আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন ফসলি জমিতে 'বিনা' উপকেন্দ্র!



চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন ফসলি জমি অধিগ্রহন করে বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (বিনা) আঞ্চলিক উপকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহনের জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জমির মালিকরা। তাদের দাবি পাশেই একটি খাস জমি থাকা সত্ত্বেও তিন ফসলি ওই জমিতেই উপকেন্দ্রের জন্য নির্ধারন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নে নয়ানগর মৌজার জে এল নং ৮৭ তে ২৪ জনের ব্যক্তিমালিকানাধীন ৮ একর জমির অধিগ্রহন করে সেখানে বিনা’র উপকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বিনা’র একাধিক বিশেষজ্ঞ দল স্থানটি পরিদর্শন করে উপযুক্ত বলে নির্ধারন করেছে। এরপরই জমি অধিগ্রহনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, যেহেতু আট একর সম্পত্তি বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) এর উপকেন্দ্র নির্মান কল্পে জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে এবং জনস্বার্থের প্রয়োজন হতে পারে, সেহেতু ১৯৮৫ সালের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহন ও হুকুম দখল অধ্যাদেশের (১৯৮২ সালের ২ নং অধ্যাদেশ) ৩ ধারায় বর্ণিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগিতর জন্য নোটিশ জারি করা হল যে, উক্ত সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে স্বার্থবান যে কোনো ব্যক্তি নোটিশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে প্রস্তাবিত অধিগ্রহনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে আপত্তি দায়ের করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করা হয়। নোটিশে বর্ণিত অধিগ্রহনের প্রস্তাবিত জমির তফশীল হচ্ছে- ২ নং খতিয়ানের ৫৭ নং দাগে ০.০৯ একর, ১১ নং খতিয়ানের ৫ নং দাগে ০.২১ একর, ৩৫ নং দাগে ০.০৩ একর, ২১ নং খতিয়ানের ৩৪ নং দাগে ০.৪৬ একর, ৩০ নং খতিয়ানে ৪৭ নং দাগে ০.৪০ একর, ৩১ নং খতিয়ানের ২৮ নং দাগে ০.০৪ একর, ৩৬ নং খতিয়ানের ৪১ নং দাগে ০.০৯ একর, ৪৩ নং দাগে ০.১৬ একর, ৪৫ নং দাগে ০.৪২ একর, ৪৭ নং খতিয়ানের ৩১ নং ০.৪৪ একর, ৩৩ নং দাগে ১.৪৪ একর, ৩৬ নং দাগে ১.৩৪ একর, ৫৬ নং খতিয়ানের ৩৭ নং দাগে ০.০৮ একর, ৩৮ নং দাগে ০.৮২ একর, ৩৯ নং দাগে ০.২৬ একর, ৫৭ নং খতিয়ানের ৮ নং দাগে ০.০২ একর, ৬১ নং খতিয়ানের ২৬ নং দাগে ০.০১ একর, ৭৪ নং খতিয়ানের ২৯ নং দাগে ০.০৬ একর, ৮৪ নং খতিয়ানের ৩২ নং দাগে ০.৪৫ একর, ৯১ নং খতিয়ানের ৪২ নং দাগে ০.৪২ একর, ৪৪ নং দাগে ০.১০ একর, ৪৬ নং দাগে ০.১৫ একর, ১৬০ নং খতিয়ানে ৪০ নং দাগে ০.৪৬ একর।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত জমিতে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল অংশ নিয়ে গমের আবাদ করা হয়েছে। কিছু অংশে আলু লাগানো হয়েছে। অন্যঅংশে কিছু খালি থাকলেও সেখানে আম গাছ লাগনো আছে। স্থনীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাগেল- এখন যে জমিগুলো খালি আছে সেগুলোতে বোরো ধান লাগানো হবে। কিন্তু অধিগ্রহেনর নোটিশ পেয়ে জমির মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

বোরো লাগাবেন কিনা এ নিয়ে তারা রীতিমত দ্বিধান্বিত। নোটিশ পাওয়ার পর ১৭ জন জমির মালিক অধিগ্রহনে আপত্তি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। নিয়ম অনুযায়ী এ আপত্তির নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জেলা প্রশাসকের কাছে আপত্তি জানালেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ জমির মালিকরা। কথা বললে আবার কোনো সমস্যা হতে পারে এমন শংকা থেকেই তারা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।

তবে অনেক অনুরোধের পর কয়েজন মালিক কথা বলেছেন সোনার দেশ’র সঙ্গে। তবে শর্ত হচ্ছে তাদের নাম প্রকাশ করা যাবেনা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই মাটি তাদের কাছে সোনার মত দামি। কারণ এখানে তারা বছরে তিনটি ফসল আবাদ করতে পারেন। মুলত বোরো, আমন, আউস মৌসুমে এসব জমিতে চাষাবাদ করা হয়।

কেউ বোরো চাষাবাদ না করে গম কিংবা আলুরও চাষ করে থাকেন। তাদের দাবি, এখানকার প্রতিবিঘা জমিতে এক মৌসুমেই ধান পাওয়া যায় ২৭ থেকে ২৯ মন। সে অনুযায়ী এখানকার ৮ একর জমি অধিগ্রহন করা হলে বছরে কমপক্ষে দুই হাজার মন ধান উৎপাদন কমে যাবে। জমির মালিকরা আরো জানান, তাদের জমির পাশে কয়েকটি চাল কল আছে। মিল থেকে নিসৃত ধোয়া ও ছাই গবেষণার কাজ ব্যহত করতে পারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি স¤প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ গুরুপদ কর্মকারও নিশ্চিত করেছেন ওই জমিগুলোতে তিন ফসল হওয়ার কথা। তিনি জানান- অধিগ্রহনের ব্যাপারে অবহিত হয়েছেন। তবে অধিগ্রহনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করার আগে অবশ্যই জেলা প্রশাসক স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে জমির অবস্থা সম্পর্কে তথ্য চাইবেন। তখনো তিন ফসলের কথা তাকে জানানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চাল কলের ছাই গবেষণার কাজ ব্যহত করবেনা, বরং উপকারই হবে।

কারণ ছাই পটাশ সারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তবে ধোয়া পরিবেশ দূষণ করবে। এ থেকে গবেষণার কাজে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক কে এম আলী আজম জানান, নোটিশ জারির পর ১৬ জন জমির মালিক জেলা প্রশাসক বরাবরে আপত্তি জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে তাদের আপত্তির শুনানী শুরু হয়েছে।

সব আপত্তির শুনানী শেষেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে। জেলা প্রশাসকও স্বীকার করেন অধিগ্রহনের জন্য প্রস্তাবিত জমিটি তিন ফসলের।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।