ঝুমকা লতার ঝুনঝুনি
১।
আজই প্রথম বৃষ্টি এলো, ঝড়ো হাওয়ার কোলে চড়ে
রোজই আমি ফুটিফুটি, আজ ফুটেছি হাউস করে । ।
সজল হলে আমার বাহির, ভেতরটাও জুড়ায় খানিক
বেশি করে ঝরলে তুমি মনটা যে হয় সান্নিপাতিক।
আমার ভেতর ধরলে মেঘা, মেঘলা পরে মেদুর শাড়ি
আমরা দু'জন শিলা খেলি, চোখে চোখে কাড়াকাড়ি
তখন জগৎ আমার মেঘে ছড়ায় দ্যুতি আত্মহারা
কেমন করে সই সখি গো, ঝলক জ্বালা, রঙের খাড়া
তোমার বাড়ির পন্হচিহ্ন মুছে গেছে জলের তোড়ে
নৌকা হবো রুপান্তরে, বাঁধব তোমায় জলজ ডোরে।
।
আমার প্রথম বৃষ্টি হলে, আমি মেঘার ধাত্রিমাতা
বৃক্ষে বৃক্ষে পোয়াতিভার, আমি খুঁজি পরিত্রাতা
২।
নবীন স্রোতে, কানকো খাড়া, বজ্রে আমি প্রসব করি
পুরুষ ফুলে সুবাস হলে, হাতির শুঁড়ের পরাগ ধরি
নয়া জলে স্নানের শেষে, গর্ভধানি পুষ্ট করি, পুষ্পিত হয়
জন্ম যারা দান করে যায়, তাদের মরণ জন্মে বিলয়
আজকে প্রথম ধারা দেখে ধরে নিলাম নদী হবে
তোমায় আমি পাবো জানি, ঢক ঢকিলা, বিভূতি-বৈভবে
এই ফাগুনে আগুন আছে আর আছে ভাই বৃষ্টি
আমার আকাশ যায় খুলে যায় পাই যে দিব্যদৃষ্টি।
দিব্যি দিলাম বিদ্যা বলে বাংলা আমার প্রাণপিয়ারি
আমার ঘরে আমি থাকি, আমার সত্য আমায় থাকে ঘিরি । ,
তিরিশ মিনিট পার হয়ে যায়, তিনশ' বছর পরে
তিরিশ মিনিট থমকে দাঁড়ায় সাতকোটি সংসারে
তিরিশ মিনিট, তিন সহস্র গানের জন্ম হয়
যায় কেটে যায়, তিরিশ মিনিট, সকল শংকা-ভয় ।
।
হাঁটুর নিচে গুলির চিহ্ন, গলায় ফাঁসির দাগ
এই নিয়ে ভারতবর্ষে হলো দেশবিভাগ । ।
দেশতো নয়, দেশওয়ালা দাসের জীবন পেলাম
তাইতো অই পাকিস্তান, তোকে দিলান সেলাম । ।
আমরা আবার তিরিশ মিনিট , আমরা আগামি ...
হঠাৎ আমার ঘড়ির ভেতর কালের প্রসববেদন উঠলো যখন
পদ্মাপ্রখর পলাশ ডায়ালখানা কি আবেদন করে আমায় তখন
কালের ডায়াল দাও, জানায় যখন, তিরিশ মিনিট দম আটকে
কালকাঁটাতে নিজের ভেতর হাজার বছর সময় প্রস্বেদন। ।
দেখো রে ভাই, তিরিশ মিনিট, ছুঁয়ে দেখো মতিন
সাতশ' ঘড়ি টিকটিকালো, আমার ঘরে জন্ম নিলো বাঘা আর যতিন
দেখো গো বোন তিরিশ মিনিট, ছুঁয়ে দেখো সময়
আমার ভাষা, বাংলা ভাষা অমর ও অক্ষয় । ।
তোমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিও
এক মিছিলে দু'জন যাবো, মরলে বুকে নিও ।
।
তিরিশ মিনিট পার হয়ে যায়, ভাষার মিনার দাঁড়ায়
সকল সময়, হায়াত-মঊত, ঘড়ির কাঁটা হারায় । ।
আমরা যারা তিরিশ মিনিট চাক্ষুষে মুদ্রণ
নজরুলের সাম্য আর লাঙ্গল পত্রিকার লিপি
কৃষকের জন্য মৌলানার তর্জনি আর হক সাহেবের ক্রন্দন । ।
আমরা যারা ছবি হলাম, কিংবা আগামি
ঝড়ে জীর্ন হলে ঘর আমরা ঘরামি __
আমরা আবার তিরিশ মিনিট , আমরা আগামি ...
