আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরুষের শক্তি ও প্রেরণার উৎস নারী



সভ্যতার মূল উপাদান মানুষকে আল্লাহ তায়ালা দুটি প্রজাতি করে সৃষ্টি করেছেন। নারী-পুরুষের যৌথ প্রয়াসে সচল হয়েছে সভ্যতার গতিধারা। সুনিপুণ কারিগর মহান স্রষ্টা তার সৃষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যই এ ধারা চালু করেছেন। সুন্দর পৃথিবী গড়ার ক্ষেত্রে পুরুষের অবদান যেমন বিশাল তেমনি নারীদেরও। নারীদের প্রেরণা না পেলে, তাদের আন্তরিক সহযোগিতা না থাকলে পৃথিবী এত সুন্দর হতো না।

সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে উভয়ের প্রয়াস সমান। উভয়েই কৃতিত্বের দাবিদার। তবে পার্থিব জীবনে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা, মানব চরিত্রের স্বাভাবিক প্রকাশ, সর্বোপরি নারীদের স্বাচ্ছন্দময় জীবন যাপনের সুবিধার্থে নারীদেরকে পুরুষের অধীন বানিয়ে দিয়েছেন। পুরুষকে দিয়েছেন কর্তৃত্ব আর নারীদের দিয়েছেন অধিকার। কর্তৃত্ব ও অধিকারের সুষম চর্চার মাধ্যমে যেন গড়ে ওঠে সুশীল পরিবার ও সমাজব্যবস্থা।

সৃষ্টির সহজাত ধারায় নারী-পুরুষের মধ্যে মর্যাদাগত কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু তারপরও যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী নারীদের বঞ্চিত করেছে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে। তাদের ওপর চালিয়েছে অত্যাচারের খড়গ। ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা। শুধু সামাজিকভাবেই নিগৃহীত হয়নি নারীরা।

বিভিন্ন ধর্মেও নারীদেরকে অবজ্ঞা ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজে ধর্মের আবরণে নারীরা যুগে যুগে লাঞ্ছিত হয়ে আসছিল। নারীরা সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে ইসলামপূর্ব জাহেলী সমাজে। সে সময়ে নারীদের সামান্য মানুষ হিসেবে মূল্য দিতেও কুণ্ঠাবোধ করা হতো। নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার কোনো স্তর বাকি থাকেনি যা সে সময়ে নারীদের সঙ্গে করা হয়নি।

এসব আচরণ নীরবে সহ্য করা ছাড়া নারীদের আর কোনো উপায় ছিল না। ইসলামের আবির্ভাবের পর নারীদের ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় উজ্জ্বল জ্যোতি। প্রকৃতি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম আগমন করে নারীদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ। ইসলাম দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করল, নারীরাও মানুষ। তাদেরও সদাচরণ পাওয়ার অধিকার আছে।

তাদের প্রতি কোনো ধরনের অবজ্ঞা, অবহেলা ও অপমান সহ্য করা হবে না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘তারা (নারীরা) তোমাদের পোশাক ও তোমরা তাদের পোশাক’। যুগে যুগে অধিকারহারা নারীদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দৃপ্ত ঘোষণার মধ্যদিয়ে যাত্রা করে ইসলাম। কোন সমাজে, কোন ধর্মে নারীদেরকে কিভাবে অধিকারহারা করা হয়েছে সেগুলো নির্ণয় করে সে সব ক্ষেত্রে তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ অধিকার ফিরিয়ে দেয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা সকল ক্ষেত্রে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত ইসলাম।

মানব জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র বাদ যায়নি যেখানে নারীদের ব্যাপারে ইসলামের ন্যায়ানুগ ও বিবেচনাপ্রসূত নির্দেশনা অনুপস্থিত। কোরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীদের অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যেমন কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘কিয়ামতের সেই দিনে কন্যা সন্তানদের জিজ্ঞেস করা হবে কেন তাকে হত্যা করা হয়েছিল’। কোরআনে বলা হয়েছে ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ কর’। অন্যত্র বলা হয়েছে ‘নারীদের ওপর যেমনি অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর’।

হাদিসে এসেছে ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’। ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। রাসূল সা. বলেন ‘মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহেশত’। এক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন ‘একবার এক লোক হযরত রাসূলে কারীম সা. এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করল, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজী সা. বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করল তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’।

ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করল তারপর কে? এবার তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করল তারপর কে? এবার তিনি উত্তর দিলেন- ‘তারপর তোমার বাবা’। (বুখারী শরীফ) এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় ইসলামে সন্তানের ওপর বাবার অধিকারের চেয়ে মায়ের অধিকার তিন গুণ বেশি। এভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নারী অধিকার আদায়ে ইসলাম যথেষ্ট সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করেছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণে নারী-পুরুষ পরস্পরে প্রতিযোগী নয় বরং সহযোগী।

ইসলামের বিজয়গাঁথা ও সাফল্যের পেছনে তাদের যৌথ প্রয়াস সমানভাবে কার্যকর। ইসলামী ভাবধারার কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন ‘কোনোকালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি/প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী। ’ নারীরা মানব সভতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাদের ব্যতিরেকে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাতীত। পুরুষদের প্রেরণা ও শক্তির উৎস নারী।

তাই এদের সঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক আচরণ জরুরি। একমাত্র ইসলামেই রয়েছে তাদের প্রকৃত নিরাপত্তা ও শান্তি। সভ্যতার চোখ ধাঁধানো উৎকর্ষের যুগেও নারীদেরকে অপব্যবহার ও তাদের প্রতি অনাচার করা হচ্ছে। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে খ্যাত নারীরা আবারও অশুভ পরিণতির দিকে এগুচ্ছে। তাদেরকে সে পথ থেকে ফিরে আসতে ইসলাম হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

সে ডাকে সারা দিলে নারীরা ইহ ও পারলৌকিক সফলতা লাভে ধন্য হবে। SEE THE LINK ..........G News bd . com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।