খুব গোলমেলে, নিজেও ভাল জানি না। তবে আছে,এই ঢের।
অনেকদিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না ৷
সেই কবে থেকে আমি আর উমা প্ল্যান করছি
কখনো পুরী তো কখনো দীঘা৷ নিদেনপক্ষে
মুর্শিদাবাদ কিন্তু যাওয়া আর হয়ে উঠলো না
এখন অব্দি৷ আজকে হঠাত্ উমা এসে বলল,
কোথায় যাবি বলছিলি, নিচের মুদির দোকানে
টিকিট দিচ্ছে, তিনমাস পরের ডেটের টিকিট ৷
আসলে, যে কোন জায়গার টিকিট পাঁচশো
টাকায় দিচ্ছে ৷ আমি একটু অবাক হলাম,
মুদির দোকানে টিকিট দিচ্ছে? উমা বলল,
হ্যাঁরে, দেখে এলাম যে ৷ আরও বললো,
আমি যেতে পারবো না, তুই ঘুরে আয় ৷
ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন ? তো বলল,
মবিনের শরীরটা ভালো নেই, তাই যাব না ৷
খুব অবাক হলাম, মবিনের শরীর ভালো নেই?
সে কি! মবিন মারা গেছে সেও তো দু বছর
মুখে কিছু না বলে ওর সাথে নিচে গেলাম
টিকিট আনতে৷ টিকিট তো আনতে যাচ্ছি
কিন্তু যাবটা কোথায়? উমাই নাম বলল
একটা জায়গার, আমি বহু চেষ্টা করেও
তার নাম উচ্চারণ করতে পারছি না,
বললাম, ওখানে কি আছে সেখানে?
ওটা নাকি একটা পাহাড়ি শহর, ঠান্ডা ৷
খুব সুন্দর সুন্দর পাহাড়ি ঝর্ণা আছে,
নদী আছে, পাহাড়ের গায়ে সব কটেজ,
তাতে থাকার ব্যবস্থা ৷ শুনে ঘাবড়ে গেলাম
একটু, সে নিশ্চয়ই বেশ খরচের ব্যপার রে,
আমি বোধহয় এখন পেরে উঠব না রে, উমা
অভয় দিল, বলল, আরে আরে এখন তো নয়,
এখন শুধু টিকিট কিনে রাখ, যাওয়া তো
তিনমাস পর! আর যাবি যখন, তখন
একবার মাজারে ঘুরে আসিস ৷ মাজার?
উমা বোঝাল, ওখানে এক মাজার আছে,
পীরের দরগাহ ৷ সেখানে সব মানত পূর্ণ হয়,
ওখানকার পানিতে সব রোগ সারে,
আমি যেন ওর জন্যে এক বোতল পানি
মনে করে নিয়ে আসি, আর মানত করি
মবিনের জন্যে৷ টিকিটের পয়সা পকেটে
আছে কি না, আপাতত, দেখতে আমি
হাত ঢোকাই পকেটে৷ নিজেই অবাক হই,
খুব, ও মা! এই জিনসটা কখন পরলাম?
পকেটে পাঁচশো টাকার দুটো নোট,
তাতে তো দুটো টিকিট হবে! তাইলে
কে কে যাবে? উমাকে বলতেও সংকোচ
হচ্ছে, কিন্তু না বললেও নয় ৷ আরে!
উমা যে আজ সবজান্তা! সে বললো,
দুটো টিকিটই কাট নারে বাবা৷ তোর
আর সুমেরুর ৷ কোথাও তো যাসনি দুজনে৷
এই ফাঁকে ঘুরে আয় ৷ মাথা নেড়ে নেড়ে
সায় দিই, পকেটের ঐ দুটো নোট দিয়ে,
দুখানা টিকিট কাটি ৷ ভয়ে ভয়ে
আবার জিজ্ঞেস করি, যদি যেতে না পারি
তাইলে এই টিকিটের কি হবে? উমা বললো,
এখানে এরা টিকিট বিক্রি করে শুধু,
ফেরত নেয় না, অবশ্য তুই না গেলে
টিকিট দুটো ষ্টেশনে গিয়ে ফেরত দিয়ে দিস,
কোন অসুবিধা হবে না ৷ উমা চলে যায় ৷
আমি একটু অবাক হই, প্লেনের টিকিট
ষ্টেশনে গিয়ে ফেরত দেব! তাকিয়ে দেখি
পাশেই মাংসের দোকান৷ আমি এখানে
মাংসের দোকান কবে হল ভাবতে ভাবতে
বাড়ির পথে হাঁটতে থাকি ৷ যে সিঁড়িটা
দিয়ে উঠছি সেটা আমার বাড়ির সিঁড়িই তো?
হ্যাঁ ৷ নয়তো আবার কি৷ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে
থাকি উপরে৷ যে ফ্লোরে এসে সিঁড়ি শেষ
সেখানে আমার ফ্ল্যাট নেই! গেল কোথায়?
