আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
জামায়াত গঠনতন্ত্রের ৬টি ধারা সংশোধন না করে নির্বাচন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছিল। এই ধারাগুলো সংবিধান ও আরপিওর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় আদালত জামায়াতের নিবন্ধনই অবৈধ ঘোষণা করেছে। আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে জামায়াত নির্বাচন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ফলই ভোগ করতে যাচ্ছে। হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে।
এর মাধ্যমে জামায়াত দলগত এবং জোটগতভাবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করার ক্ষমতা হারিয়েছে । এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন মোঃ আবু হাফিজ দৈনিক বর্তমানকে বলেন, জামায়াতের জমা দেয়া গঠনতন্ত্রে ত্রুটিপূর্ণ ছিল, এ কারণে তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে আদালত। আর সিইসি বলেন, রায়ের কপি হাতে পেয়ে দ্রুত দলটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, গত মার্চে গঠনতন্ত্রের সর্বশেষ সংশোধনী পর্যালোচনা করে ৬টি ধারা সংবিধান ও আরপিওবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে ইসি। এরপর কমিশন বৈঠকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এলেও মামলার কারণে নিবন্ধন বহাল রাখে কমিশন।
যেসব ধারার কারণে নিবন্ধন হারাচ্ছে জামায়াত: গত মার্চে সংশোধিত গঠনতন্ত্রে অন্তত ৬টি ধারা সংবিধান ও আরপিও সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে চিহ্নিত করে ইসি। এর মধ্যে মৌলিক আকিদা বিভাগের ২ (৫) ধারায় লেখা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যেও নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও নাই। ’ ২ (২) ধারার বিষয়েও আপত্তি রয়েছে ইসির। ২ (২) ধারায় লেখা হয়েছে, ‘...সকল প্রকার ক্ষমতা ও এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহরই। ’ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অনুচ্ছেদের ধারা ৩-এ লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন।
’ দাওয়াত অনুচ্ছেদের ৫ (৩) ধারায় লেখা হয়েছে, ‘সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েম করিয়া সমাজ হইতে সকল প্রকার জুলুম, শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটানোর আহ্বান। ’ স্থায়ী কর্মসূচি অনুচ্ছেদেও ধারা ৬ (৪)-এ লেখা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে সত্ ও চরিত্রবান লোকের নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা। ’ রোকন হওয়ার শর্তাবলি সম্পর্কে ৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগত জীবনে ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ আদায় করেন এবং কবীরা গুনাহ হইতে বিরত থাকেন। ’ এ ছাড়া দলটি তার গঠনতন্ত্রে বেশকিছু ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে। এর অন্যতম হচ্ছে— ‘সমাজের সর্বস্তরে খোদাভীরু নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা’র বদলে ‘চরিত্রবান নেতৃত্ব’ কথাটি সংযোজন।
কমিশন সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর বিকালে দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রের মুদ্রিত একটি কপি কমিশনে জমা দেন। এতে ২০১২ সালের নভেম্বরে ৪৯তম মুদ্রণ কথাটি উল্লেখ করা হয়। প্রকাশক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের নাম। এর আগে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে ২০১২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুই মাসের সময় চায় জামায়াত। তবে তাদের সে সময় দেয়া হবে কি না সে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই দলটি সেই বছর ৪ ডিসেম্বর গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তার মুদ্রিত কপি কমিশনে জমা দেয়।
এর আগে নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ২ ধারার ৫ উপধারা, ধারা ৩, ৫ ধারার ৩ উপধারা, ৬ ধারার ৪ উপধারা, ৭ ধারার ১ থেকে ৪ উপধারা, ১১ ধারার ২ উপধারা ও ১৮ ধারার ৪ (চ) উপধারা সংশোধনের জন্য তাগিদ দেয়। দলটির নিবন্ধনের সময়ও এসব ধারা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার তখন তাদের গঠনতন্ত্র থেকে কয়েকটি ধারা লাল কালি দিয়ে কেটে দিয়ে তা গঠনতন্ত্রের অংশ নয় মর্মে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু পরে জামায়াতের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ওই বাদ দেয়া বিষয়গুলো রেখে দেয়। Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।