আমার এই পোস্টের লক্ষ্য হচ্ছেন সেইসব পুরুষেরা যারা মেধায় - চেহারায় - টাকা পয়সা বা মামার জোরে আমার মতন অতি সাধারন গোত্রের । যারা পারিবারিকভাবে বস্তা বস্তা টাকা বা দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ সাকিব খান (!) তাদের আমার পোস্টের সাহায্যের কোন দরকার নেই ।
পোস্ট এর সময়কাল শুরু ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টার । মফস্বল বা ছোট শহর থেকে এসেছেন । চোখে রঙ্গিন স্বপ্ন ।
ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটাকে দেখলে বুকের গহীনে কেমন যেন চিনচিনে অনুভুতি হয় । টিভি নাটকে বা সিনেমায় দেখেছেন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে ক্লাসের সুন্দরতম মেয়েটার সাথে ধাক্কা ......হাত থেকে বই পড়ে যাওয়া ......চোখে চোখে চোখাচোখি......অতঃপর প্রেম । মনে মনে আশার জাল বোনেন আর সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করেন আর ভাবেন কবে ধাক্কা খাবেন.........কবে ধাক্কা খাবেন ।
আপনার উদ্দেশ্যে বলি - চণ্ডীদাস নাকি বার বছর পুকুরে বড়শি ফেলে রজকিনীকে পেয়েছিল । এটা আধুনিক যুগ ।
আপনি বার দু গুনে চব্বিশ বছর ওই সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করলেও কোনদিন ধাক্কা খাবেন না । আর যদি কপালগুনে ধাক্কা খেয়েও যান তাহলেও বই হাত থেকে পড়বে না বা চোখাচোখি হবে না । বরঞ্চ একটা ঝাড়ি খাবেন -
ইডিয়েট, কোত্থেকে যে এই সব আন কালচার্ড ছেলে পেলে ভার্সিটিতে চান্স পায় ।
স্বপ্নের রঙ্গিন বেলুন ফুস............
ধরুন ভাগ্যক্রমে সুন্দরতম মেয়েটির সাথে আপনার পরিচয় হল , মেয়েটি আপনাকে দেখলে বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি দেয় , কুশলাদি জানতে চায় - আপনার মনে স্বপ্ন ডালপালা ছড়াতে থাকে ............
আমি বলবো স্বপ্ন দেখা বাদ দেন , বাস্তবে ফিরে আসেন । সমূহ সম্ভাবনা আছে মেয়েটি অলরেডি এনগেজড ।
আর এনগেজড না হলেও পড়াশোনা শেষ করে চাকরী যোগাড় করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে আপনার যে সময় লাগবে ততদিনে মেয়েটি অন্য কারও ঘরণী হয়ে দুই বাচ্চার মা হয়ে যাবে ।
আপনার প্রতি পরামর্শ - পড়াশোনায় মন দেন । ভার্সিটির প্রথম কয়েক সেমিস্টার সাবজেক্ট তুলনামুলকভাবে সহজ থাকে , সহজে গ্রেড উঠানো যায় । এই সময়ে অন্য দিকে মনোযোগ গেলে গ্রেড খারাপ হবে , বাকি সেমিস্টারে আর ওই গ্রেড ভালো করা যাবে না ।
কিছুদিন পর-
ইতিমধ্যে ভার্সিটিতে আপনার ৩/৪ সেমিস্টার কেটে গিয়েছে ।
নিজের সম্পর্কে আপনার এখন পরিষ্কার ধারণা জন্মেছে । নিজের যোগ্যতা অযোগ্যতা জেনে গিয়েছেন । কিছু মানুষের সাথে আপনার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়েছে ।
প্রেমে পড়ার জন্য এখন আপনার বেস্ট সময় । অহেতুক চাঁদে হাত দেবার চেষ্টা করবেন না ।
তাতে লাফালাফি করাই বৃথা যাবে । আপনার ও আপনার পরিবারের সাথে মানানসই একজনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন । যাতে সম্পর্ক পরিণতি পেলে আপনার জন্য তা সুখের হয় ।
মনে রাখবেন , চেহারা নয় - মানুষটার আচার-আচরন, চিন্তাভাবনা, মানসিকতা গুরুত্বপূর্ণ ।