তিরিশ মিনিট
আজ আমার প্রসূন প্রসবকাল
আজ আমি পলাশপ্রকাশিত সময়ের হাত ধরে চলে যাবো চিরচঞ্ঝলা মিছিলে মিছিলে । ।
আজ আমি ঐতিহাসিক ইচ্ছা, ঠেলাগাড়িভরা তরতাজা, টাটকা আকাংখার ফেরিওয়ালা _
আজ মিছিলের ঘরে ফেরার সময় নাই
আজ উড়ে যাওয়া খুলি, বিস্ময়- বিভোর ঝরা প্রাণ
আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে
আমরা কী পলাশ না শেফালি
আমরা কী বার বার আসি না ফিরে, পেছনে ফেলে, আমাদের মায়াবি জগৎ ঘর- গেরস্হালি, অন্তরে সংকলিত কাঁচা হাতের চিঠি
সব আমি দেখি, জীবনের ইশতেহার লিখি:
মিছিল আমাদের, আমরা মিছিলের
ঝুমকা লতার ঝুনঝুনি পায়ে, পান্হপদচ্ছাপ নয়, ঝুনঝুনির শব্দ তোমাকে নিয়ে আসবে আমার কাছে । ।
কে বলে মুর্দা হাসে না _ এই যে দেখো মিটমিটিয়ে হাসছি
উনত্রিশ মিনিটে আমি আমি নয় মাসের মাকে দেখলাম
আমার জমজ বোনের জন্ম হলো
হঠাৎ কী হলো আমি আমাদের জন্মমুহূর্ত প্রত্যক্ষ করছি
পলাশর মত রঙিন আমার মা;
আমি আগামি দিনের মিছিলের আতুরঘরে ইতিহাসের প্রথম ধাত্রি
তোমরা কী জানো না, শহীদেরা লিঙ্গ নৈর্ব্যক্তিক ! !
ঠিক আটাশ মিনিটে পদ্মা আমাকে এসে বলে:
আমি জানি কবর কেবলই নাটক
শহীদেরা পরগৃহলোকে থাকে না কখনো
আপন সত্তার কাছে পরবাসী যারা, শহিদ সত্য বলে,
তারা সব দয়ালধরমহীন, আমার স্রোতের কাছে উর্মি -উষর দিনে, বাংলার স্রোত প্রত্যাখান করবে, তোমাকে যদি না আসো মিছিলে ।
।
মিছিল কোথায় আজ?
