আমার "কত অজানা রে" সিরিজের সব গুলো পোষ্ট সংগ্রহে থাকা বই, গুগোল মামা ও বিভিন্ন সাইট থেকে অনুবাদ করা, তবে কোন ভাবেই কপি-পেষ্ট নয়। জানার জন্য পড়ন, ভুল হলে সঠিকটি বলার দায়িত্ব আপনাদের। আনন্দের সাথে পড়ুন। আমার ব্লগ কেচাল মুক্ত।
"Call of Duty" খেলেছে অথচ Sergeant Yakov Pavlov কে চিনে না এমন কেও আছে বলে আমার মনে হয় না।
তারপরেও যাদের মনে হচ্ছে চিনতে পারলাম না তাদের জন্য আজকের এই পোষ্ট।
প্রত্যেকটি যুদ্ধই ভয়ংকর। যুদ্ধের পিছনের কারন যাই-ই হোক না কেন যুদ্ধ মানেই জীবনের অপচয়, যুদ্ধ মানেই জীবনের বেচাকেনা, যুদ্ধ মানেই অস্ত্র ব্যবসা, কিন্তু এর সাথে আসে কিছু স্বাধীনতা নামের ললিপপ, কিছু ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে নোংরামি। কিন্তু তার পরেও যুদ্ধ মানব ইতিহাসের একটি অপরিহার্য অংশ। আমরা না চাইলেও আমাদের প্রতি নিয়ত যুদ্ধ করতে হয়।
মানব ইতিহাসে যুদ্ধের কোন অভাব নেই কিন্তু কোন কোন যুদ্ধ তার অনবদ্য কাহিনীর জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। স্টালিংগ্রাদ যুদ্ধ তেমনই একটা যুদ্ধ। তবে সে কাহিনী অন্য একদিন বলবো। আজ বলবো এই স্টালিংগ্রাদ যুদ্ধেরই একটি খন্ড যুদ্ধের কথা, যা পরিচিত "পেভলভ'স হাউজ দখলের যুদ্ধ" নামে এবং এটি WWII এর একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে ধরা হয়।
এই চার তালা বাড়িটি সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপুর্ন ছিল এই কারনে যে এই বাসা থেকে উত্তর, দক্ষিন ও পশ্চিম দিকের এক মাইল পর্যন্ত দেখা যেত।
সে কারনে এটি ছিল অনেকটা দূর্গের মত। স্টালিংগ্রাদ শহরের সেন্টারে অবস্থিত এই বাড়িটি Volga নদীর বাধের সাথে লম্বালম্বি ভাবে তৈরি হয়েছিল যেখান থেকে "9th January Square"(যার নাম ছিল "Bloody Sunday") উপর লক্ষ রাখা যেত।
১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বার মাসে বাড়িটি জার্মানদের দখলে চলে যায়। সোভিয়েত বাহিনীর 13th Guards Rifle Division কে এই বাড়িটি পুনরূদ্ধার ও দখলে রাখার আদেশ দেওয়া হয়। সে জন্য সার্জেন্ট পেভলভের কমান্ডে ৩০ জন সোভিয়েত সেনা পাঠানো হয়।
সার্জেন্ট পেভলভ ছিল লো-লেভেল নন-কমিশন্ড অফিসার সে ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন কারন তার অফিসাররা হয় মারা গিয়েছিল না হয় যুদ্ধাহত ছিল। সার্জেন্ট পেভলভ বাড়িটি দখল করতে সমর্থ হয়। কিন্তু ৩০ জন সেনার সদস্যের ভিতর মাএ ৪ জন টিকে থাকে।
কয়েকদিন পর সার্জেন্ট পেভলভ তার রসদ ও রিইনফোর্সমেন্ট পায় যাতে ২৫ জন পাদাতিক বাহিনীর সেনা সদস্য ছিল। তারা সাথে করে মেশিনগান, এন্টি-ট্যাংক রাইফেল ও মর্টার এবং সার্জেন্ট পেভলভের জন্য একটি অর্ডার এনেছিল যা "Order No. 227 - "not one step back" হিসাবে পরিচিত।
এই অর্ডার সার্জেন্ট পেভলভকে এতোটাই প্রভাবিত করে যে সে বিল্ডিং এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা করে এবং শেষ বুলেট ও সবাই মরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত যে কোন মুল্যে এই বিল্ডিংটি রক্ষার শপথ নেন।
