বাংলাদেশ বনাম পাকিস্থানের খেলার শেষের দিকে যখন বাসে করে বাসায় ফিরছিলাম তখন একদল ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ (!)-এর পাল্লায় পড়লাম। তাদের একটাই কথা আশরাফুলকে কেন দলে নিল। আমার তখন মনে পড়ল কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আশরাফুল যে অতিমানবীয় ইনিংসটি খেলে ছিল তখন এই বিশেষজ্ঞরাই ওকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা খেলোয়ারের মর্যাদা দিয়েছিলো। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে আশরাফুলের ভক্ত নই, কিন্তু আশরাফুলের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে তা মেনে নিতে পারছি না।
আমরা সবাই সবাই সব সময় শুনে আসছি আশরাফুল বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়ার! কিন্তু কেন ??? বাংলাদেশ দলে শুরু এখন পর্যন্ত যত খেলোয়ার এসেছে তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক খেলোয়ার আছে যারা গুড লেংথ, শর্ট পিচ, ওভার পিচ, ইন সুইং, আউট সুইং, স্পিনসহ সব ধরনের বল উইকেটের সবদিকে (বল বুঝে) খেলতে সক্ষম।
এরা হল সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ আশরাফুল। এরা সব ধরনের শট (কাট, ড্রাইভ,পুল, হুক, গ্লান্স, স্কুইপ প্যাডল,সুইপ,রিভার্স সুইপ, ডাউন দ্য উইকেট…) খেলতে সক্ষম।
ক্রিকেটকে বলা হয় মেন্টাল গেইম। এখানে ইম্পোভাইজেশন বলে একটা কথা আছে। এই কথাটি ব্যবহার করা হয় যখন কোন ব্যাটসম্যান একটা ভাল বল থেকেও তার মেধা ব্যবহার করে রান বের করে নেবে।
এই গুণটি (আশরাফুলের ক্ষেত্রে দোষ) পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকজন খেলোয়ারের মধ্যে বিদ্যমান। তামিম পাওয়ার স্ট্রোক খেলে বলে ইম্পোভাইজেশনের প্রয়োজন হয় না। সাকিব কিন্তু এক্ষেত্রে একটি এসেট। কারন সে একই সাথে পাওয়ার শট ও ইম্পোভাজেশন দুটিতেই পারদর্শী। কিন্তু ইম্পোভাজেশনের প্রশ্ন আসলে এক্ষেত্রে আশরাফুলের ধারে কাছে বাংলাদেশের কোন খেলোয়ার নেই।
সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডকে বলা হয় পৃথিবীর সেরা ক্রিকেট বোর্ড। আর এবি ডিভিলিয়ার্স বর্তমানে পৃথিবীর সেরা দুজন ব্যাটসম্যানের মধ্যে একজন। গ্যারি কার্স্টেন অবসর নেয়ার পর তার স্থান পূরণ করার জন্য ডিভিলিয়ার্সকে ওপেনিং এ খেলানো হত। আমার যতদূর মনে পরে তখন বেশিরভাগ খেলাতেই সে ৩০ রানও করতে পারত না। তাই বলে সাউথ আফ্রিকান নির্বাচকরা তাকে ছাটাই করেন নি।
তাকে একের পর এক ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যার ফল আজ সবাই জানে।
( Click This Link )
উপরের দৃষ্টান্তটি কেন দেয়া হল কারো না বোঝার কোন কারন নেই। আশরাফুল কেন ধারাবাহিক হতে পারছে না তার প্রধান কারন দুশ্চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়। ক্রিকেট খেলায় পৃথিবীর কোন খেলোয়ারই ১০০ ভাগ ধারাবাহিক নয়।
তবে আশরাফুল একটু বেশিই অধারাবাহিক। আমার মনে হয় ওকে নিশ্চিন্তে খেলতে দেয়া উচিত ওর স্বাভাবিক খেলা। ওকে যদি বলা হয় তোমাকে একটানা কমপক্ষে ১০টি ম্যাচ খেলতে দেয়া হবে, এক ম্যাচ খারাপ খেললেই বাদ দেয়া হবে না, সেক্ষেত্রে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ও ১০ টার ৫টাতেই ভাল খেলবে। দলের জন্য সেটাই যথেষ্ট। আশরাফুলকে যতটা চাপের মধ্যে খেলতে হয় আমার মনে হয় সে পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করলে হিলিয়াম গ্যাসও তরল হয়ে যাবে।
তাই সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে আশরাফুলকে বলির পাঠা না বানানোর। আর একটু ধৈর্য ধরে আশরাফুলকে সমর্থন দিতে হবে। একটা মেধাকে তো আর হেলায় নষ্ট করা যায় না
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।