খুঁজতে থাকি ৷ লম্বা এক করিডোর দিয়ে
এমাথা ওমাথা হেঁটেও নিজের ফ্ল্যাট খুঁজি ৷
খুঁজে না পেয়েও বুঝতে পারি না যে
ভুল বাড়িতে ঢুকেছি ৷ করিডোরের দুপাশে
সব বন্ধ দরজা, যার একটামাত্র পাল্লা খুলে
এক ভদ্রলোক বেরিয়ে আসেন আর
আমাকে চিনতে পারেন ৷ তুমি এখানে?
আমি অসহায় ভাবে বলি, আমার ফ্ল্যাট!
তিনি বলেন, তুমি তো এক বছর আগেই
এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছ, ভুলে গেলে নাকি?
সামনের সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে গিয়ে
ডানদিকের রাস্তা ধরে গেলেই নাকি
আমি আমার বাড়ি পেয়ে যাব, ঠিকঠাক;
বলে দিলেন সেই ভদ্রলোক৷ আমি নেমে
হাঁটতে হাঁটতে যেখানে পৌঁছুলাম; সেটা
একটা ছোট্ট রেলষ্টেশন ৷ যেখান থেকে
খেলনা ট্রেনের মত দেখতে ট্রেনগুলো
হুঁশ হাঁস বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ সেই ট্রেনে
কোন মানুষ নেই ৷ আমি একটা ট্রেনে
চেপে বসি ৷ ভাবনা চলতে থাকে, উমা!
আমাকে হিল ষ্টেশনের টিকিট কেটে দিল,
আমার গরম জামা-কাপড় লাগবে না?
আর আমি বেড়াতে যাব ,আমার শপিং
করা লাগবে না? উমা অবশ্য বলে দিয়েছে
এই ব্লু জিনসটার সাথে একটা লেবুরঙা কুর্তা
খুব ভাল লাগবে, আমি নিজের মনেই ভাবি,
উমাকেই বলব, আমার শপিং করে দিতে,
এখনও তো আমার তিনমাস সময় আছে ৷
ট্রেন থেকে নেমে সামনে বেঁকে থাকা
একটা রাস্তা দেখতে পাই, কোথায় যাচ্ছি?
সে চিন্তা আর মাথায় নেই, এগিয়ে যাই
ঐ রাস্তায় আমি এঁকে-বেঁকে যাই ৷ আরে!
আমার বাড়ি এই রাস্তার শেষ মাথায়?
কি যে হচ্ছে আমার কে জানে ৷ ঘরে ফিরে
ওকে দেখতে পাই না ৷ এখনও বাড়ি ফেরেনি ৷
আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রনায় ৷ আজকাল;
রোজ ও দেরী করে বাড়ি ফেরে৷ রাত বাড়লে,
ঘুমিয়ে পড়ি ৷ টুংটাং ঘন্টা বাজে দরজায় ৷
ও আমার দিকে তাকায় না, কথা বলে না ৷
আমি আবার এসে শুয়ে পড়ি ৷ যন্ত্রবত্ ৷
মিষ্টি একটা পাহাড়ি গন্ধ এসে লাগে নাকে ৷
স্নায়ু অবশ করা একটা গন্ধ ৷ ওদিকে
পাশ ফিরে ও শুয়ে আছে, বুঝতে পারি
ও মদ খেয়ে এসেছে ৷ এভাবে কি রোজ
রোজ ও মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে, আর এসে
পাশ ফিরে শুয়ে থাকে? ঠান্ডা ৷ আমি ওকে
জিজ্ঞেস করি, তুমি কি মদ খেয়েছ?
ও কোন কথা বলে না ৷ আমি ওকে ধরে
আমার দিকে ফিরিয়ে দিতেই সেই গন্ধটা
স্পষ্ট টের পাই, এতক্ষণ যেটা হালকা
আবছা ছিল, টয়ট্রেনে, জিনসের পকেটে ৷
মনে হল এই গন্ধটা আমি আজকাল
রোজ পাই৷ আমি জোরে জোরে চেঁচাই,
তুমি মদ খেয়ে এসেছ৷ আবার আজকে ৷
এবার ওর শার্টের কলার ধরে ওকে
আর গোটা ট্রেনকে ঝাঁকুনি দিতে থাকি ৷
ও কোন কথা বলে না ৷ কোন কু উউউ,
ঝিকঝিক আসেনা কানে; এই রাতে ৷
আমার বেড়াতে যাওয়ার ট্রেন আজকাল
কোন কথা বলে না আর আমার সাথে।
( জিকো'র নির্বাচিত দু:স্বপ্ন পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখাটি ব্লগে দিলাম, এই লেখাটি রোহণ কুদ্দুসের 'সৃষ্টি' তে প্রকাশিত।)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।