বাঙালির প্রাণ মিছিলকাতর
আমরা কি ভুলে গেছি, আমাদের কপালে জমজ চাঁদের টিপ
খো্য়াক্ষীণ নয়নের ঠাঁই, নিয়েছি নিত্যই আমি, মনে পড়ে মাতার বিদায়
মনে পড়ে আমি ও রফিক
বজ্রমুঠোর ভেতর মেদিনি গর্জন, কিংবা ঝড়, আমাদের অবিনাশী স্বর শোন
কেউ কি জানত তিরিশ মিনিটে আমরা হঠাৎ স্বাধীন
রক্তস্রোতে স্নান শেষে আমি দেখি আমি এক জ্বলন্ত পলাশ
তিরিশ মিনিটে মৃতরা জীবিতের চেয়ে অনেক বেশীদিন বাঁচার আনন্দে চুপচাপ শুয়ে আছে। ।
৩. ঝরা পাতার ঝুনঝুনিটা
ঝরা পাতার ঝুনঝুনিটা, বাজায় আমায়, আমি বাজি
যে সুর আজ ঝড়ের জিগির, তার ভেতরের অমর আদি
আমার কাছে ঝুমকা লতার ঝুনঝুনি হয় তোমার আগমন
ঝড়ের চোখের কাঁটা তুলি, ঝড়কে আমি ঝরনা করি
আপনি আমার ঝড়ের ভেতর ঝরণা হয়ে, হয়ে উঠুন কারণবারি । ।
লতায় লতায় কানাকানি, গোছা গোছা ফুলের ভার
জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাই, দেখি, মুক্ত কলির বাহার
পাতায় পাতায় আমার শিরা ঝিঙার মত ছড়ায় মৃত্তিকায়
তোমার সুবাস দেহতন্ত্রে, দিন চলে যায় কালের মায়ায়। ।
আমার পা যে ঠুমরি-ঠমক, কী যে আমার পান্হ-গমক
একটি প্রজাপতির রঙে ফের ফিরে পাই নীলের চমক
আমার হিয়া তোমার ঘরে, আমার কালের পদ্মপাতায়
পরকালের পরম প্রিয়া টলমল; আমার বিদায় ছলছলায় । ।
হায় রে আমার হাজার পাগল, আজকে মিলি পাগলা মেলায়
ঝড়ের চিহ্নে ছিন্নভিন্ন, তরুণ ডালটি কি অসহায়, হাওয়ার খেলায়;
ফুলে-ডালে ভাঙার আগে, বাঙলা আমায় জাগতে শেখায়
মাসুম পলির বুকে আমি পুষ্প হয়ে ফুটে থাকি
তুমি আসবে বলে, পথ চেনাতে পান্হপদচ্ছাপটি আঁকি।
৪. বিড়া ছিঁড়ে যেই দাঁড়ালে
বাদল দিনে বিড়া-বাঁধা, শ্রাবণপ্লাবন আল্লাদে
হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায় কাল নাদে
এখন শ্রাবণ বাজায় কেবল ঝড়ের ঝুনঝুনি
রথ চলে না, পথ চিনি না, শুধু শুনি পাখির শিস
আমার খেলা খেলছো তুমি, ঝড় বলো না,
কার প্রতিনিধি তুমি, কে তোমাকে পাঠায় আমার খেলনা নিয়ে যেতে?
আমার হাওয়ার গুনগুনানি, তার চলে যাওয়ার চমক
মেদিনিমূর্ত ক্ষণে আমি মানুষ হয়ে প্রস্ফুটিত
যার প্রসবে জনম যাহার, জন্মসূত্রে আমরা সবাই জলের জমজ
প্রেম হয়ে যায় বিড়া ছিঁড়ে যেই দাঁড়ালে
যখন তুমি বললে আমায়, ওমা এই যে মানুষ, খুবই সহজ । ।
৫। প্রেম
এই যে আমার বিরান পাথার, সবখানে ফুল ফুটে আছে, বিশুদ্ধ রঙ কী সহজে। জন্মে যেমন আলাভোলা, আমার খবর রাখেন যে মা, আমি শুধু তার তরঙ্গে সাঁতার কাটি।
কী সহজে সাঁতার শিখে গেছি । ।
প্রথম যখন প্রেম শিখেছি, মালা গাঁথা শিখতে গেছি বকুল তলায়
কি সহজে তোমায় পেলাম, মাল্যদানের সময় কোথায়!