আর যদি এখনো মেয়েদের সাথে পরিচয় বা বন্ধুত্ব না হয় তবে সহজ উপায় হচ্ছে ভার্সিটিতে অনেক ধরনের ক্লাব বা সোসাইটি থাকে , ডিবেট- আবৃতি - নাটকের দল থাকে ।
এগুলোতে যোগ দিতে পারেন । অনেকের সাথে পরিচয় হবে ।
তবে আবারও বলি - পড়াশোনায় মন দেন । আর মাসে মাসে ৫০০/১০০০ টাকা করে জমাতে শুরু করুন ( বেশি হলে বেশি ভালো । তবে সৎ ভাবে টাকা জমাবেন )
আরও কিছুদিন পর -
আপনি অলরেডি এখন গ্র্যাজুয়েট ।
চাকরী খোঁজা শুরু করেছেন । সাথের অনেকেই ভালো চাকরী পেয়ে গিয়েছে । আপনার কিছুই হয়নি ।
দয়া করে হতাশ হবেন না । পরিচিত অপরিচিত সবার সাথে যোগাযোগ রাখুন ।
আর যে কোন চাকরী পেলে সময় নষ্ট না করে গ্রহন করুন । মনে রাখবেন - যেকোন চাকরীর ইন্টারভিউ বোর্ডে একজন পূর্ণ বেকারের থেকে একজন চাকরিরত প্রার্থী অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকে ।
চাকরী পেয়েছেন ......... অভিনন্দন । মনের মানুষ অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আছে ? তার থেকে আরও ছয়মাস সময় নিন ।
স্টুডেন্ট লাইফ থেকে জমাতে শুরু করায় কিছু টাকা আপনার হাতে আছে ।
এর সাথে আরও কিছু টাকা জমিয়ে সুন্দর একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মনের মানুষকে ঘরে তুলুন ।
মনে রাখবেন - চাকচিক্য নয়, অনুষ্ঠান সুন্দর হয় সবার অংশগ্রহনে ।
আর যদি হাত পা ঝাড়া মুক্ত মানুষ হয়ে থাকেন তবে দুই বছর আপনার হাতে সময় আছে । বিশ্বাস করুন , এখন থেকে যদি আপনার বাবা-মা আপনার জন্য পাত্রী দেখা শুরু করে তাতেও দুই বছর সময় লাগবে ।
কারন - আসে পাশে মেয়ের অভাব নেই কিন্তু বিয়ের পাত্রীর বড়ই অভাব ।
দয়া করে এই সময় যে জিনিসগুলো বিবেচনা করবেন তা হচ্ছে -
*আপনাদের দুই পরিবারে শিক্ষা - অর্থ - সামাজিক মর্যাদায় যেন কাছাকাছি হয় । এসবে বড় ব্যবধান পরবর্তী জীবনে অনেক ঝামেলা তৈরি করে ।
*আপনার সাথে যেন তার বয়সের পার্থক্য ৫ বছরের বেশি না হয় ।
বিয়ের সময় সে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এই বিয়েতে মত দিয়েছে , কোন চাপের কারনে নয় ।
*বিয়ের আগে যদি মেয়ের কোন রিলেশনশিপ থেকে থাকে তবে তা ব্রেকআপের পর একটা নির্দিষ্ট সময় যাবার পরই (অন্তত ৬ মাস) মেয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছে ।
*বিয়ের আগেই নিজের আর্থিক সামর্থ্য সম্পর্কে মেয়েকে একটা পরিষ্কার ধারণা দেবেন । যাতে সে কিসের মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে এই বিষয়ে তার ধারণা থাকে । মনে রাখবেন - সংসারে শান্তির জন্য টাকা পয়সা গুরুত্বপূর্ণ ।
অতঃপর আপনি বিয়ে করলেন । এর ফাঁকে ফাঁকে অনেক ঘটনা ঘটে যাবে যেগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে অনেক মাস পার হয়ে যাবে কিন্তু গল্প শেষ হবে না ।
তার পরও আপনি পেরেছেন ।
আপনাকে অভিনন্দন । আপনি এখন আর ব্যাচেলর নন - পরিপূর্ণ একজন বিবাহিত পুরুষ ।
শেষ একটা টিপস - সেক্স বা শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে আপনার মনে যদি আকাশ কুসুম কল্পনা থাকে , তবে বিয়ের পর প্রথম যখন আপনি এর অভিজ্ঞতা পাবেন তখন আপনার মনে হবে -
এই বালের নাম সেক্স । এই নিয়া এত মাতামাতির কি আছে ।
এ আর এমন কি ! ...........................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।