মো: আরিফুর রহমানবগুড়া
রিপোর্টার
রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড ও বনানীতে এক মহিলাসহ চারজনকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ গতকাল ইন্দিরা রোডের নিজ বাড়ি থেকে গৃহকর্ত্রী ভার্জিনিয়া রোজারিও (৬৫) ও তার ছেলে ভ্যালেন্টাইন রোজারিও মিল্টনের (২৮) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। মিল্টনের হাত-পা শিকল দিয়ে বাঁধা ছিল। তার মা ভার্জিনিয়ার লাশ চাদর দিয়ে পেঁচানো এবং মাফলার দিয়ে মুখ বাঁধা ছিল। স্বামী জন রোজারিও মৃত্যুর আগে নিহত ভার্জিনিয়ার নামে ইন্দিরা রোডের ১৬/এফ নম্বর চারতলা ভবনটি উইল করে দিয়ে গেছেন বলে পুলিশ জানায়।
ওদিকে রাজধানীর গুলশান থানাধীন বনানীর একটি ডোবা থেকে গতকাল দুপুরে দুই যুবকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুটি লাশের মুখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। নিহতদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর হবে বলে পুলিশ জানায়। তাদের লাশে পচন ধরেছে। ২/৩ দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
শেরেবাংলা নগর থানার থানার ডিউটি অফিসার এসআই সাদেকুল জানান, মা ও ছেলেকে ইন্দিরা রোডের বাড়িতেই জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তারা চারতলা ভবনের মালিক। বাড়ির ওপর তলার বেশিরভাগ ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। বাড়ির নিচতলায় মা ও মেয়ে থাকতেন। বাসার বেডরুমে হাত-পা শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় ভ্যালেন্টাইন রোজারিও মিল্টনের লাশ।
বাসার ড্রয়িং রুমের মেঝেতে চাদর পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া যায় তার মা ভার্জিনিয়া রোজারিওর রক্তাক্ত লাশ। তার মুখ মাফলার দিয়ে বাঁধা ছিল।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি রিয়াজ রহমান জানান, বাসার গৃহকর্মী দুপুরে লাশ দেখে নিরাপত্তারক্ষীকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সকালেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওসি আরও জানান, বাসার এক নিরাপত্তাকর্মী সকালে মিল্টনের এক বন্ধুকে বাসা থেকে দ্রুত বেরিয়ে মোটরসাইকেলে চলে যেতে দেখেছেন।
তাকে খোঁজা হচ্ছে বলে ওসি জানান। কেন এই হত্যাকাণ্ড সেই কারণ খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। হত্যাকারীরা বাসা থেকে কোনো কিছু নিয়ে গেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ওসি জানান।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আবদুল জলিল জানান, গতকাল দুপুরে বাসার গৃহকর্মী দরজা খুলে ড্রয়িং রুমের মেঝেতে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে বলে তাকে জানান। তিনি প্রতিবেশীদের জানালে তারা পুলিশে খবর দেয়।
তিনি আরও জানান, মিল্টনের বন্ধুরা প্রায়ই বাসায় আসতো। মিল্টন প্রতিদিনই গভীর রাতে বাসায় ফিরতো। তার বাবা জন রোজারিও কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে বাড়িটি মিল্টনের মায়ের নামে লিখে (উইল করে) দিয়ে গেছেন।
এলাকাবাসী জানান, চারতলা এ বাড়ির মালিক মিল্টন ও তার মা।
বাড়িটি দখল করার জন্য কেউ পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে। লাশ দেখে এলাকাবাসীর মনে হয়েছে পেশাদার খুনি দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। মিল্টনের ছেলে ও মেয়ে বন্ধুরা তাদের বাসায় প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা দিতো। এলাকাবাসীর ধারণা, এ হত্যাকাণ্ডে মিল্টনের বন্ধুদের হাত থাকতে পারে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল রাতে থানার ডিউটি অফিসার এসআই সাদেকুল জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তবে একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।
এদিকে গুলশান থানার ডিউটি অফিসার এসআই মাকসুদ জানান, বনানীর ২৭ নম্বর রোডের কবরস্থান সংলগ্ন ডোবা থেকে অজ্ঞাত দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, তাদেরকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
গুলশান থানার ওসি কামালউদ্দিন জানান, এলাকাবাসীর কাছে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে। দুটি লাশেই পচন ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সপ্তাহখানেক আগে তাদের অন্য কোথাও হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে গেছে ঘাতকরা। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।