আমায় তুমি বললে কেবল, বকুল হয়ে বাঁচতে শিখ:
বকুলভরা দিনগুলো সব, আমায় করে আত্মহারা । ।
৬. আমি বায়ুর সাথে খেলি
আকাশ ভাঙছে, যেমন করে নারীর জল ভাঙে
আমি ঢেউ, নদিয়ার বিভঙ্গে
শরীর গলছে, নাচনে নৃত্যে, পাগলা ছন্দে
যেমন করে প্রসূনপ্রসবিনী বৃক্ষ, ডগমগ ফুলের আনন্দে
যেমন করে তাহার বাহার, আমার ভেতর খেলে
বিষন্ন বিরান মাঠে যেমনি বায়ু খেলে
আমি বায়ুর সাথে খেলি, আমি খেলনা ঘুড়ি বায়ুর
আমায় কাটে আমার হায়াৎ, আমি ঘুড়ির গঠন গাড়ি
আমি ঘুরে ঘুরে মাছের মত ক্লান্ত পাখায় জলবিরতি ।
।
আমরা কাছে আমার হিসাব, আমার নয়ন আমি দিলাম
তুমি আমার আমলনামা উড়িয়ে দিলাম এক নি:শ্বাসে
আমি একদিন ঘুড়ি হয়ে যাবো
আকাশে আকাশে আমি মহাশূন্য যান ......
অনন্ত উড্ডীন ....... আমি আমার জন্য আমি কাঁদি
৭. বসন্ত
বসন্ত এলে মুকুলমথিতক্ষণে, বোল ফুটে, অংকুরের জবান
আমাদের এগিয়ে চলার দিনে শিখে যাই প্রস্ফুটন বিজ্ঞান
পাতারা পরীক্ষার খাতা, খুলে ধরে মনীষা মুকুর
শালবনে পর্দানশীন ফুল, মাতাল নিরজন দুপুর । ।
বসন্তে ব্যস্ত সবাই, কানাকানি কুঁড়ি ও মুকুলে
যাদের জন্ম হয় মুহুর্তের ভুলে, তাদের স্বজাতি আমি, মাঝখানে নদী আমি
ঢেউ দুই কূলে; মনীষার মন্ঞ্জুষায় ফুটে থাকো অচেনা কুসুম হয়ে
বাংলার কোনো এক অজানা চরে। ভর দুপুরের হাহাকার বুকে নিয়ে বিনিদ্র-বিচরণশীল নদী, নিজের সিনানে মত্ত স্রোতের আগামি
কানাকানি পড়ে গেছে, আমরাও জাগ্রত হই এই বসন্তে
কোথায় কোন জলের অন্ত্স্হলে শূন্য সত্তা লয়ে লুকানো পদ্ম জলাশয়ে ফের জেগে উঠে.......
প্রাণেরা আজ আড়মোড়া ভাঙে
মাসুম পলির বুকে বাঙলার সব ফুল হৈ হৌ করে জেগে ওঠে
রোলে রোলে, বোলে বোলে জেগে উঠে মানুষ সহসা
যার নাই নীড়ের ভরসা, সেও জানে মাইকেলের ক্ষণকাল
সেও জানে শরীর পড়িয়া গেলে মনীষা বসন্ত আসে ...
মাখামাখি করে আছে যে বনানীর সাম্যবাদ
সেও জানে, লতা ও বিরিক্ষি মিলে, আজ ভুলে যেতে হবে
আশ্রয় ও আশ্রিতের শ্রেণী পরমাদ ।
।
আমরা সকলে এক সবুজ অংকুর
প্রাণ জাগে প্রাণ !! গাঁথিয়া মদিরা হাওয়ায় রূপের ফুলকি
এত ঢক, এত ধক, এতো প্রসবণ, এতোই সবুজ আজ বসন্তের বসন
এত মাখামখি, এত ঢলাঢলি, এত জাগরণ, মনীষা মুকুলে আজ এতো প্রজাপতি, প্রকৃতি সদাই জানি রজ-বীজে প্রাণের যৌথ সম্পত্তি
জানিলে রুহানি সত্য প্রকৃতি মাঝার
কমে যাবে ছিদ্দত, মানুষের হাহাকার । ।
এই সত্য দরশন হয়, বসন্ত বাহারে
কুসুম-কৌপিন পরে, কিংবা এক মালা গেঁথে তোমার অপেক্ষায় থাকি
প্রতিটি বসন্তে ।
যদি কোনো নারী বলে, এই দেখো আমারও মাল্যখানি সহস্র বাসন্তি ফুলে গাঁথা ।
যদি দেখা হয়, আমি তো বনানী হবো, কিংবা মৃত ছায়াদের আওলাদ, সবুজ মানুষ আমি, নাচি-কুদি অনন্তের আনন্দে।
