সামুতে অর্থহীন অশুদ্ধ বাংলা ও বাংলিশ শব্দ পরিহার করি
বিশ্বের এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না, যেখানকার মানুষের মধ্যে কুসংস্কার নেই। এই সব কুসংস্কারের কোনোটার ইতিহাস জানা যায়, কোনোটার উৎপত্তির কোনো হদিস নেই। তবে প্রতিটা কুসংস্কারই হাস্যকর এবং অযৌক্তিক।
দৈনন্দিন জীবনে ঘর-সংসারের একটি অপরিহার্য উপকরণ হচ্ছে ঝাড়ু। নিয়মিত ঝাড়ু না দিলে চলে না।
অথচ এ জিনিসটাকে কতই না অবহেলা করা হয়। কুসংস্কারে বিশ্বাসী কারও যাত্রাপথে একবার ঝাড়ু পড়লেই হলো সারাটা পথ উটকো বিপদের আশঙ্কায় দুরু দুরু করবে বুকটা। আর কারও গায়ে যদি ঝাড়ুর আঘাতে লাগে তা সচেতনভাবেই হোক বা অসচেতনভাবেই হোক, কপালেও ঠিক ঝাড়ু লেগে গেল তার। অর্থাৎ কুফার গর্তে পা দিল সে। নাইজেরিয়াও ঝাড়ু নিয়ে এই কুসংস্কার ঝাড়ুর আঘাত খেলে দুর্ভাগ্যের কোপানলে পড়ে যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
আর ঘুম থেকে জেগে যদি কেউ সকাল সকাল ঘরদোর ঝাঁট না দেয়, তাহলে নাকি 'মহা অনাসৃষ্টি' কাণ্ড ঘটে। রাজ্যের যত অশুভ অকল্যাণ এসে বাসা বাঁধে তার ঘরে।
তেলের মতো লবণ নিয়েও কুসংস্কার আছে আমাদের দেশে। লবণ ফেললে নাকি অমঙ্গল হয়। অন্য দেশেও আছে এই কুসংস্কার।
কখনো যদি হাত থেকে লবণের বয়াম বা কৌটো পড়ে যায়, তাহলে অজানা অমঙ্গল থেকে বাঁচতে কুসংস্কার বিশ্বাসীরা এক চিমটি লবণ চট করে ছিটিয়ে দেয় বাঁ কাঁধে।
মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে লবণকে জীবনের অত্যন্ত মূল্যবান অনুষঙ্গ বলে ধরা হতো। এমনকি টাকা বা মুদ্রা হিসেবে লবণের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। কাজেই লবণের অপব্যবহার মানে অমঙ্গলকে ডেকে আনা। এবং অমঙ্গলের বাহন হচ্ছে ময়তা, যার অবস্থান বাঁ কাঁধে।
লবণ পড়ে গেলে শয়তান যাতে কোনো সুযোগ নিতে না পারে, এজন্য তার চোখ দুটো অন্ধ করে দেওয়ার জন্য এক চিমটি লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাঁ কাঁধে। সেকালে ইংরেজ বুড়োরা দাঁতের ব্যথা পশমের জন্য পেরেক পুঁতে দিত গাছে। লোহার আছে রোগব্যাধি সারানোর দৈবশক্তি আর গাছের আছে দুর্ভাগ্যকে তাড়ানোর অদৃশ্য প্রাণশক্তি, এই বিশ্বাস থেকে গাছের গায়ে পেরেক ঠোঁকার কুসংস্কারটির জন্ম। এখনো কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ দুর্ভাগ্যকে হটিয়ে দেয়ার জন্য কাঠের ওপর বিশেষ কিছু পদ্ধতিতে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে।
আমাদের দেশে সাতসকালে উঠেই যদি কেউ এক শালিক দেখে, তাহলে কর্ম কাবার।
অজানা আশঙ্কায় পুরোটা দিন টেনশনে কাটাতে হয় তাকে।
আবার দুই শালিক দেখলে তারই বত্রিশ পার্টি বেরিয়ে পড়ে। প্রাচ্যের কোনো কোনো স্থানে তিন সংখ্যাকেও অপয়া বলে গণ্য করা হয়। বিশেষ করে ছবি তোলার ক্ষেত্রে। সেসব জায়গায় তিনজন মিলে কখনো গ্রুপ ছবি তুলতে চায় তিনজন মিলে কখনো গ্রুপ ছবি তুলতে চায় না।
কারণ এতে তিনজনেরই বিপদের আশঙ্কা থাকে।
মাছ উল্টেছেন কি মরেছেন! এমনকি আপনার জাহাজ পর্যন্ত উল্টে যাবে। এশিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলের নাবিকরা এই কুসংস্কার বিশ্বাসী। সাগরে ভ্রমণরত অবস্থায় মাছ খেতে গিয়ে সব সময় একপাশ থেকে খায় তারা। ভুলেও মাছটি উল্টায় না জাহাজ উল্টে যাবে বলে।
এক পাশ থেকে মাছ খেতে শুরু করে যখন মাঝখানের কাঁটা বেরিয়ে পড়ে, তখন কাঁটাটা সরিয়ে একইভাবে বাকি অংশটাও শেষ করে।
মাকড়সা মারলে পাপ হয়। গ্রিকরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এ কথা। মাকড়সাকে সেদেশের অনেক বাড়িতেই সম্মানিত অতিথির মতো থাকতে দেওয়া হয়। গ্রিকপুরাণে আছে, আরাক্নে নামে এক মেয়ে দেবী এথেনার সঙ্গে বুনন প্রতিযোগিতায় বাজি ধরে জিতে যায়।
এতে দেবী ঈর্ষান্বিত হয়ে আরাক্নেকে মাকড়সা বানিয়ে ফেলেন। পরে এক সময় অপরাধবোধ পেয়ে বসে এথেনাকে। তখন তনি মাকড়সা আরাক্নেকে নিজের হেফাজতে নিয়ে আসেন। এ জন্য গ্রিকরা মনে করে, মাকড়সাকে সযত্নে থাকতে দিলে পুণ্য হয়, আর মেরে ফেললে নেমে আস অভিশাপ।
ঘরের ভেতর ছাতা মেলতে নেই, অমঙ্গল হয়।
আমাদের দেশে অনেকেই মেনে চলে এই কুসংস্কার। তবে অন্য দেশেও চালু আছে এই অন্ধবিশ্বাস। ছাতার কুসংস্কারে বিশ্বাসী পাশ্চাত্যের লোকেরা মনে করে, রোদ-বৃষ্টি ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কাজে ছাতা মেলে ধরলে ছাতার আত্মা ক্ষেপে গিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার তাল খোঁজে।
আইরিশরা রংধনু দেখলে আনন্দে উচ্ছ্ব্বসিত হয়ে ওঠে। রংধনু তাদের কাছে সৌভাগ্যের প্রতীক।
আর যদি রংধনুর এ প্রান্ত থেকে ছুটতে ছুটতে ও প্রান্তে যাওয়া যায় তাহলে নাকি পাওয়া যায় রাশি রাশি সোনার মোহর।
তবে সাবধান, ভুলেও কিন্তু আঙ্গুল তাক করে কাউকে দেখানো যাবে না রংধনু। তাহলে প্রবলবর্ষণ অনিবার্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।