আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেসার্স পিচ্চিনামা (ছবি ব্লগ)



পিচ্চিগুলা যেন কেমন, ছোট ছোট উলের বলের মত। খামাখা ট্যা ট্যা করে কাঁদছে, এটা সেটার জন্য বায়না ধরছে। সব কিছুর মধ্যে বাম হাত ঢুকাচ্ছে। মায়েদের, মেয়েদের সবার আকর্ষন কেড়ে নিয়ে আমাদেরকে কেমন জেনো অপাংতেয় করে দিচ্ছে । এরকম অসংখ্য দুষ্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার চারপাশে।

দুষ্টগুলাকে ছাড়া কেন যেন ভালোও লাগে না। দেখেন না কিছু নমুনা। ইনার নাম আজমান। ইনার বোনের পরে যে ইনি হইসেন এবং এত বড় হইসেন সেটা তো আর আমি জানি না। ইনিও আমাকে নতুন দেখে যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে আমার সামনে হাজির।

প্রথমে তার সাড়ে তিন বছরের জীবনে শেখা যাবতীয় বিদ্যা জাহির করে আমার নজর কাড়তে চাইলেন,তারপর কত্থেকে একটা ভাঙ্গা ছাতা জোগাড় করে 'আমি বুরা, আমি বুরা' বলে কিছুক্ষন নেংচে বেড়ালেন। অসম্ভব সুন্দর একটা বাচ্চা, খুবই মিশুক। ইনি আরিক। আমার বন্ধুর আবিরের 'ছোত' ভাই, ইনি ইকটু ভীতু ভীতু বাবু। তবে আমাকে যথেষ্টই সম্মান করেন।

আমার একটা টুথব্রাশ ইনি বগলদাবা করেছেন, এমন কি আবিররা বাসা বদলানর সময়ও উনি ওটা হারাননি ; উনাকে খুশি করার জন্য আবিরের বাসায় গেলে এই ব্রাশ দিয়ে একটু দাঁত ব্রাশ করে দেখাতে হয়। 'কোল বালিশ চাপা দিয়ে স্যান্ডউইচ' বানিয়ে খেয়ে ফেলাকে ইনি খুবই ভয় পান। ইনার প্রিয় কাজ হচ্ছে বড় ভাইকে এই বলে শাসানো, যে বাজার থেকে একটা গরু কিনে এনে সেটা দিয়ে আবিরকে লাথি খাওয়াবেন। জাহিন(zahin)। আমার খালাতো ভাই।

পিচ্চিদের মধ্যে সিনিয়র। টাকুশ টুকুশ করে চমতকার ইংরেজীতে কথা বলেন। চোক্ষের নিমিষে যে কোন গেমের চিট কোড বের করতে বিশেষ পারদর্শী। ইনি কিছুটা বিজ্ঞান্মনস্ক মানুষ; খরগোস, গিনিপিগ, কচ্ছপ, মুরগীর বাচ্চা পুষেন এবং তাদের অকাল মৃত্যুর কিছু পিলে চমকে দেয়া থীওরি দাঁড়া করান। তার একজোড়া গিনিপিগের একটা নাকি জানালায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে জর বাঁধায়; তারপর যথারীতি মারা যায়।

কচ্ছপ্টাকে মাঝে মাঝেই জানালা দিয়ে নিচে ফেলা হয়, তার খোলটা কত শক্ত দেখার জন্য। সোফার কুশনে মুরগীর বাচ্চা গুঁজে রাখার সামান্য বদঅভ্যাস আছে ইনার। । ডান থেকে দুই নাম্বার যাকে দেখছেন,ইনি আয়ান। ইনার ধারনা ইনার গায়ে খুবই জোর, সেই জোর নিয়ে প্রায়ই উনি মারামারি করতে যান এবং অবধারিতভাবে হেরে আসেন।

ইদানিং 'কুটু মিয়া'র ভয়ে কিছুটা অস্থির। সবচেয়ে বামের জনের নাম রাইসা, আয়ানের বড় বোন। বাংলাদেশ আলো করে থাকা ইনিই আমাদের একমাত্র খালাতো বোন। একটু সাজুগুজু করতে পছন্দ করেন। খোশ মেজাজে থাকলে সুর করে করে ছড়া আবৃত্তি করতে থাকেন।

ইনার বন্ধু-বান্ধব খুবই কম- পোকাহন্তাস, এ্যানাস্তাসিয়া, রাপুঞ্জিল, থাম্বালিনা, ব্যাম্বি, স্নো-হোয়াইটসহ মাত্র জনা বিশেক হবেন। এই গুন্ডাটার নাম জায়ান(zayan)। ভয়াবহ মস্তান। ভোকাবুলারি খুবই স্ট্রং; বেন-টেন, বেই-ব্লেইড, নিনজা হাতুরি, সাবু, কাবাও, বাবা, আম্মা, ‘চাচা-ভাইয়া’ দিয়ে যে কোন বাক্য রচনা করতে পারেন। চুপচাপ বসে থাকলে বুঝতে হবে যে মাত্র কোন অপকর্ম সেরে এসেছেন।

আমাদের বাসায় এসে যখন একটু চুপচাপ বসে ছিলেন, তখন আবিষ্কার করলাম আমার বারোটা পাখির মধ্যে আর মাত্র একটা অবশিষ্ট আছে। আমার কাঠবিরালীটাকে দেখলাম মনমরা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার লেজের খানিকটা রোঁয়া জায়ানের মুঠোয়। জাহিনদের বাসায় গিয়ে যখন ইনি দেখলেন যে একটা গিনিপিগ ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন সেটার হাত থেকে 'আত্মরক্ষার' জন্য সেটাকে কষিয়ে একটি লাথি দিলেন। গবেষনার নতুন ফলাফল দেখে জাহিনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ইনি জায়ানের ছোট ভাই, আইমান।

মাত্র কয়েক মাস হল এসেছেন। । খাওয়া আর ঘুমের বাইরে কিছু এখনো শিখে উঠতে পারেন নি। ও, আরেকটা জিনিস শিখে ফেলেছেন। কোলে নিয়ে আদর করলে ইনি খুব যত্ন করে ভিজিয়ে দেন।

এই পরীটার নাম আয়াত। আমার বন্ধুর ভাতিজি। বললে কেউই বিশ্বাস করবে না, ইনাকে আমার বন্ধু আক্ষরিক অর্থেই কোলে পিঠে করে মানুষ করছে। সব আব্দার পূরণ করে দেখে চাচাও উনার জানের জান। এমনকি উনার একটা তাসের প্যাকেটও আছে।

আমরা যখন পোকার খেলি, তখন উনি খুব মনযোগ দিয়ে ঐ তাসগুলো চেটেচেটে দেখেন। ইনি? ইনাকে আপনারা সবাই চিনেন। ইনিই আমার ভ্যালেন্টাইন বোন। যদিও এখন অনেক বড় হয়ে গেছেন, তাতে কি...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।