এই শহরে খুঁজি-ফিরি বসন্ত, কোথায় যে পাই তারে, সব গেছে রাজনীতির দখলে ।
আমার বসন্ত ফিরিয়ে দাও, নইলে বসন্ত হবে; আমরা বিরিক্ষির জাত, বৃক্ষের মিছিল দেখো এই ফাগুন সকালে
আমরা শহিদ হই, অস্ত্র নিকুচি করি, শুধু বজ্রপাত হলে;
৮. হেমলক হাতে বসে আছি আমি শহরের পানশালায়
এসো যাই, মগন মধুর এই নিরজনে, সুফিয়া-সুদূর ইথারে এথেনিয়
হেমলক হাতে বসে আছি আমি শহরের পানশালায়
আমি আর তুমি রোদনে নিরত, মানুষের লাগি কাঁদি
এসো যাই, লগনের লাজ ভুলে যাই, দুখি দুনিয়ার দুখু মিঞারা বেধেছে মিলন-জোট; আজকাল আমি লাঙ্গল পত্রিকাটি আবার বের করতে চাই
আমাকে লুকাও তুমি, খুঁজে ফিরে আমাকে মুসাফির পথ
কিভাবে লুকাই আমি, আমারই ঝরে পড়া দেখিব আমি
লান্নতে আছি আমি পৃথিবীর কুফরি-কর্ণারে । ।
৯. দুশমন
আমার শ্রীবাস্তব আমি দেখেছি
আমার দুশমন আমি নিজেই
আমার আমলনামায় তুমি প্রেম লিখে রেখো
আমার চোখে তুমি প্রেম পুতলা
তোমার কারণে আমার ইশকুলের পথ বদলে যায় ।
।
আমি শৈশবে নিজের পথ ভুলে অন্যদিকে যখন চলে যাই
আমার স্কুলের পথে আমি জ্যামিতি চর্চ্চা করি
পথে যতো আঁকি-বুকি করি
সব আমার পথেরই মানচি্ত্র
আমি পথে পথে পট আঁকি
আমার অস্তিত্বের পট, পটগান হয়
আমি আজ সেই পটগান লিখছি :
এসো আজ ধরণীর ধর্তব্য সব, ধরেছি তোমার হাত
সব কিছু লাগে বিস্বাদ, নাজাত লহুজাত.....
কেন ভাই, নাজাত লহুজাত ?
১০. আমার প্রেম
না, আজ বাতাস বড়ো অধির, অস্হির
আমি জানি ওর মতি -মতলব....
দক্ষিণ দুয়ার খোলা রেখেছি
কাছে অসলে আমার গায়ে আগুন ...
আমি তারপর থেকে শুধু অগ্নিকন্যাদের খুঁজি
আমি নিভানো প্রদীপেও শিখা দেখি।
একদিন আমরা প্রেমে পড়েছিলাম
বিদ্যা বিদ্যা বলে অঙ্গীকার করেছিলাম
তুমি যত কাছে আসো, আমি বৈশাখ হই
দূরের দুলহানের মত বাতাস দুলিছে
আমার ভেতরে রাখা স্বপ্ন সবসময় সজীব
আমি কখনো কখনো বাতাসি পাল্কিতে চড়ে হাওয়া হই
আমি কখনো কখনো নিজের রক্তের গন্দ্ধ নিজে পাই
তখন তুমি আমার যুক্তিবিদ্যা
আমি ক্ষণে ক্ষণে পথ হারাই, তখন তুমি আমার পথ
মনে পড়ে, তুমি কাছে আসলেই আমার গায়ে আগুন ধরে যেতো
আর তোমার কাছ থেকেই শিখেছি, প্রেম ও শরীর আলাদা
হাওয়ার পাল্কি একদিন একা ফিরে আসে
অনেক ফ্যান্টাসির শেষে জব্বর ঘুম
আমি সদা স্বপ্ন পরবাসী
কত যে হুজ্জত হলো, কত যে হাঙ্গামা
আমি ফিরে এলাম বাতাস হয়ে
তুমি ফিরে পেলে হায়াতের সম্ভাবনা । ।
যতবার না বলেছো, আমি একটি করে ফুলগাছ লাগিয়েছি
যতবার আমার কাছ থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছো, আমি তোমার অজান্তেই
তোমারই বাড়িতে রেখে এসেছি চোখ
যতবার ফিরিয়ে দিয়েছো, আমি বার বার পথ ভুল করেছি
কখনো কখনো নিজেই নিজের ঠিকানা খুঁজেছি
আমি হারিয়ে গেলে তুমি দায়ী থাকবে
আজ আমি আর ফিরে যাবো না ........
