একুশে ফেব্রুয়ারী আমাদের কার না অহংকার। কার না চেতনা। কার না প্রেরনা। একুশের প্রেরণা আর চেতনাই আমাদের পরবরর্তীতে শিখিয়েছে বিপ্লব, সেই মহান বিপ্লব ১৯৭১ এর মহা সংগ্রাম। গুটি কয়েক প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সেনা অফিসারের সর্বোচ্চ প্রচেস্টায় এক লক্ষ প্রশিক্ষিত সৈন্যের বিরোদ্ধে বিজয়ী হয়ে উঠা কৃষকের সন্তানের সে সুমহান বিজয়ের পেছনে ছিলো একুশের চেতনা, একুশের প্রেরণা।
তাই একুশ আমাদের জাতীয় জিবনে এক বিশাল অহংকার ও ইতিহাসের নাম।
ভাষার জন্য আমার অজ পাড়া গাঁয়ের শামসুল হাক চাচা থেকে শুরু করে প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম পর্যন্ত যারা লড়াই করেছেন তাদের সবাইকে জানাই সালাম। আর ভাষার জন্য তপ্ত বিষমাখা বুলেট বিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরনকারী বীরদের জন্য প্রার্থনা হে প্রভু বেহেশতের শ্রেষ্ঠতম স্থানে তুমি তাদের অধীষ্ঠিত করো।
ভাষার লড়াইটা শুধু যে বাংলা ভাষার জন্য ছিলো তা নয়। এ লড়াইয়ের অনেক দিক ছিলো।
এ লড়াই ছিলো শাসক গোষ্ঠির একগুঁয়েমি, একদেশদর্শীতা ও দূর্বলদের উপর যে চাপিয়ে দেয়ার মনোভাব চলে আসছিলো, সেই দু;শ বছরের পুরাতন রেওয়াজের বিরুদ্ধের নির্যাতিতদের এক বজ্র নিনাদ। সেই নিনাদে কেঁপে উঠেছিলো পশ্চিম পাকিস্থানে শোষকদের শাহী মসনদ। বাঙাল কৃষকের সন্তানেরা জেগে উঠেছিলো মায়ের ভাষা ও অস্তিত্ব রক্ষার মহা অভ্যুত্থানে। প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেচিলো ঢাকার পিচঢালা রাজপথ থেকে মাঠের সবুজ আলপথের ধূলিকনা পর্যন্ত। সমুদ্রের সফেন ঢেউগুলো ক্ষোভের গর্জন তুলে আছড়ে পরছিলো পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকতের বালুচরে।
এ যে স্বকীয়তা বিষর্জনের মরন ফাঁদ তা বুঝতে কাল ক্ষেপন করেনি বাঙাল।
যখন আমি রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরের নাম উচ্ছারন করি তখন বুঝতে পারি আমার রক্তে বিদ্যুত চমকায়। বুঝতে পারি এরই নাম বিপ্লবের ফুলিঙ্গ। এই আলোর পথযাত্রীদের নির্মোহ আত্মত্যাগ বাঙাল জাতিকে করেছে সুমহান। পৃথিবীতে বানিয়েছে অনন্য।
আজ অনন্য জাতী হিসেবে আমাদের আছে ভাষা যুদ্ধের ইতিহাস। মায়ের কথার জন্য যে সন্তান জীবন দিয়ে মায়ের ভাষাকে করেছে উজ্জল সে সন্তানরাই আমাকে দেয় সাহস, যোগায় প্রেরনা। শাহাদাতবরনকারী সেই সব সাহসী সন্তানেরা আজো নক্ষত্র হয়ে প্রতিবাদের গতিপথের দিশারী হয়ে আছে। আজো অস্তিত্বের সংকটে জাতিকে দেখায় আলোর পথ। শেখায় গর্জে উঠা, দিক নির্দেশনা দেয়, রণ হুংকার করার পথ দেখায়।
তাই এখনো টের পাই একুশের শহীদদের মাঝেই আছে বিপ্লবের মূলমন্ত্র, আছে সৈরশাসকের বিরোদ্ধের জেগে উঠার বীজ। সেই সব শহীদের আত্মত্যাগ যেমন ভুলে থাকতে পারিনা, তেমনি মায়ের ভাষার অপমান ও সহ্য করতে পারিনা।
বাংলা ভাষার অহংকারে যখন দূর্বীনত আমার মস্তক। তখন মাঝে মাঝে বুকটা হাহাকার করে উঠে। কারন এখন এই একবিংশ শতাব্দীর যাঁতাকলে পিষ্ঠ প্রায় আমার প্রিয় বর্ণমালা, আমার মাত্র ৬০ বছরের পুরনো সংগ্রাম আর চেতনার ইতিহাস।
