আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাস (রোম)

ইউরোপের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা কাউকে যদি কোনো বিশ্বাসঘাতকের নাম বলতে বলা হয়, তবে তার মানসপটে যে নামটি সবার আগে ভেসে উঠবে তা হলো মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাস। উইলিয়াম শেকসপিয়রসহ বহু নামিদামি কবি, সাহিত্যিক এবং গবেষকের লেখায় বারবার উঠে এসেছে এক বেইমানের নাম ব্রুটাস। ব্রুটাসের দেশ ইতালিতে কেউ কারও সঙ্গে বেইমানি করলে ক্ষোভ প্রকাশের জন্য ল্যাটিন ভাষায় বলা হয়, 'এট টু ব্রুটি!' অর্থাৎ 'ও তুমিও ব্রুটাস!' শেকসপিয়রের নাটক জুলিয়াস সিজারেও সংলাপ হিসেবে এসেছে এই প্রবাদ বাক্য। যে ব্রুটাসকে নিয়ে এত সমালোচনা, তিনি ছিলেন প্রাচীন রোমের জেনারেল এবং তৎকালীন নগর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক জুলিয়াস সিজারের প্রথম জীবনের বন্ধু এবং অনুগ্রহ গ্রহণকারী। পরবর্তীতে অন্যদের সঙ্গে এই ব্রুটাসও রাষ্ট্রপ্রধান জুলিয়াস সিজারকে হত্যায় অংশ নেন, যা মৃত্যুর আগে সিজারকে হতবাক এবং ব্যথিত করেছিল।

তাই বিখ্যাত ইংরেজি নাটক জুলিয়াস সিজারে নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়রের কলমে বেরিয়ে আসে সেই কালজয়ী সংলাপ 'ও তুমিও ব্রুটাস। '

খ্রিস্টপূর্ব ৮৫ অব্দে তৎকালীন নগর রাষ্ট্র রোমে জন্মগ্রহণ করেন মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাস, বেড়ে ওঠেন চাচার বাড়িতে। তাই অনেকের ধারণা ব্রুটাসের বাবা স্বয়ং জুলিয়াস সিজার, যদিও ব্রুটাসের জন্মের সময় জুলিয়াস সিজারের বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। অন্যদিকে জানা যায় তার বাবার নামও ছিল ব্রুটাস (এল্ডার) এবং মার নাম ছিল সার্ভিলিয়া কেওপিওনিস। ব্রুটাসের মা পরবর্তীতে জুলিয়াস সিজারের রক্ষিতা ছিলেন আর বাবা এক বিদ্রোহে অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

তরুণ বয়সে ব্রুটাস সাইপ্রাসে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। চাকরির পাশাপাশি উচ্চহারে সুদের ব্যবসা করে রাতারাতি ধনী বনে যান ব্রুটাস। একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে রোমে প্রত্যাবর্তন করে ব্রুটাস বিয়ে করেন। এরপর রোমের সরকার ব্যবস্থায় জুলিয়াস সিজারের পক্ষে সিনেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৯ অব্দে রোমে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ব্রুটাস জুলিয়াস সিজারের পক্ষ ত্যাগ করেন এবং মিজারের শত্রু পম্পের পক্ষে অস্ত্র ধরেন।

জুলিয়াস সিজার এ জন্য তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেও কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা যুদ্ধ না করার শর্তে বেঁচে যান।

পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধে জুলিয়াস সিজার জয়ী হলে ব্রুটাস তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে সিজারের কাছে পত্র লেখেন। উদার সিজার এবারও তাকে ক্ষমা করে দেন। শুধু তাই নয়, সিজার তাকে একান্ত আস্থাভাজনদের কাতারে ঠাঁই দেন এবং প্রথমে একটি গ্রাম এবং পরে একটি শহরের প্রশাসক নিযুক্ত করেন। আফ্রিকা জয়ের পর জুলিয়াস সিজারের প্রভাব ও প্রতিপত্তি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।

এতে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে সিনেটরদের মাঝে, পরবর্তীতে এই সিনেটররাই জুলিয়াস সিজারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ব্রুটাস তার প্রতি সিজারের ক্ষমা প্রদর্শন এবং অনুগ্রহের কথা ভুলে সিনেটরদের পক্ষে যোগ দেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ অব্দের ১৫ মার্চ জুলিয়াস সিজারকে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন সিনেটররা। এদিন প্রিয়তমা স্ত্রী কারপূর্ণিয়া পিসোনিজের মনে দোলা দিচ্ছিল অজানা আশঙ্কা। স্বামী জুলিয়াস সিজারকে বারবার নিষেধ করছিলেন বাইরে যেতে।

এদিকে সভাকক্ষে জুলিয়াস সিজারের আসতে দেরি হওয়ায় ষড়যন্ত্রকারী সিনেটরদের অনেকেই মনে করে হয়তো বা ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। কিন্তু বেইমান ব্রুটাস সবাইকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলে। নির্দিষ্ট সময়ের পর জুলিয়াস সিজার সভাকক্ষে এলে উপস্থিত প্রায় ৫০-৬০ জন সিনেটর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর। অসম প্রতিপক্ষকে তবুও মোকাবিলা করে যাচ্ছিলেন জুলিয়াস সিজার। এমনি এক মুহূর্তে সিজার দেখতে পেলেন তারই অনুগ্রহে বেঁচে যাওয়া ব্রুটাসও তাকে আঘাত করছে।

আর সহ্য করতে পারলেন না তিনি। রোমের ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় লম্বা পোশাক 'টোগা'র আড়ালে মুখ লুকিয়ে নিজেকে সঁপে দিলেন নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে শুধু একটি কথাই বললেন, 'ও তুমিও ব্রুটাস'!

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।