'স্বজনপ্রীতি'র অক্টোপাসে ঘেরা গরিবের ব্যাংক হিসেবে খ্যাত 'গ্রামীণ ব্যাংক'। এই ব্যাংকের বদৌলতে লালে লাল হয়েছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের আত্মীয়স্বজন ও অনুগতরা। একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে তারা এখন ব্যাংকের একাধিক উচ্চ পদে আসীন। অভিযোগ উঠেছে, এক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়েনি পদোন্নতির নিয়মনীতির। আত্মীয়দের কারণে বঞ্চিত হয়েছেন যোগ্যরা।
কথা মতো কাজ না করে হয়েছেন বিরাগভাজন। অনেককে হারাতে হয়েছে চাকরি। এসব তথ্য ওঠে এসেছে গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্ভাগা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। চাকরি যাওয়ার পরেও তাদের কাছে আতঙ্কের নাম ইউনূস। অনেকের মন্তব্য, 'পারেন না' এমন কিছুই ড. ইউনূসের জীবন ডায়েরিতে নেই।
মুহূর্তের মধ্যে চুকিয়ে দিতে পারেন বেঁচে থাকার সব 'স্বপ্ন-সাধ'। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামীণ ব্যাংকের একাধিক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংকের যারা চাকরি করেন তাদের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা মতো প্রত্যেকটি কাজকর্ম করতে হয়। কেউ যদি তার কথামতো কাজ না করে তখন তাকে করা হয় পদবঞ্চিত। পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাধ্যতামূলক অবসরে। তার কথামতো কাজ না করায় সাবেক দুই ডিএমডি খালেদ শামস, দিপাল বড়ুয়া, সাবেক জিএম মোজাম্মেল হকসহ প্রায় আট হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল অবসরে।
তাদের মধ্যে সাবেক উপমহাপরিচালক (ডিএমডি) দিপাল বড়ুয়া গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জড়িত ছিলেন। তার রয়েছে মাঠপর্যায় থেকে প্রশাসনিক পর্যায় পর্যন্ত কাজ করার অভিজ্ঞতা। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরাগভাজন হওয়ায় তাকে দেওয়া হয় বাধ্যতামূলক অবসর। একইভাবে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে খ্যাতি থাকলেও সাবেক ডিএমডি খালেদ শামস ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোজাম্মেল হককে দেওয়া হয় বাধ্যতামূলক অবসর। অথচ ব্যাংকের বর্তমান ডিএমডি নুর জাহান এবং তথ্য ও গণমাধ্যম সমন্বয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জান্নাত-ই-কাওনাইন যেন না চাইতেই পেয়েছেন সব কিছু।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান ডিএমডি নুর জাহান এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হলেও তার নেই কোনো প্রতিষ্ঠান চালানোর মতো অভিজ্ঞতা। তিনি ব্যাংকের শুরুর দিকে জোবরা এলাকায় ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওইখানে কাজ করার একপর্যায়ে তাকে সরাসরি গ্রামীণ ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর তিনি ব্যাংকের জিএম এবং বর্তমানে ডিএমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ গ্রামীণ ব্যাংকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রথমে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, প্রোগ্রাম অফিসার, এরিয়া ম্যানেজার, জোনাল অডিট অফিসার, জোনাল ম্যানেজার, হেড অব ডিপার্টমেন্ট এভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
কিন্তু নুর জাহানের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। তাকে সরাসরি ফিল্ড অফিসার থেকে ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ করা হয়।
একইভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তথ্য ও গণমাধ্যম সমন্বয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জান্নাত-ই-কাওনাইনকে। তাকেও জোবরা গ্রামের ফিল্ড অফিসার থেকে সরাসরি উচ্চপদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা জানান, গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ আদায়ের যে পরিমাণ দেখাচ্ছে তা বাস্তবের চেয়ে ভিন্ন।
তাদের ঋণ আদায়ের পরিমাণ ৯৮ শতাংশ দেখালেও বাস্তবে তা ৬০ শতাংশের বেশি হবে না। গ্রামীণ ব্যাংক তাদের ৮৩ লাখ গ্রাহকের কথা বলছে বাস্তবে তার চেয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য অনেক কম। টাকা আদায়ের পরিমাণ বেশি দেখাতে এবং গ্রাহক বেশি দেখাতে ভুয়া ঋণ গ্রহীতা দেখানো হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।