রাজধানী ঢাকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ককে কেন্দ্র করে বেশ রমরমা ব্যাপার জমে উঠেছে। আলোকসজ্জা, চাইনিজ লন্ঠন আর মাটিতে নেমে আসা প্যানাফ্লেক্স বিলবোর্ডে মোহন সব ছবি। শীত শেষের ধুলোময়লাকে ঢাকার জন্য প্রবল প্রতাপে রংবেরং মাখা হয়েছে। উত্তেজনার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। ব্লগোস্ফিয়ারেও মোটামুটি হইচই, খেলা বিষয়ক অজস্র পোস্ট আর যাবতীয় প্রেডিকশন।
রাতের ঢাকার মনমুগ্ধকর ছবিও দেখলাম কিছু। সব মিলিয়ে এক এলাহী কান্ড।
মানুষের মনের ভাবনা চিন্তাগুলোর একটি স্পন্দন ব্লগে টের পাওয়া যায়। খুব বেশী জবাবদিহীতার ব্যাপার নেই বলে, ব্লগে আনগার্ডেড চিন্তা ভাবনাগুলো মানুষ খুব সহজেই শেয়ার করে। এ বিষয়ক লেখাগুলো পড়ে, একটা সহজ সমীকরণে পৌঁছে গিয়ে তাই বলা যায়, দেশের একটি বড় অংশই এ বিশ্বকাপের আয়োজন উপভোগ করতে প্রস্তুত।
সত্য যে দেশের একটি ক্ষুদ্র অংশই এখনো নেটিজেন, তারপরও, প্রত্যন্ত পাড়াগাঁয়ের বাজারে ছনের চালার উপরে উল্টো করে বসানো চাকতিগুলো মোটামুটি সারাদেশকেই এ জ্বরে আক্রান্ত করে ফেলেছে।
এককালে বেশ খেলা পাগল ছিলাম, কর্মব্যস্ততার কারণে অনেক কষ্ট করেই নিজেকে বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে হয়। জমিয়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে খেলা দেখার দিন পেছনে ফেলে এসেছি। তবে যা হয়তো অতীতে সেভাবে ছিলনা, এখন হয়েছে, তা হলো সামর্থ্য... আজ একটু চেষ্টা করলে ঘরে টিভি, কিংবা নিদেনপক্ষে টিভি কার্ড লাগিয়ে পিসিতে দেখার সুযোগ আছে। আর সময়ও হয়তো ম্যানেজ করা সম্ভব, যেহেতু সেলফ এমপ্লয়েড তাই, ক্লায়েন্টদের একটু বুঝিয়ে সুজিয়ে ম্যানেজ করাটা খুব কঠিন নয়...
বাবা মা মোটামুটি একজন প্রাক্টিসিং মুসলমান হিসেবে বড় করেছেন, আর ইদানিং এ বিষয়ক কিঞ্চিত বাড়তি সচেতনতা আনার চেষ্টা করছি।
তাই বৌ যখন বললো, ক্রিকেট খেলাটা সেও বেশ পছন্দ করে, আমিও কম করিনা তাই খেলা দেখার একটা মামুলি বন্দোবস্ত করা দরকার... আপাতঃ একটি মৌন সম্মতি দেয়ার পরে, মনটা খচ খচ করতে লাগলো...
আচ্ছা, একজন বিশ্বাসী মুসলমান হিসেবে কেউ কি আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারবেন, নিরেট বিনোদনের জন্য প্রায় অর্ধদিন সময় স্রেফ ক্রিকেট দেখে পার করে দেয়ার পর, পরকালীন জবাবদিহীর জন্য একটি মোটামুটি অজুহাত দাঁড় করানো যাবে? গোদের উপরে বিষফোঁড়া হিসেবে প্রতিটি ওভারের পরপর যেসব সুড়সুড়িমার্কা বিজ্ঞাপন চলতে থাকে, রিমোট নিয়ে ধ্বস্তাধ্বস্তি করেও যা পুরোপুরি রোধ করা যায়না, তারই বা জবাব কি হবে? খেলাধুলা বিষয়ক আয়েশা রাঃ-এর হাদীস আমি জানি, কিন্তু আয়েশা রাঃ যদি অর্ধদিন যাবৎ হাবশীদের বর্শা নিয়ে কলাকুশল দেখতে চাইতেন, নবী সাঃ-এর রেসপন্স কি হতো?
আমি জানিনা।
কিংবা সত্য করে বলতে গেলে বলতে হয়, জানি কিন্তু ঠিক স্বীকার করতে চাইনা। আচ্ছা, মুসলিম হয়েছি বলে কি খেলা দেখা যাবেনা? জীবনের স্বাদ আহ্লাদ সব বিসর্জন দিতে হবে? আমার মনের ইচ্ছা আকাংখাগুলোকে যেহেতু আত্নসমর্পিত করতে এখনো আমি পুরোপুরি প্রস্তুত নই, তাই এ চ্যাপ্টারটা বরং কিছুটা স্বেচ্ছাকৃত অজ্ঞতার ধোঁয়াশায় ঢাকা থাকুক। দ্বীনকে এতোটা কঠিন করার দরকার আছে কি?
তার চেয়ে, দু'এক ওভার খেলা, আর গোটা পাঁচেক চার ছক্কা দেখতে শুরু করলেই, মাঠভর্তি দর্শক আর দেশজোড়া শোরগোলে বিবেকের প্যান প্যানানি আর শোনাও যাবেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।