বিস্মিল্লাহির রহমানির রাহীম
ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানরা বর্তমান সময়ের মত অবস্থা আর কখনো অতিবাহিত করে নাই। এক সময় পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকাংশ রাজত্ব করার পর ও মুসলমানরা আজ হতদরিদ্র (যদিও কিছু সংখ্যক মুসলমানের হাতে প্রচুর অর্থসম্পদ)। মুসলমনরা এখন ধর্ম সম্বন্ধে উদাসীন। ইসলামিক জ্ঞানের প্রতি অবহেলা, বিজ্ঞ ও সঠিকপন্থী আলেমদের স্বল্পতা, সর্বপরি মুসলমানদের ঢালস্বরুপ যে রাষ্ট্রশক্তি অর্থাৎ খিলাফাত ব্যাবস্থা, তার বিলুপ্ত হওয়ার কারনে আভ্যন্তরিন বা বাহ্যিক ফিত্না-ফাসাদ দমন বা প্রতিবাদ করার কোন ব্যবস্থা আর বাকি নাই। আর এই সুযোগে যে যার মত করে ইসলামের উপর শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
কেউ ব্যাক্তিগত বা দলগতভাবে দাওয়া করার বাহানায়, কেউ ইসলাম থেকে অন-ইসলামিক আচার-আচরন উৎখাত করার বাহানায়, যে যেভাবে পারছে, অভিযান চলছে অত্যন্ত দ্রুত হারে।
ইসলামের প্রথমদিকে রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাললাম ও সাহাবাদের (রাঃ) দলই ছিল একমাত্র দল, তারপর ধীরে ধীরে খারেজি, শীয়া, কদরীয়া, মরজিয়া, মুতাজিলা ইত্যাদি অনেক উপদল সৃস্টি হতে থাকে কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তাদের তেমন কোন প্রভাব আজ বজায় নাই শুধু শীয়া ছাড়া। তবে খারেজিদের মতবাদ ও কৌশল আজও কোন কোন দলের মধ্যে বজায় আছে।
মুসলীম বিশ্বে বর্তমানে তিনটি দল সক্রিয় - সূন্নী, শীয়া ও ওহাবী বা সালাফী দল। বাকিদের তেমন একটা উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা নাই বর্তমান বিশ্বে।
অনেকে জামাতি ইসলামী, দেওবন্দি/তাবলীগ জামাত ও আহ্লে হাদিসদের কথা উল্ল্যেখ করতে পারেন কিন্তু আমি তাদেরকে অঙ্গদল (উপদল) হিসাবে এখানে উল্ল্যেখ করলাম না, সে বিষয়ে পরে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
এক অর্থে সূন্নী কোনও দল না বরং মুসলমানদের মূল দেহ বলা যেতে পারে। রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাললাম বলেছেন "অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ? হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে (মত ও পথের) উপর আমি ও আমার সাহাবারা (রাঃ) রয়েছি ( তার উপর যারা থাকবে তারাই সেই নাজাত প্রাপ্ত দল),"(মুসনাদে আহম্মেদ, আবু দাউদ, মিশকাত শরীফ)।
ওসমানিয়া খিলাফাতের শেষের দিকে ও পতনের পর পরই বেশ কিছু দল ও উপদলের আবির্ভাব হয়েছে।
এদের মধ্যে নজদ (বর্তমান সৌদি আরবের রিয়াদ এলাকা) এলাকার ওহাবী দল, মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিন ও ভারতের কাদিয়ানী দল উল্লেখযোগ্য। ওহাবীরা বর্তমানে সালাফী নামে ও পরিচিত, তাদের বেশ কিছু অঙ্গসংগঠন আছে, আমরা তাদের বিষয়ে এখন আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
সৌদী আরবের ইংরেজী নাম Kingdom of Saudi Arabia (KSA)। বুঝা গেল এটি একটি রাজতান্ত্রীক রাষ্ট্র। ইসলামের প্রানকেন্দ্র মক্কা শরীফ এবং মদিনা শরীফ এই রাজতন্ত্রের দখলে? কবে থেকে এবং কিভাবে এই দখলদারীত্ত্ব শুরু হল সেটা জানতে হলে একটু পিছনের ইতিহাস দেখা দরকার
সৌদী আরবে দুইটি পরিবারের সমন্বয়ে রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় শাসন চলছে।
একটি মোহাম্মদ বিন সৌদের পরিবার, রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার দায়িত্বে আরেকটি মোহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের পরিবার ধর্মীয় বিষয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত।
"মোহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের আবির্ভাবের পূর্বে সৌদ পরিবার ছিল আর-দশটা গোত্র প্রধানদের মতই সাধারন। জীবন ধারনের আয়ের উৎস ছিল খেজুর চাষ, টুকিটাকি ব্যবসা ও ঘোড়ার খামার। নিজেদের একটু শক্তিশালী মনে করলে অন্যান্য বেদুইন গোত্রের সাথে মিলে বাইরের কোনো এলাকায় অভিযান চালাত আর দূর্বল পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে সংকোচিত করে এলাকাই থাকত। সংযমী, স্বাধীন, কিন্তু সাম্রাজ্য দখল বা বর্হিবিশ্বে পরিচিতি পাওয়ার মত কোন যোগ্যতা ছিল না, শেখের সাথে (মোহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের) আতাত বা চুক্তি সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত।
Lacy, Robert. The Kingdom: Arabia & the House of Sa`ud . p. 59"
এই সেই শেখ নজদি (১৭০৩-১৭৯২), বর্তমান সৌদী আরবের অন্তর্গত নজদ এলাকার উয়াইনা অঞ্চলে জন্ম। বংশীয় গোত্রের নাম "বনি তামিম"। বর্তমান ওহাবী বা সালাফী দলের প্রতিষ্ঠাতা। এমন কি রত্ন নিয়ে হাযির হয়েছিলেন , যার মাধ্যমে বর্তমান রাজত্ব দখল করলেন?
চলবে ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।