আসুন জানি মহাসত্যের পরিচয়
বিশ্বব্যাপী এটা স্বীকৃত যে ব্যাংকিং ব্যাবস্থা সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বা ধণী দরিদ্রের ব্যাবধান বৃদ্ধি করে। প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক চিন্তা চেতনা থেকে তৈরী বলে, যেকোন উপায়ে বৃহৎ পুঁজি সৃস্টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু ইসলমী অর্থনীতিতে বা স্বাভাবিক নৈতিকতার দৃস্টিতে এটা কিছুতেই গ্রহনযোগ্য নয়। তাই ইসলামী ব্যাকিং এর জন্য অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃস্টি বা ধনীদরিদ্রের ব্যাবধান বৃদ্ধিতে সহায়তা করা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।
ব্যাংকিং ব্যাবস্থা কিভাবে অনৈতিক বৈষম্য তৈরী করে সেটা বোঝার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
ধরুন আমি আপনাকে একটা ব্যাবসার প্রস্তাব দিলাম। ব্যাবসায় মোট বিনিয়োগ হবে ১০০ টাকা, যার মধ্যে আমি দেব ৩০ টাকা আর আপনি দেবেন ৭০ টাকা। ঐ ব্যাবসা থেকে আয় করে আমি আপনার পুঁজি কিছু লাভসহ ফেরত দেব এবং আমি পুরো ব্যাবসার মালিক হয়ে যাব। - আপনি, বা কোন বিবেক বুদ্ধি সম্পণ্য মানুষ কি এই প্রস্তাবে রাজি হবে?
অথবা ধরুন কোন নাবালক বা সরলসোজা মানুষের টাকা নিয়ে যদি কেউ এইরকম কাজ করে অর্থাৎ ব্যাবসার আয় থেকে পুঁজি ফেরত দিয়ে পুরো ব্যাবসার মালিক হয়ে বসে - তাহলে নৈতিকতা বা আইনগত কোন দিক দিয়েই কি সেটা বৈধ হবে?? নিশ্চয়ই নয়।
অথচ ব্যাংকিং ব্যাবস্থার মাধ্যমে ঠিক এই কাজটাই করা হয়।
উদ্যোক্তা ব্যাবসায়ী নিজের ২০-৩০ টাকার পুঁজির সাথে ব্যাংক থেকে ৭০-৮০ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাবসা করে। তারপর সেই ব্যাবসার মুনাফা থেকে ব্যাংকের ঋণ সুদসহ ফেরত দিয়ে নিজেই পুরো ব্যাবসার মালিকান হয়ে যায়। আর ব্যাংকের টাকা আসে বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীর কাছ থেকে যারা অতি সামান্য সুদ পেয়ে থাকে।
হ্যা, এখানে ব্যাবসায়ীকে লোকসানের পুরো ঝুকিটাও নিতে হয়। যদি ব্যাবসায় লোকসান হয়, তাহলে সুদসহ ব্যাংকের পুঁজি ফেরত দিতে গিয়ে ব্যাবসায়ীকে দেউলিয়া হতে হয়।
ব্যাংকিং ব্যাবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্ণীতির মাধ্যমে যেসকল অনিয়ম/অনৈতিক কাজ হয়, সেগুলোকে বাদ দিয়ে আমরা যদি একেবারে বিশুদ্ধ লেনদেনের কথাও বিবেচনা করি তাহলেও দেখব এই ব্যাবস্থা অতি অল্প সময়ে অতি অল্প সংখ্যক মানুষের হতে বিপুল সম্পদ পুঞ্জিভুত করার মুল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। ফলে ধনী দরিদ্রের ব্যাবধান দ্রুত বৃদ্ধি পায় - যা অন্যসব সামাজিক অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতনের প্রধান কারণ।
আমরা উপরের উদাহরণে দেখেছি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাবসা করে যদি সফল হওয়া যায় তাহলে অতি অল্প সময়ে ২০-৩০% মালিকানা থেকে পুরো ব্যাবসার মালিক হওয়া যায়। আবার ব্যার্থ হলে অতি দ্রুত দেউলিয়া হতে হয়। ব্যাংক তার পুঁজির নিরাপত্তার জন্য দরিদ্র মানুষকে কখনই বড় অংকের ঋণ দেয় না।