তোমারই মায়ায় আমি দয়ালের পথ ধরেছি
তোমারই জন্য আমি মানবিক মুর্ত প্রভাত
যত গোলাপ দিতে পারি নাই, সব এখনো তাজা
প্রত্যাখাত গোলাপ আরো গোলাবি হয়
আমার একজন বন্দ্ধু বড়ো দরকার !!!
তার কথার ছায়ায় একটু জিরিয়ে নেবো
আমাদের মিলনের আগে ইস্রাফিল শিঙায় ফুঁ দেবেন না
আমি জানি আমাদের মিলনমিত্রকলি ফুটবেই
বাগানে মুকুলমথিত ক্ষণে আমাদের জন্য জোড়া ফুল, ফুল ফুটবে
মিলনের ফুল ফুটতে হয়, এই প্রাকৃতিক সত্য বিশ্বাস করো
এশেকের আশেক আমি তোমায় চিনি চোখ খোয়ালে
পেয়ারের দোস্তাইন কোথায়, দোস্ত যদি না হ্ই আমি
কলিজাতে ন' দিও শেল, এমন আঘাত সহন ন' যায়
ন' কইও কষ্টের কথা, দিন চলে যায় তোমার ভালবাসায়
বজ্রের গর্জন না হলে মাছে ডিম ন' পাড়ে
পেয়ারের কষ্ট না মাপি দূরত্বের বিচারে
দরি্য়ার কূলে বাস আমরা দরিয়া দরদি তার ডাকে ছুটে যাই, তার কাছে মিনতি জানাই
যে মরদ ন' যায় দরিয়ায়, যার দেহে লবণের স্বাদ নাহি পাই
যতই দরদি স্বরে ডাকো, তারে নাহি চাই .. ....
দরিয়া কূলের নাগর ঢেউয়ের লাহান
শাদি হবে তার লগে যার আছে বাহারি সাম্পান
যে মধু ভ্রমরের নয়, যে পরাণ ন' দি তোমারে
সাগর, ও সাগর, ন' খাইও, ন' নিও আমার স্বামীরে
স্বামী বিনে নিশি বড়ো দীর্ঘ মনে হয়
আশে আশে দিন কাটে, অসহ্য সময়
এই গাঁয়ে মরদেরা সব চলে গেছে
ঐ ঐ দূরে, চোখ খোয়া দূরে .......।
যেখানে মীনের বাস, জলপরিদের দেশে
আমার দেহের ভেতর ঢেউয়ের মাতন
যারে তুমি রেখে গেছো দেহেরও মাঝার
সেকি শেষ সম্পর্ক নাকি, সম্পর্ক সনাতন
মরিলে পরাণবন্দ্ধু থাকি পরাণ মাঝারে
বাঁচিলে নিত্য আমি বাসর সাজাইরে
কত হাঁক কত ডাক, কত শোরগোল
কতদিন কেটে যায়, বেদনায় বিভোল
আমরা মাছের মত জালের অপেক্ষায়
মায়ার বাঁধনে বাঁধি জগৎ স্বেচ্ছায়
আইস বন্দ্ধু নেত্য করি, হেলিয়া ঢুলিয়া পড়ি
জীবনের জল্পনায়, এসো দোস্ত হাত ধরি
দুইজনে বাঁচি মরি, যাই , এসো , আমার গা করছে রি রি । ।
১১. আমার ঘুম
জেগে আছি , দু'চোখের ঘুম নদী হয়ে যায়
আমার্আই ঘুম হয়ে আমাকেই প্রত্যাখান করো তুমি........
