আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুব ভালো লাগলো 'অপুর সংসার'

পিনপতন নিস্তধ্বতা

বিভূতিভূষন বন্দোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার সিনেমাটা দেখা শেষ করলাম। দারুন লাগলো। অসাধারণ ছবির লোকেশন। সাদা কালোতেও চমৎকারভাবে গল্পটাকে ফুটিয়ে তুলেছেন সত্যজিৎ। আর সেই সাথে অপূর্বের চরিত্রে সৌমিত্র চট্ট্যোপাধ্যায় অসাধারণ।

সত্যিকারের নায়ক যাকে বলে। দেখলেই পর্দায় চোখ আটকে যায়। সে চোখ আর ফেরানো যায়না। অপর্ণা চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুর অপ্রতিদ্বন্দ্বি। স্বভাবসুলভ অভিনয়।

পুরো সিনেমাটা দর্শককে আটকে রাখে। সিনেমার প্রথমাংশে অপুর লেখালেখি, ছাপোষা জীবন, বকেয়া বাড়িভাড়া। কলকাতায় সদ্য আইএ পাশ একজন যুবক। দেখতে অসাধারণ। একদিন তার কাছের বন্ধু পুলুর সাথে খুলনা মামার বাড়ি বেড়াতে যায় অপু, মামাতো বোন অপর্ণার বিয়ের অনুষ্ঠানে।

এখানে অপর্ণাদের (শর্মিলা ঠাকুর) গ্রামের বাড়িটি এত সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করেছেন সত্যজিৎ, অবাক হতে হয়। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। সেই নদী দিয়ে অবিরাম ছোট বড় নৌকা ভেসেই চলছে, আর বাড়িতে ভেসে আসছে মাঝির দরাজ কন্ঠে গাওয়া গান। আহ! অদ্ভূত! শর্মিলার সাথে যে ছেলের বিয়ে ঠিক হয় বিয়ে করতে আসার পর জানা যায় ছেলে পাগল। অপর্ণার বাবা এ বিয়ে দিতে চাইলেও তার মা বাধ সাধে।

পরে পুলু এবং বাড়ির অন্যন্যদের অনুরোধে অপু, অপর্ণাকে বিয়ে করে এবং কলকাতায় নিয়ে আসে। কলকাতায় অপুর বোহেমিয়ান জীবনকে ভালোবাসার ছকে আনে অপর্ণা। এই চিত্রগুলো অসাধারণভাবে দেখিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। অপুর জানালার ছেড়া পর্দা থেকে নতুন পর্দা এবং জানালায় টবে রাখা গাছ, একটা দৃশ্যই বিবাহিত জীবনের পরিবর্তনটা বুঝিয়ে দেয় স্পষ্ট। এখানে কলকাতায় এসে প্রথম স্বামীর ঘরে ওঠার পর অপর্ণার কান্নার দৃশ্যটা খুবই ভালো লেগেছে।

পর্দার ছেড়া অংশটুকুকে অপর্ণার চোখের জলের সাথে মিশিয়ে পরিচালক এক অদ্ভূত অভিজাত্য তৈরি করেছেন। তারপর অপুর সিগারেটের প্যাকেটে রাখা অপর্ণার চিরকুট খাবার পরে একটা করে কথা দিয়েছো রোমান্টিকতার স্বাদ এনে দিয়েছে পুরোপুরি। অভাব এবং ভালেবাসায় টেনেটুনে ভালো্ই চলছিলো অপুর সংসার। এরপর অপর্ণা দুই মাসের জন্য তাদের বাড়িতে চলে যায়। তখন সে গর্ভবতী।

স্বামীকে ছেড়ে প্রথমবার বাড়ি যাওয়া। ট্রেনের কামড়া থেকে অপর্ণার সপ্তাহে দুটো চিঠি লিখতে বলার আকুতি, ট্রেণের সাথে সাথে অপুর দৌড়ানো পুরো আবেগটাকেই ধারন করেছে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অপর্না মারা যায়। এই আঘাত সহ্য করতে পারেনা অপু। শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে।

অনেকদিন ধরে যত্নে লেখা তার উপন্যাস ছুড়ে ফেলে দেয় সে। অভিমানে ৫ বছর নিজের ছেলে কাজলকেও দেখতে যায়না সে। শুধু মাঝে মাঝে কাজলের নানা বাড়িতে টাকা পাঠায় তার ভরন পোষনের জন্য। ছেলের কাছ থেকে নিজেকে আড়ালে রাখার কারন সে পুলুর কাছে বলে যে কাজল আছে বলেই অপর্ণা নেই, এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। তবুও নিজের ছেলে বলে কথা।

পুলুর কাছে নিজের ছেলের কথা শুনে তাকে দেখতে অপর্ণাদের বাড়িতে যায় অপু। কাজল প্রথমে বাবাকে মেনে নেয়না সহজভাবে। অপু যখন তাকে বলে আমি তোমার বাবা তখন ছোট্ট ছেলে ইট ছুড়ে মারে বাবার দিকে। কিছুদিন পর অপু বিদায় নিয়ে চলে যাবার সময় পেছনে তাকিয়ে দেখে কাজল দাড়িয়ে আছে। তারপর কাজলকে কাধে উঠিয়ে বাপ বেটা হাসিমুখে কলকাতার দিকে.... এভাবেই শেষ হয় অপুর সংসার।

সময় সুযোগ পেলে দেখবেন। আশা করি দারুন লাগবে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।