ব্যাংকের ঋণ সবসময় তুলনামুলক ভাবে ধনীরাই পায়। ধরি একটা সমাজে প্রাথমিক ভাবে ১০% মানুষ ঋণ পাওয়ার উপযোগী ছিল। তারা ঋণ নিয়ে ব্যাবসা-শিল্প-কল-কারখানা তৈরীর উদ্যোগ নিল। যদি তাদের মধ্য ৬% সফল হয় আর ৪% ব্যার্থ হয় তাহলে কিছু দিন পর দেখা যাবে ঐ ৬% এর সম্পদ কয়েকগুন বেড়ে গেছে ( ৩০% থেকে ১০০%) আর ৪% নি:স্ব হয়ে গেছে। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা ১০% থেকে ৬% এ নেমে আসবে।
একই ভাবে এই ৬% যখন ঋণ নেবে তাদের মধ্যে কিছু মানুষ সফল হয়ে আরো কয়েকগুণ বেশী সম্পদের মালিক হবে আর কিছু মানুষ ব্যার্থ হয়ে দরিদ্র হয়ে যাবে। এভাবে ক্রমান্ময়ে অতি অল্প সংখ্যক মানুষের হাতে ঐ সমাজের অধিকাংশ সম্পদ পুঞ্জিভুত হয়ে পরবে।
ঐ সমাজের বাকি ৯০% মানুষের মধ্যে যারা ব্যাংকে সঞ্চয় করারমত সার্থবান ছিল তারা ব্যাংক থেকে কিছু সুদ পাবে বটে কিন্তু তা মুদ্রাস্ফিতির চেয়ে কম হওয়ায় তাদের সস্পদের মুল্যমান কমতে থাকবে। আর যারা ব্যাংকে সঞ্চয়ও করতে পারেনি সেই নিম্ন শ্রেণীর মানুষের সম্পদের মুল্যমান কমবে আরো দ্রুততার সাথে ( যেহেতু তারা কোন সুদও পাবে না )। চুড়ান্ত ভাবে ব্যাংকিং ব্যাবস্থার অধিনে পরিচালিত যেকোন সমাজে অতি অল্প সংখ্যক মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ আর বৃহত্তর জনগোষ্ঠির দরিদ্র হয়ে যাওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নাই।
কিছুদিন আগে প্রকাশিত এটা রিপোর্টে বলা হয়েছে বর্তমানে বিশ্বের সম্পদশালী ৮৫ মানুষের হতে যা সম্পদ আছে তা অর্ধেক জনগোষ্ঠি (প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি ) মানুষের মোট সম্পদের চেয়ে বেশী। এটা কি স্বাভাবিক ভাবে হতে পারে? ঐ লোকগুলির যোগ্যতা-দক্ষতা কি আসলেই এত বেশী? মোটেই নয় - এটা হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যাবস্থার ধোকাবাজীর ফল।
সুদি ব্যাংকের জন্য এটাই স্বাভাবিক - কিন্তু ইসলামী ব্যাংকিং কি এই অনৈতিক কার্যক্রম থেকে মুক্ত? মোটেই নয়। আর তার চেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে এই ইসলমী ব্যাংকিং ব্যাবস্থার উদ্ভাবক ও পরিচালকগন এই সমস্যাটির ব্যাপারে মোটেই সচেতন নন। ওনারা কেবল প্রত্যক্ষ্য সুদ থেকে বাঁচার জন্য সরাসরি টাকার পরিবর্তে পণ্য বিনিয়মের ব্যাবস্থা নিয়েই সন্তুস্ট।
কিন্তু ব্যাবসায়ীকে ৭০টাকার পুঁজি ক্যাশে না দিয়ে কাচামাল, মেসিনারীজ, জমি, ভবন কিনে/বানিয়ে দিলেই কি অন্যায় ভাবে সম্পদ পুঁঞ্জিভুত হওয়ার এই ভয়াবহ প্রকৃয়া প্রতিরোধ করা যাবে??
_________________________________________________
ইসলামী জীবনবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মহাসত্যের পরিচয় সাইটে প্রকাশিত সবগুলি লেখা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।