আমরা কি অবলীলায় অবহেলা করি নিজের ভাষা আর ভাষার সংগ্রামকে। আমার দুখিনী বর্ণমালা নিজেকে খুঁজে নিজ দেশে পরবাসী হয়ে। আধুনিকতার ছদ্মাবরনে বাংলা এখন অনেকটাই নিম্নবর্ণ, অছ্যুৎ। ধন্যবাদের চে থেন্ক্যু বলার মধ্যে ব্যাক্তিত্বের আভিজাত্য সুস্পষ্ট। ভদ্রমহোদয় শব্দটা কতযে দূর্বোধ্য লাগে জেন্টলম্যানের চেয়ে।
আর বক্তব্যে দুকথা ইংরেজি জুড়ে দিলেই আমরা ভাবি আহা কি সুমিষ্ট বক্তা, কি তার অপূর্ব ভাষন, কি তার গভীর ঞ্জান!!! ভাষা শেখা খারাপ নয় বরং অতি উত্তম এক শিক্ষা। এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লা যিনি ভাষা যোদ্ধাও বটে। তিনি ৭ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন, এ ছাড়াও আরো প্রায় ১৫ টি ভাষা তার আয়ত্বে ছিলো। কখনো শুনিনি তিনি আভিজাত্য প্রকাশের জন্য ইংরেজি বা আরবী ব্যবহার করতেন। কখনো শুনিনি তিনি বাংলিশ বা হিংলা ব্যবাহার করতেন।
২৪ শে ফেব্রুয়ারীর পূর্বে ও পরে দুটি বিশেষ দিন আছে। জাতীয় জীবনে দু'টি দিন ই বেদনার। দুটি দিনেই দেশের সূর্য সন্তানেরা ষড়যন্ত্র আর কুটিল রাজনীতির শিকার হয়ে শাহাদাত বরন করেছেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষার তরে জীবন দিয়ে ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন আমার কৃষক বাবার সূর্য সন্তানেরা। আর ২৫ শে ফেব্রুয়ারী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দেশ রক্ষাকারী স্বদেশ মাটির চৌকষ ৫৭ জন সন্তানকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে নিরস্ত্র অবস্থায়।
এমন দুই বিশেষ গুরুত্বপূর্ন দিনের মাঝখানে একটা দিন বেছে নেয়া হলো বিজাতীয় ও আগ্রাসী সংস্কৃতি শক্তির প্রচার আর ব্যবাসায়িক প্রনোদনায়। কি আসামান্য আমাদের মেধা ও বুদ্ধি যে ভাষাকে অপমান করার জন্য আমরা বেছে নিই যে মাসে ভাষাকে রক্ষার জন্য আমার ভাইয়ে জীবন দিয়েছে। সারা পৃথিবীতে যখন ২১ ফেব্রুয়ারীকে পালন করার হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে তখন আমরা কিছু বেহায়া ও বেলাল্লাকে ডেকে আনি ভাষা ও ভাষার মাসকে অপমান করার জন্য।
পাদটিকা:
যারা পাকিস্থান সফর করেছেন এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর কবরস্থানে গিয়েছেন। তারা প্রায়ই একথা টা বলেন যে।
জিন্নাহর কবর ফলকের মধ্যে নাকি তিনটা ভাষায় লিখা আছে তার নাম । ইংলিশ, উর্দুর পাশা পাশি বাংলায় লেখা আছে, এখানে ঘূমিয়ে আছেন কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। যেটা আজো পর্যন্ত অমলিন। এই লেখাটা জিন্নার কবরে এখনো উজ্জল হয়ে থাকার একটা শিক্ষা আছে। যিনি বলে ছিলেন উর্দু ইজ দ্যা অনলি স্ট্যাট ল্যাংগুয়েজ ইন পাকিস্থান।
সে দম্ভোক্তির জবাব আজো তিনি বয়ে চলছেন তার কবরের নাম ফলকে।
আসুন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করি।
ভাষার মাসকে সম্মান করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।