সে তার ২৯ জন সেনা ও আগে থেকেই ঐ বিল্ডিং এ লুকিয়ে থাকা ১০ জন বেসামরিক লোক নিয়ে তার নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে লেগে যান। তিনি বিল্ডিং এর চারিদিকে চার স্তর বিশিষ্ট কাটাতারের বেড়া ও স্থলমাইন দিয়ে বিল্ডিংটিকে দূর্গে পরিনত করে ফেলে। প্রতয়েকটি জানালায় মেশিনগান বসানো হয়, করিডোর গুলো বায়নেট লাগানো রাইফেল হাতে সৈন্যরা কাভার করে। সে লক্ষ করে চারতালার সাদে একটি মাএ a PTRS-41 anti-tank rifle দিয়ে জার্মানীর ট্যাংক এটাককে দুর্বল করে দেওয়া যায়।
যখনই কোন ট্যাংক বিল্ডিং এর ২৫ মিটারের ভিতর আসতো তখন a-t rifle এর একটি মাএ এক্সপ্লোসিফ বুলেট ট্যাংকের পাতলা টেরেট-রুফ ভেদ করে ট্যাংকটি অকেজো করে দেওয়া যায়। এই ভাবে সার্জেন্ট পেভলভ ব্যাক্তিগতভাবে ডজন খানেক ট্যাংক ধ্বংশ করেছিল।
আভ্যন্তরিন যোগাযোগের সুবিধার জন্য বিল্ডিং এর বেসমেন্টের দেয়াল ছিদ্র করে সুরঙ্গ তৈরি করা হয়। রসদ পত্র আনার জন্য তারা বিল্ডিং থেকে Volga নদীর তীর পর্যন্ত ট্রেন্জ খনন করে। যদিও তাদের সবসময়ই খাদ্য-পানি ও পোশাকের সল্পতা থেকে থাকতো তবুও যা আসতো তা এই সুরঙ্গ দিয়ে আসতো, রাতের আধারে নদী পারি দিয়ে রসদ পৌছাতো তাদের কাছে।
প্রতিদিন কয়েকবার করে জার্মান বাহিনী এটাক করতো। যতবারই আক্রমন হতো ততবারই ডিফেনডাররা তা প্রতিহত করতো। মাঝে মাঝে হাতাহাতি যুদ্ধও করতে হতো। এমনও সময় আসতো যে এই ঘর হলো জার্মানদের দখলে আর পাশের ঘর সোভিয়েতদের দখলে। তারা জার্মানী সেনাদের মৃতদেহ গুলো সংগ্রহ করতো পরবর্তী আক্রমনের সময় কাভার হিসাবে ব্যবহারের জন্য।
তারা ভয় তাড়ানোর জন্য গান গাইতো। মাঝে মাঝে সার্জেন্ট পেভলভ কৌতুক করে বলতো, "more Germans died trying to capture Pavlov's House than died capturing Paris"। জার্মানদের ম্যাপে এই বিল্ডিংটি "দূর্গ" হিসাবে চিন্হিত ছিল।
সার্জেন্ট পেভলভ এই বাড়িটি ২৭শে সেপ্টেম্বার থেকে ২৫ নভেম্বার পর্যন্ত দখলে রাখে। তার অসামান্য সাহসীকতার জন্য তাকে Hero of the Soviet Union সম্মানে ভুষিত করা হয়।
এবং এই বিল্ডিংটির নাম "Pavlov's House" রাখা হয়। যুদ্ধের পর বিল্ডিংটি পুনর্নির্মান করা হয় এবং এখন পর্যন্ত এটি এপার্টমেন্ট ভবন হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
পুরান বিল্ডিংএর সংগ্রহীত ইট দিয়ে এখানে একটি মনুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে যাতে লেখা আছে,"In this building fused together heroic feats of warfare and of labor. We will defend / rebuild you, dear Stalingrad!"
আমার আগের পোষ্টটা মনে হয় সবাই মিস করেছেন।
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-আইও জিমা দ্বীপের যুদ্ধ (কত অজানা রে পার্ট-২৬)
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমি দেশি বীর সন্তানদের কথা কেন লিখছি না। আমি লিখবো জাতীয় বীরদের নিয়ে।
এখন বিদেশীদের কাহিনী দেয়ার কারন টা হলো তারা যদি এভাবে তাদের মা, মাটি ও মাতৃভূমিকে ভালবাসতে পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না ?? এখনো যদি চেতনা জাগরত না হয় তাহলে কবে হবে ??? স্বাধীনতার ৫০ বছর আর মাএ কয়েক বছর পর। কবে আমাদের হুস আসবে??? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।