মাইটোকন্ড্রিয়াল ইভ হচ্ছে এমন একজন নারী পৃথিবীর প্রত্যেক জীবিত মানুষ যার সরাসরি উত্তরসূরী। জিনবিদদের মতে, এরকম আরো বহু সাধারণ উত্তরসূরী রয়েছে মানবজাতির। কিন্তু মানবজাতির ইতিহাসে মাইটোকন্ড্রিয়াল ইভের গুরুত্ব অন্য কমন এনসেস্টরদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।
যখন একজন মানুষ জন্মায়, তার শরীরে বাবা-মা উভয় দিক হতে আগত জিনই বিদ্যমান থাকে। মানবভ্রুণের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের ২৩ টি মা হতে আর বাকি ২৩ টি বাবার কাছ থেকে আসে।
এই ক্রোমোজোমগুলোর মধ্যে জিনের আদান প্রদান ঘটে। এরপর এই ৪৬ টি থেকে ২৩ টি পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তর হয়। আপনার শরীরের ক্রোমোসোমের কোন জিনটি বাবার আর কোনটি মার কাছ থেকে এসেছে তা শুধু আপনার জিন পরীক্ষা করে বলে দেয়া দুরূহ (এক্স আর ওয়াই ক্রোমোসোমের ক্ষেত্র ছাড়া)। সেজন্য আপনার বাবা, মা এর জিন ও পরীক্ষা করতে হবে।
ক্রোমোসোমের বাইরেও আরেকটি ডিএনএ অনু রয়েছে মানবদেহে।
আর সেটা হলো মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ। মাইটোকন্ড্রিয়াকে বলা হয় কোষের পাওয়ার হাউস। এটার সাহায্যেই খাদ্য-পানীয় হতে শক্তি তৈরী করে আমাদের কোষ। আর এই মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে রয়েছে একটি ডিএনএ। এই ডিএনএ তে বাবার কোন ভুমিকা নেই, পুরোটাই মা থেকে আগত।
অর্থাৎ আমাদের শরীরের এই ডিএনএটি মা, নানী, নানীর মা, নানীর নানী এভাবে আমাদের দেহে এসেছে।
এই মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ এর মিল থেকে মানুষের মাতৃতান্ত্রিক সাধারণ পূর্বপুরুষ নির্ধারণ করা যায়। মিউটেশনের গতি এবং দুজন মানুষের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ এর পার্থক্য থেকে বোঝা যায়, কত প্রজন্ম/বছর আগে তাদের একজন মাতৃতান্ত্রিক সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই অ্যানালাইসিস থেকে দেখা যায় প্রায় দুলক্ষ বছর আগে এমন একজন নারী ছিলেন, যার শরীরের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ টিই বিভিন্ন বিবর্তিত রূপে আজ পৃথিবীর সকলের দেহে বিদ্যমান। বাইবেলের গল্প অনুসরণে বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন মাইটোকন্ড্রিয়াল ইভ।
তবে, ঐ সময়ে তিনিই একমাত্র নারী ছিলেন না পৃথিবীতে। অন্য নারীদের মাতৃতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ায় তার ডিএনএটিই টিকে রয়েছে। আর তার আগে/পড়ে আরো বহু লোকই সমগ্র মানবজাতির সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিলেন। কিন্তু মাতৃতান্ত্রিক ধারা অনুসরণে অনুসন্ধান করলে মাইটোকন্ড্রিয়াল ইভ ই সবচেয়ে সাম্প্রতিক সাধারণ পূর্বপুরুষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।