যদি আমাকে জড়াতে চাও
....... তবে আমারই ঘুম হও । ।
আমি কী ঘুমিয়ে পড়েছি আজ নোঙ্গর তুলে রেখে
নৌকার নতুন পাল নববধূর মতো নুয়ে আছে
বাতাসের ভয়ে সে লুকায় মুখ
আমি তো এবাদতে মগ্ন
আমি শুধু হায়াতের জন্য এবাদত করি
আমার্ুই ঘুমে আমি শুধু তোমারই ছোঁয়া পাই
দেখা যদি পাই, তবে ঘুমিয়ে পড়ি......
ঘুম হলে কী হ্য় ?
স্বপ্ন হয় ......
তুমি স্বপ্নে আসো
খোয়াবে খিলখিল করে তুমি হাসো
আমি নুয়ে পড়ি, চোখ আস্তে আস্তে নীচে নেমে আসে
..... আমাকে শুধু ঘুম পাই
গান
১.
আশ নাই আর দেখা পাবার
আজ অভাগির দুই চোখেতে অন্দ্ধকার
আঁধারেও দেখিতে পাই
ঘটনাচক্রে আমি তোমাকে স্বপনে পাই
মনে পড়লে বড়শীর ঘাঁই
মীনে আমি মনকে পাই
তুমি যদি রাই হও
তবে আমি রাধিকার স্বর
গুনে গুনে বলি, তুমি আমারই আলো, আমারই প্রহরায় থাকে অনন্ত প্রহর
মনে পড়লে বড়শীর ঘাঁই
অনন্তের বিধানে রাই আমারই হবে ....
ইসকুলে বালিকা পড়ে , বালক না পিছু ছাড়ে
দশম শ্রেণীর ভার সহন ন' যায়
আমার বাড়ির পথ নিত্য বদলায় .....
আশ নাই আর দেখা পাবার
সব গুরুর কারবার, তিনি ছায়ার সমাহার ।
।
গান ২
আমায় আগাম খবর দিও
আমার জন্য ফুল ফুটে নাই, গন্দ্ধ বুকে নিও
গান শুনে আর কই না কথা
বিস্ময়ে তাকাই
তোমার চোখে তাকাই
রঙমহলার দুয়ার খোলে ... আসি তোমার কাছে
কান্না করি তোমার জন্যি
আমি তোমার দিকে তাকাই । ।
গান ৩
আজ কুসুম কাকলি বাগানে
আজ ভ্রমর বিজন ক্ষণে
তোমারে যে পেয়েছি
কাল কী আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়
তবুও প্রভাত শরীরে ঝিমায়
হায়াতের বেড়ে বাতাসী পালের মান যত আজ ভেঙেছি । ।
আজ রেখেছি দু্যার খোলা
আজ কাননে কুসুম দোলা
আমারে দোলায়, তোমারই আসরে গান হয়ে বেঁচে আছি ।
গান ৪
আজ বসন্তে শাল ফুল ফুটেছে
সুবাসিত ক্ষণ আমারে ডাকে, আমি খুঁজে ফিরি তোমারে
ভ্রমর কখনো ফিরেও দেখেনি
আমি যে এসেছি তোমারই হুকুমে
কুসুমধাত্রী বিদ্যা শিখিয়া
মা-মরণ শোক বুকেতে লইয়া
পুষ্পপ্রহরে ফুটিয়া লুটাই
আগামীর কাছে অতীত লুকাই
দেখো কি নিঝুম ক্ষণ
আমারই বকুলে গাঁথিয়া মালা
তোমারে পরায় কোন সে সুজন । ।
গান ৫
আমি লোকের কাছে তোমার রুপের বয়ান শুনেছি
তুমি নাকি ইচ্ছাসুন্দরী
আমি লোকের কাছে তোমার গুনের কথা শুনেছি
