২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবসটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যথাযথ মর্যাদা এবং ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলা ভাষাকে বাঙালির প্রাণের ভাষা, রাষ্ট্রের ভাষার দাবীতে ১৯৫২ সালে শহীদ হয়েছে রহমত, বরকত, জব্বর, রফিক এবং শফিকসহ আরো অনেকে। এটা বিশ্বের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
বাংলা ভাষার গুরুত্ব কতটা আমাদের দেশের অফিস আদালতে আছে তা আমরা জানি।
তবে সর্বকালের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভাষণে বলেছিলেন, আপনারা আরো জানেন যে, আমার ফাসিঁর হুকুম হয়েছিল। আমার সেলের পাশে আমার জন্যে কবরও খোঁড়া হয়েছিল। আমি মুসলমান। আমি জানি, মুসলমান মাত্র একবারই মরে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের নিকট নতি স্বীকার করবো না।
ফাসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। '
বঙ্গবন্ধুর ওপরের কথাগুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বাংলা ভাষার গুরুত্ব কত। বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে সম্মানিত করেছিল। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছে। এতে বাংলা ভাষার মর্যাদা বেড়েছে।
বিভিন্ন উন্নত দেশ বাংলা ভাষায় সংবাদ প্রচার করে থাকে। সংবাদপত্রও প্রকাশিত হচ্ছে বিদেশে।
কিন্তু আমি এতে মোটেও খুশি নই। আমাদের দেশের বেসরকারি সংস্থা গুলো তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইংরেজিতে। অথচ তারা মুখে বলে যে, নিরক্ষর এবং তৃণমূল পর্যায়ের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করছে।
আজকাল যারা বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়া-শুনা করে তাদেরকে চাকুরির বাজারে অবহেলার চোখে দেখা হচ্ছে। বাংলা সাহিত্য নিয়ে যারা নাকি লেখা-পড়া করেছে তারা শুধু স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবে। এটা ছাড়া অন্য পেশায় যাওয়া নাকি তাদের বোকামী। বেসরকারি সংস্থা গুলো সমাজকল্যাণ বিষয় এবং ইংরেজি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রীধারীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চাকুরি দিচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হবে।
কিন্তু আমার দুঃখ হয়। কারণ, এনজিওতে কাজ করার জন্য ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হবে এই দাবীর সাথে একমত। কিন্তু ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর এর সাথে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, বাংলা সাহিত্য নিয়ে যারা পড়াশুনা করেছে তারা দেশ এবং জাতি সম্বন্ধে বেশি জ্ঞান রাখে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সাহিত্য হচ্ছে সমাজের দর্পন।
বাংলা সাহিত্য হচ্ছে এ দেশ এবং জাতির জন্য দর্পন। তাহলে কেন বাংলা ভাষাবীদরা প্রতিবাদ করছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কেন নিশ্চুপ।
বাংলা সাহিত্যে যারা উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করবে তাদেরকে সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চাকুরি প্রদান করতে হবে। অনেক বাংলা সাহিত্যের ছাত্ররা তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ।
তারপরেও তাদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চাকুরি প্রদান করা হয় না। হায়রে দেশের বেসরকারি সংস্থার প্রধানরা অপদার্থ। বাংলা ভাষার গুরুত্ব না দিয়ে কি দেশের কল্যাণ করা সম্ভব?
আরেকটি কথা না বলে পারলাম যে, আজকাল এফএম রেডিও গুলোতে রেডিও জকিরা যেভাবে বাংলা ভাষাকে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে বিকৃত করে উচ্চারণ করে তাতে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। মনে হয় ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। কিন্তু যেখানে দেশের বুদ্ধিজীবীরা নিশ্চুপ সেখানে আমার মতো নগণ্য ব্যক্তির কি বলার আছে।
কোন কোন ভাষাবীদ বা বুদ্ধিজীবীরা বলে বাংলা ভাষায় বিদেশী শব্দ থাকলে শব্দভান্ডার যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমনি শুনতেও ভাল লাগে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিদেশী শব্দ আসুক, কিন্তু বাংলাকে বিকৃত করে উচ্চারণ করা যুক্তিযুক্ত নয়। এফএম রেডিওর আরজে রা ইংরেজিতে কথা বলুক। তবে রেডিও এবিসি এ দিক থেকে অনেকটা উন্নত। তাদের আরজে রা শুদ্ধ উচ্চারণ করার চেষ্টা করে।
আর অন্যান্য রেডিওর আরজে রা যত বাংলাকে বিকৃত করতে পারে ততই তাদের নিকট মনে হয় ভাল।
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দিতে হবে। অফিস আদালতে বাংলার প্রচলত করতে হবে। ইংরেজি শিখতে হবে । ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
এসব সঠিক কথা। কিন্তু বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়। আসুন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করি। বাংলা সাহিত্য চর্চার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা সময়ের দাবী। আজ এ পর্যন্তই.............।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।