ঈদের আগে ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা)’ ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাজারের শতভাগ সেমাইয়ে ফরমালিন রয়েছে, এমনকি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত সেমাইও এ থেকে বাদ নেই।
পণ্য বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে ব্যবহৃত এই ফরমালিন মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর প্রভাবে ক্যান্সারসহ কিডনি ও লিভারের নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে চিকিৎসকরা বলছেন।
পবা পরীক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের সেমাইয়ে ৩০ পিপিএম পর্যন্ত ফরমালিনের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে।
পরিবেশবাদী এই সংগঠনের সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুস সোবহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটদের দোকান খেকে নমুনা সংগ্রহ করে আমাদের কার্যালয়ে টেস্ট করে এ ফলাফল পেয়েছি।
”
গত ১৫ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত নিউ মার্কেট, কলাবাগান, চকবাজার এবং বেগম বাজার থেকে বিভিন্ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাকেটজাত ও খোলা সেমাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালায় পবা।
সোবহান বলেন, খোলা সেমাইয়ে ফরমালিনের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকলেও লাচ্ছা ও ভার্মিসিলি সেমাইতে তা আশঙ্কাজনক পরিমাণে বিদ্যামান।
“অথচ দেশে খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহারের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ফরমালিন ব্যবহারের কোনো স্ট্যান্ডার্ড দেয়নি। ”
খাদ্যপণ্যে ফরমালিনের ব্যবহার ঠেকাতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজার তদারক ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করলেও তা রোধ করা যাচ্ছে না।
এই ফরমালিনের উৎস নিয়েও সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় প্রশ্ন তোলেন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের। তার সন্দেহ, অবৈধভাবে দেশে আসছে এই রাসায়নিক।
মন্ত্রী জানান, গত বছরের নভেম্বর থেকে তারা কোনো সংস্থাকে ফরমালিন আমদানির অনুমোদন দেননি।
পবার পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি মাত্রার ফরমালিন পাওয়া গেছে ড্যানিশ লাচ্ছা সেমাইয়ে, এর পরিমাণ ২৯ দশমিক ৮৩ পিপিএম।
বনফুল লাচ্ছা সেমাইয়ে ২৯ দশমিক ২৪, স্কয়ারের রাঁধুনী ভার্মিসিলি লাচ্ছা সেমাইতে ২৯ দশমিক ১০, প্রাণ লাচ্ছা সেমাইয়ে ২৭.৬, কুলসন লাচ্ছা সেমাইয়ে ২৫ দশমিক ৭৭, কুলসন স্পেশাল লাচ্ছা সেমাইয়ে ২৫ দশমিক ১৫, ড্যানিশ স্পেশাল লাচ্ছা সেমাইয়ে ২৬ দশমিক ০৩ পিপিএম ফরমালিনের উপস্থিতি পেয়েছে পবা।
এছাড়া এসিআই পিওর সেমাইয়ে ৩ দশমিক ৯১, আলাউদ্দিন চিকন সেমাইয়ে ৪ দশমিক ৪ দশমিক ৪১ পিপিএম ফরমালিন পাওয়া গেছে বলে পবার প্রতিবেদনে বলা হয়।
তবে পবার এই পরীক্ষার ফল নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ স্কয়ার কনজুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, যাদের রাঁধুনী সেমাইয়ে ফরমালিন পেয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনটি।
স্কয়ারের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপক মো. শেহাব বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ভার্মিসিলি স্টিক সেমাই তৈরির যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তাতে ফরমালিন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। ”
“আমরা কোনোভাবেই ফরমালিন ব্যবহার করি না এবং যে কোনো ধরনের ক্ষতিকর পদার্থের কার্যকারিতা নষ্ট করতে ২৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার ওভেন ব্যবহার করি। ”
তারপরও যে অভিযোগ পবা তুলেছে, তার সত্যতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে শেহাব জানান।
তবে পবার পরীক্ষার সঙ্গে একমত পোষণ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারের প্রচলিত সব ধরনের সেমাইয়ে ফরমালিন পাওয়ার অভিযোগ আমরা নিয়মিত পাচ্ছি। ”
তাই বাজারে অধিদপ্তরের অভিযান আরো জোরদার করবেন বলে জানান তিনি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত ৩১ জুলাই এক পরীক্ষায় প্রিন্স লাচ্ছা সেমাইয়ে ফরমালিন পেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করে।
আবুল হোসেন বলেন, “বৃহস্পতিবারও নাসিম এগ্রো ফুডের সেমাই কারখানায় ‘টেক্সটাইল ডাইং’ ব্যবহারের প্রমাণ পাই এবং জরিমানা করেছি। ”
পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) প্রত্যায়ন অনুবিভাগের পরিচালক কমল প্রসাদ দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেমাইয়ে ফরমালিন ব্যবহারের কোনো আবশ্যকতা নেই।
পবার প্রতিবেদনকে ‘আতঙ্কজনক’ অভিহিত করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা করে ফলাফল অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে এবং প্রয়োজনে পণ্যের প্রত্যায়ন বাতিল করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।