আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টাকা পেলেই নাবিকদের ছেড়ে দেবে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।



"জিম্মিদশা থেকে দেশে ফিরলেন গিয়াস" আট মাস ধরেই কাঁদছেন তাঁরা। গতকাল শনিবার তাঁদের সঙ্গে কাঁদলেন স্বজনেরাও। তবে এ ছিল আনন্দের কান্না। কারণ ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা আদরের সন্তান গিয়াসউদ্দিন আজম খান যে আট মাস পর মা-বাবার বুকে ফিরে এসেছেন। বাবা-মায়ের বুকে ফিরে কাঁদলেন সন্তানও।

আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেই ফেললেন, ‘এ আমার পুনর্জন্ম। ’ জার্মানির পতাকাবাহী এমটি মারিডা মারগুয়েরাইট জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী ছিলেন গিয়াসউদ্দিন। সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের কাছে আট মাস জিম্মি থাকার পর গত ২৮ ডিসেম্বর মুক্তি পান গিয়াসউদ্দিনসহ ওই জাহাজের ২২ জন নাবিক। গতকাল ওমান এয়ারের উড়োজাহাজে করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। একই জাহাজে থাকা আরেক বাংলাদেশি জাফর ইকবাল দু-তিন দিনের মধ্যে দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার খবর আগেই পেয়েছিলেন স্বজনেরা। অপেক্ষা ছিল দেশে ফেরার। ছেলেকে না দেখা পর্যন্ত যেন দুশ্চিন্তা কাটছিল না বাবা-মায়ের। তাই গিয়াসউদ্দিনের বাবা রাজউকের সহকারী পরিচালক আবুল বাশার, মা শিরীন আখতার এবং স্ত্রী বিবি ফাতেমাসহ অন্তত ২০ জন স্বজন গতকাল বিকেল থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে থাকেন। তাঁদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বিকেল চারটায়।

বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে গিয়াসউদ্দিন বের হওয়ার পর দৌড়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন বাবা আবুল বাশার। এই আনন্দের কান্নায় যোগ দেন মা শিরীন আখতারও। বিমানবন্দরের লাউঞ্জের সামনে ভিড় ঠেলে গিয়াসের কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিল না স্ত্রী বিবি ফাতেমার। মাইক্রোবাসে উঠেই গিয়াসের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। চোখে-মুখে প্রশান্তির ছাপ যেন মুছে দিচ্ছিল আট মাসের কষ্টের প্রতীক্ষা।

ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা গিয়াসের মা শিরীন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন শুধুই আনন্দ। এইটাই লিখেন। ’ বাবা আবুল বাশার বললেন, ‘আট মাসের যন্ত্রণার দিন শেষ হলো আমাদের। কীভাবে যে দিন কেটেছে, বোঝানো যাবে না। ’ গত বছরের ৮ মে জাহাজটি ভারতের মুম্বাই থেকে বেলজিয়াম যাওয়ার পথে এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

জাহাজের ২২ নাবিকের মধ্যে দুজন ছিলেন বাংলাদেশি। জাহাজের মালিক প্রায় ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার (সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা) মুক্তিপণ দিলে গত ২৮ ডিসেম্বর জাহাজটি ছেড়ে দেয় জলদস্যুরা। বিমানবন্দরের মতো ভিড় লেগেছিল গিয়াসউদ্দিনের মেহেদীবাগের বাসায়ও। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে জিম্মিদশার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, প্রায় ৫০ জনের সশস্ত্র দস্যু ছিল তাঁদের জাহাজে।

তাদের হাতে ছিল মেশিনগান, একে-৪৭-এর মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র। তবে তারা কোনো নাবিকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি। নিয়মিত খাবার দিয়েছিল। গিয়াসউদ্দিন জানান, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মণি তাঁদের জাহাজের কাছাকাছি ছিল। জাহান মণির নাবিকদের সঙ্গে তাঁর কয়েক দফা কথা হয়েছে।

তাঁরা সবাই ভালো আছেন। জলদস্যুরা তাঁদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করছে না। মুক্তিপণ দিলেই জাহাজটি ছেড়ে দেবে। গিয়াসউদ্দিন বলেন, তাঁদের জাহাজ যে এলাকায় নোঙর করা ছিল, এর আশপাশে সাত থেকে আটটি ছিনতাই করা জাহাজ দেখা গেছে। একাধিক গ্রুপ এসব জাহাজ ছিনতাই করতে পারে।

জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা জাফর ইকবাল শিগগিরই দেশে ফিরবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.