ে বৈধভাবেই দুম্বার মাংস খেতে পারেন!!!
পুনশ্চঃ গোপন সুত্রে প্রকাশ, দুম্বার মাংসের অপর্যাপ্ততা নিয়ে এসব কাঙ্গালদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আমি দাতা দেশগুলোর কাছে দাবি জানাচ্ছি, আগামী বছর মাংস নয় যেন আস্ত দুম্বা পাঠানো হয়। যদিও জানি সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য দশ কোটি কম্বলের মতো, ষোলো কোটি মানুষের জন্য বিশ কোটি দুম্বাও যথেষ্ট নয়!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।