মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালিত হওয়ার এক যুগ পার হওয়ার পর এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশে প্রথমবারের মতো এমন নীতিমালা হতে যাচ্ছে।
আগেরবারের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জিজিএন এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় নিউওয়ে ইত্যাদি নামের এমএলএম কোম্পানির ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল বহু লোক। এর পর থেকে এমএলএম ব্যবসা বন্ধ তো হয়ইনি, বরং নীতিমালা ছাড়াই পরিচালিত হয়ে আসছিল।
কিন্তু গত বছর ইউনিপেটুইউ বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি এমএলএম কোম্পানি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে এক বছরে বিনিয়োগের অর্থ দ্বিগুণ করে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে।
গত বছরের মাঝামাঝি ইউনিপেটুইউর বিষয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এমএলএম নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, এমএলএম নীতিমালার ওপর খসড়া তৈরির কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত কোনো আকার পায়নি। নীতিমালার ব্যাপারে যেসব মতামত এসেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। খসড়া তৈরির পর আরও মতামত নেওয়া হবে এবং আরও যাচাই-বাছাই হবে।
তাই এটি এখনো মন্ত্রী পরিষদে উপস্থাপন করার পর্যায় আসেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এমএলএম কোম্পানিগুলোর অন্যতম ব্যবসা কৌশল হচ্ছে—কোনো না কোনোভাবে সরকারের মন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, এমনকি সাংসদদের জড়িয়ে ফেলা। কিছু এমএলএম কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অতিথি বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বর্তমান সরকারের মন্ত্রী ও সাংসদদেরও দেখা গেছে। আর তাই নীতিমালায় এ ব্যাপারেও শর্তারোপ করার চিন্তা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, নীতিমালায় এমন শর্ত রাখা হতে পারে যে, এমএলএম কোম্পানির কোনো অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী, সাংসদেরা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
কারণ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এমএলএম কোম্পানিগুলো মন্ত্রীদের ব্যবহার করেন এবং বিক্রি করেন। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তোলা মন্ত্রী-সাংসদদের ছবি জনগণের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, তাঁরা যেন এই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আছেন বা এই কোম্পানির কোনো কর্মকাণ্ড অবৈধ নয়। অর্থাৎ নিজেদের অজান্তেই প্রতারণার কাজে ব্যবহূত হয়ে পড়েন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত নীতিমালায় এমএলএম কোম্পানিগুলো যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) কাছে তাদের বিপণন পরিকল্পনা দাখিলের বিধান রাখা হয়েছে। আর সিটি করপোরেশন থেকে নিবন্ধন নেওয়ার সময় এমএলএম কোম্পানি কী পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করবে, বিশদ বিবরণসহ তা উল্লেখ করতে হবে।
নিবন্ধন নেওয়ার সময় কোম্পানিটির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ জানাতে হবে। কোম্পানির ফোন, ফ্যাক্স নম্বর এবং পরিচালক ও কর্মকর্তাদের ভোটার পরিচয়পত্রসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা জানানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে ক্রেতা ও পরিবেশকদের দায়িত্ব-কর্তব্য।
তবে নীতিমালা হওয়ার আগে পর্যন্ত নতুন কোনো কোম্পানিকে এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কাল্পনিক, অলীক বা অবস্তুগত বিষয় নিয়ে এমএলএম ব্যবসায়ের ব্যাপারে খসড়া নীতিমালায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে, বস্তুগত পণ্য নিয়ে যারা ব্যবসা করবে, তাদেরও শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে। ‘সেবা’র বিষয়ে থাকবে সুস্পষ্ট সংজ্ঞা। কী কী সেবা এমএলএম কোম্পানিগুলো বিপণন করতে পারবে, তার নির্দেশনা থাকবে নীতিমালায়।
সূত্র জানায়, এমএলএম কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন, এমএলএম নীতিমালা প্রণয়ন তাঁদেরই দাবি। বছরের পর বছর ধরে দাবি জানিয়ে এলেও সরকার তাঁদের কথায় কর্ণপাত করছিল না।
তাঁদের মতে, নীতিমালা এমএলএম ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে, আবার যেসব কোম্পানি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও সহায়তা করবে।
এমএলএম নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অতিরিক্ত বাণিজ্যসচিব এম মর্তুজা রেজা চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। সেই কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), আরজেএসসি, ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং এমএলএম কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে।
এমএলএম কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসব বৈঠকে বলেছেন, যেসব পণ্যের বাস্তব অবস্থান নেই, সেগুলোও এমএলএম পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
অনেকে দেশে বসে বিদেশে বাড়ির ব্যবসা করছেন বা কাল্পনিক সেবায় অর্থ বিনিয়োগ করছেন। এমনকি বাংলাদেশে কোনো কার্যালয়ও নেই তাঁদের। অথচ কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশে।
বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান সম্প্রতি এমএলএম নীতিমালা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটি এমনভাবে করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারিত না হয়। ’ তিনি কিছু এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথাও স্বীকার করেন।
গত ৯ জানুয়ারি কিছু এমএলএম প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সতর্ক বার্তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে তারা জনগণের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন
সুত্র প্রথমআলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।