আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোয়েটার



দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২টা। আব্বা এখনো ঢাকা থেকে ফিরলেন না। সেই সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করছি। অপেক্ষার প্রহর বড় তিক্ত। স্বপ্ন বুঝি অধরাই থেকে যাচ্ছে- এই হতাশায় আমার ছোট বুকটা ব্যাথায় টন টন করছে।

গলায় কী যেন একটা আটকে গেছে। চোখ দুটো ততক্ষণে টলোমলো পদ্ম পুকুর। আমাদের ডাইনিং কাম পড়ার টেবিলে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবো না। আম্মা কোলে করে বিছানায় আমায় শুইয়ে দিয়েছেন হয়তো। --------------------- ১৯৯৮ কি ৯৯ এর পৌষ মাস।

গ্রামে তখন প্রচণ্ড শীত। কিন্তু আমি শীতের পোশাক ছাড়াই বাইরে যাই। এবার বায়না ধরেছি আমাকে নতুন সোয়েটার কিনে দিতে হবে, নয়তো কোন শীতের জামা পড়বো না। ক্লাসের কোন এক সহপাঠীর নতুন সোয়েটার দেখেই এই আবদার। তবে আব্বাকে সরাসরি বলতে সাহস ছিল না।

তিনি ছিলেন রাশভারি লোক। আমরা ভাইবোনেরা তাকে খুব ভয় পেতাম। তাই আম্মার মাধ্যমে ব্যাপারটা আব্বার কান পর্যন্ত পৌঁছানো হল। অনুমান করি, আব্বা মেঝ ছেলের আবদারের কথা শুনে হ্যাঁ বা না সূচক কিছুই বলেননি। আব্বার নিরবতাকে সম্মতি ধরে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছি।

অবশেষে আব্বা তার প্রতিষ্ঠানের কাজে ঢাকা গেলেন। ---------------------- সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বা অজু করছেন। আমি এই ফাঁকে সোয়েটারটা খুঁজছি। ধরেই নিয়েছি তিনি সোয়েটার এনেছেন। কিন্তু কোথাও পাচিছ না।

অবশ্য বেশিক্ষণ খুঁজতে পারিনি। আব্বার তাড়ায় মসজিদে যেতে হলো। নামাজ পড়ে এসে দেখি সেঝো আপা একটা নতুন সোয়েটার হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে। গাঢ় খয়েরি রঙের জামাটার সামনের অংশে বিভিন্ন রঙের অনেকগুলো ছোট ছোট চারকোনা বক্স আকৃতির ডিজাইন। খুব পছন্দ হয়ে গেলো জামাটা।

----------------------- সেই জামাটা এখন আর নেই। আব্বাও হারিয়ে গেছেন। সোয়েটারের চারকোনা আকৃতির বক্সগুলি এখনো চোখে ভাসে। যেন একটা ছবির অ্যালবাম। সবগুলো ছবিই অস্পষ্ট, ধোয়াটে লাগে।

শুধু একটা ছবিই স্পষ্ট, চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে। আব্বার রাশভারি চেহারাটা এখন অনেক হাসিখুশি মনে হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।