বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !
১.
'এতোজন ব্যাটসম্যান এতো বাজেভাবে একদিনে আউট হলেন, কোন মনস্তাত্বিক সমস্যা ?' সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের কান্ডারীর হাস্যমুখী সপ্রতিভ জবাব,- 'ইচ্ছে করে !'
'লাঞ্চে নাকি সুস্বাদু খাবার ছিলো, তা খাবার জন্যই সবাই জলদি...' রসে টইটম্বুর সাকিব মিয়া রসবোধের পরিচয় দিতে গেলেও, সেইখানে আমরা রসালো কিছুই পাইনা, আমরা লজ্জা পাই ! ১৬ কোটি মানুষের আবেগ, প্রেম আর চেতনা নিয়া উপহাস করা সাকিবের বালখিল্যতায় আমরা লজ্জা পাই !
কৃতিত্ব উপভোগ করবার ধৈর্য ঈশ্বর সবাইরে দেন না । সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে আত্মতৃপ্তি কখনও যায়না । পরস্পরের শত্রু তারা । আত্মতৃপ্তিতে ভোগা, ধরাকে সরা জ্ঞান করা মানে , নিজের ফুরিয়ে যাবার জানান দেয়া । পৃথিবীর সেরা সৃষ্টিশীলরা তাই, সেরা বিনয়ীও ! প্রায় দু'বছর ধরে বিশ্বের এক নাম্বার ক্রিকেটার সাকিব যখন কলাম লেখেন, আর আমাদের ক্রিকেটে সাবেক ক্রিকেটারদের অবদান কি , এরকম অশ্রদ্ধাপূর্ণ প্রশ্নের উত্থাপন এর দুঃসাহস করেন, ওই ঔদ্ধত্য তখন সাকিবের পতনের কালঘন্টা হয়েই আমাদের ব্যথাতুর করে !
প্রিয় সাকিব, ভালো ক্রিকেটার হবার সঙ্গে সঙ্গে ভালো মানুষ হওয়াটাও খুবই জরুরি ! ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব কোন ছেলে খেলা না ! এদেশের ক্রিকেটকে আপনি অনেক দিয়েছেন, নিশ্চয় দিয়েছেন ! এই দেশ এবং ক্রিকেটও আপনাকে অনেক দিয়েছে । ক্রিকেটার না হলে আপনি সাকিবকে কেউ চিনতো না ! ক্রিকেট যদি একবার আপনাকে ত্যাগ করে তো, কেউ আপনাকে পুছবেওনা ! খেয়াল করে, আপনি ক্রিকেটকে ত্যাগ করতে হবেনা, ক্রিকেট যদি আপনাকে ত্যাগ করে.. !
২.
বাংলার প্রতিনিধি সুবিধাপ্রাপ্ত সাকিব যখন মানুষের আবেগকে পুঁজি করে তামাশা করছেন, ঠিক সেই সময়ে, লিবিয়াতে আটকা পড়া অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশীর ক'জন প্রাণ হারিয়েছেন নানাভাবে । খাদ্য সঙ্কটও এর মাঝে অন্যতম । প্রবাসীরা এই দেশ মায়েরই সন্তান । কিন্তু সর্বত্র তাঁরা আচরণটা পেয়ে থাকেন, বাংলার বহুল আলোচিত চরিত্র 'সৎ মায়ের সন্তানের মতো !' নিজে প্রবাসী হিসাবে, শেয়াল-কুকুরের মতে পথে প্রান্তে মরে থাকা সেইসব প্রবাসী ভাইদের জন্য আমি অশ্রুপাত করবোনা, আমি কাঁদবোনা ! শুধু বলবো, মরো বাঙালী ; মরো ! কাল আমিও মরে পরে থাকবো হয়তো কোথাও ! কার অতো সময় খবর নেবার !
৩.
সাকিবদের বাজে ব্যাটিং এ ক্ষুদ্ধ কিছু মানুষ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাসে পাথর ছুঁড়ে ক্ষোভ মেটাতে চেয়েছেন, আর লজ্জার অতলে ডুবিয়েছেন দেশকে । লজ্জার ভার লাঘব করবার একটা প্রয়াস নিয়েছিলেন কিছু মানুষ ! শেরাটনের সামনে তাঁরা ফুল হাতে দাঁড়িয়েছিলেন ! আরো ছিলো, - WE ARE SORRY লেখা প্লা কার্ড ! ওয়েষ্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড় ড্যারেন সামী ফুল গ্রহণ করেছেন, ছবি তুলেছেন নিজেদের ক্যামেরায় !
আমাদের নত মাথাকে উঁচু করে তুলবার এই প্রয়াসের জন্য দাঁড়িয়ে সম্মান জানাই, ফটোগ্রাফার ফয়সল মাসুম, তাবরেজ মাহমুদের মতো মানুষদের !
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।