আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন নিজ নিজ জায়গা থেকেই বদলাই

ইতিহাস, নেই অমরত্বের লোভ/ আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ...

যতবার ইওরোপে গিয়েছি মানুষের কাছ থেকে সুন্দর আচরণের সুখকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছি। আমার মা যদিও 'আমার ছেলেটা কি খেয়ে আছে' বলে চোখ ফুলিয়েছ, রাত জেগে দুশ্চিন্তা করেছে আর গ্রামীন ফোনের স্ফীত পকেটে আরো কয়েকটা বাড়তি পয়সা যোগ করেছে, আমি কিন্তু অভিযোগ করার মত কিছুই পাইনি, রান্নাটা নিজের হাতে করে খাওয়া ছাড়া। মনে পড়ে প্রথম যেবার জেনেভার রাস্তায় পথ হারাই, অচেনা বয়স্ক মহিলাটির সে কি দুশ্চিন্তা। নিজের স্বামীকে ধমক দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে আমাদেরকে connecting bus এ তুলে দিয়ে আরেকজন যাত্রীর জিম্মায় আমাদেরকে ঠিক stoppage নামিয়ে দেয়ার বন্দোবস্থ করে তবেই তিনি নিষ্ক্রান্ত হয়েছিলেন। এর পর এ্যান্টোয়ার্পে মনে আছে, তুমুল বৃষ্টির মধ্যে এক তরুণী তার boyfriend কে ছাতার নিচে দাঁড় করিয়ে রেখে, নিজে ভিজে চুপসে যাওয়া সত্বেও ব্যাগ থেকে map বের করে আমাকে পথ চিনিয়ে দিয়েছিল।

এর পরও আমি ঠিক মত বুঝেছি কিনা, ঠিক রাস্তায় যাচ্ছি কিনা সেই উৎকণ্ঠা স্পষ্ট হয়ে উঠছিল তার বার বার দুশ্চিন্তাগ্রস্থ পেছন ফিরে তাকানো থেকে। হেগ এ ল্যাপটপ ফিরে পাবার কাহিনী তো দীর্ঘ বয়ান; পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি অবশ্যম্ভাবী। আজকে জুম্মার নামাযের বয়ানে ইমামের একটা হাদিসের কাহিনী খুব স্পর্শ করে গেল। তিনি বলছিলেন, একবার নাকি হযরত মোহাম্মদ (সা.) লক্ষ করলেন হযরত আলির (রা.) আসরের নামাযে আসতে দেরি হচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে জানালেন, আসরের নামাযের জন্য কিছু অতিরীক্ত সময় সব মানুষের জন্য তিনি হাদিয়া হিসেবে বর্ধিত করে দিলেন, হযরত মোহাম্মদ (সা.) যেন দুশ্চিন্তা না করেন।

আলি (রা.) একটু দেরিতে মসজিদে পৌঁছলে নবীজি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, 'কি এমন করছিলে যে তোমার দেরির কারণে আল্লাহ নামাযের সময়ই বাড়িয়ে দিলেন?' হযরত আলি (রা.) বললেন, রাস্তায় তাঁর সামনে থুথ্থুড়ে এক ইহুদি বুড়ো হাঁটছিলেন। তাঁকে overtake করে চলে আসতে হযরত আলির বিবেকে বাঁধছিল। তাই তিনি সেই বৃদ্ধকে ধরে রাস্তা পার করে, জায়গা মত পৌঁছে দিয়ে তবেই মসজিদে আসলেন; আর তাতেই দেরি হয়ে গেল। মনে পড়ছে কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধু বলছিল সে একটা বইয়ে পড়েছে ইহুদিরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যণ্ত্র করছে। সে সম্ভাব্য অসম্ভাব্য বেশ কিছু ষড়যণ্ত্রের বিবরণও দিল।

এর মধ্যে একটা ষড়যণ্ত্র হল- ইহুদিরা নাকি তাদের media, তাদের fashion house, তাদের বিভিন্ন motivating scheme এর মাধ্যমে ইউরোপিয়দেরকে এমন সব সভ্য আচরণে উদ্বুদ্ধ করে তুলছে যা কিনা ছিল মুসলমানদের আদর্শ। অন্যদিকে তারা মুসলমানদের মাঝে প্রচলণ করার চেষ্টা করছে এমন সব আচরণ যা মধ্যযুগের উইরোপিয় জীবনযাত্রাকে করে তুলেছিল কলঙ্কিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে এধরণের conspiracy theory গুলোতে একদম বিশ্বাসী না। আমার মনে হয় মানুষ কতগুলো সাধারণ মানবীয় প্রণোদনা দিয়েই চালিত হয়- হোক সে হিন্দু কি খ্রিস্টান। স্বার্থে আঘাত লাগলে সবাই প্রতিক্রিয়া দেখায়, লাভের জন্য সবাই কমবেশি লালায়িত হয়, সর্বোপরি সবাই নিজেকে, নিজের পরিবারকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বেঁচে বর্তে থাকতে পারলেই খুশি।

ইহুদি মুসলমানে এর খুব একটা তারতম্য রয়েছে বলে আমার বিশ্বাস হয়না। তাই আমার বন্ধুর উদ্ধৃত বইয়ের বক্তব্য ঠিক হোক কি ভুল হোক, আমরা ইওরোপিয়দের অনু্করণ করি আর ইউরোপিয়রা মুসলমানদেরকে অনুকরণ করুক, আমরা বাঙালি/বাংলাদেশি হই বা হিন্দু কি মুসলমান- একটু ভাল আচরণ আমাদের সবার চলার পথকেই মসৃণ করে দেয়। আমাদের কিছুটা সময়কে ফুরফুরে অনুভূতিতে চাঙ্গা করে দেয়- এ বিষয়ে মনে হয় কেউ দ্বিমত করবেননা। তাই আসুন না একটু নিজ নিজ জায়গা থেকে ভাল আচরণ করার অভ্যাস করি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।