তুমি নাকি ফুলের কাছে কুসুমধাত্রী
আমি যে গো ঠা ঠা রোদে তোমার কাছে ছায়া খুঁজেছি ।
তুমি নাকি ফুলের মত ফুটতে ভালোবাস
ফুলকি হয়ে যাও ছুটে যাও আদি আলোর ঘরে
কার ঘরে যে মানাও তুমি
আহা !! হে আমার প্রাণ গোপিনী
গান ৬
আজ ফিরবো তোমার ঘরে
আসলে তো ফিরছি আমি তোমার বিধান মেনে
খুব করে চাই, যাই ফিরে যাই তোমারই মন্দিরে ।
আজ ফিরবো তোমার ঘরে
আসলে তো যাই ফিরে যাই নিজেরই ভেতরে
খুব করে চাই, ফের ফিরে পাই নিজের ঠিকানা । ।
না, যাব না, যাব না, অন্যখানে যাবো না
আজ খুব করে চাই আমি যেন কেঁপে উঠি তোমার শিহরণে । ।
গান ৭
তুমি নিদে গলে পড়ো, আমি বসে আছি শিয়রে তোমার
নিভাবো নিগুমে আমি আমারই পেয়ার
কতো কাটাকাটি, কতো আড়ালের আড়ি
কতো যে বেজেছি আমি, কতো যে মোলাকাত, কতো যে কাড়াকাড়ি
তোমারে পেয়ার করি স্মরণে ত্বরণ
হাতেখড়ি হয় আমার তোমারই বিদ্যানিকেতনে
শিখেয়েছো কাঁচা হাতে, গোটা গোটা অক্ষরে
বিপন্ন ব্যাকরণ, হয় হউক, তবু তরতাজা লিখেছি
বাঁশের কলমে, শিমের কালি হাতে মাখামাখি
আমি যেন রাজা আজ, ফরমান লিখি
আমি যেন শিখা হ্ই, হই তোমারই শিখানো বুলি ।
।
গান ৮
আজ যদি হয় কপাল ভালো, দেখবো তোমায়
নেবো আমি উঁকির ঝুঁকি
আজ তো আমি উড়ছি একা
হাওয়া আমার প্রাণপেয়ারের সখা
একবার, দাও দেখা দাও চোখের দেখা
আমার নয়ন খোঁজে তোমায়
হায়! হিয়ার ভেতর কোন পাথারে কোন হাহাকার উঠে
একটুখানি জিরাই আমি, ঝড়ের আগে বাতাস ছুটে
শাখায় শাখায় শিহরণে সঙ্ঘজীবি গুরু জাগেন
আমার নয়ন তোমায় খোঁজে
সাধন- বোধন সব সেরেছি
সব সয়েছি,যেমন ধরো আমি একা ফুলস্বরুপে রূপ ধরেছি
আসি যদি ফুলের রূপে, তুমি ফুল্লরা
আসি যদি বাজনা হয়ে, বাজাও আমায় যেমন খুশী । ।
গান ৯
(আমার এক কাল গিয়ে দু্ই কালে ঠেকেছে)
কাল ঠোকরা পাখী রে তুই, হাওয়া খুটে খা
চড়ে-বড়ে খায় খালাসি, চলি বলি, রথ চলে না
মন ভেঙেছিস, তবু আমি ভাঙা মনের ভাগ দেবো না
এই যে মরণ হয় না আমার, নয়নে আজ আছে আমার তোমায় দেখার স্বাদ
অই যে দেখো নীল নূপুর অই কলমিলতায় ফুটে
যেমন তুমি ফুটে আছো, আমার দরশনে
কালে কালে অনেক কথা কর্ণকুহর হয়
আমার প্রাণ তোমার জন্য সর্বসময় রয় । ।
গান ১০
একতারা ফল আমি খবো কাউকে দেবো না
প্রেমানলে পুড়ব আমি অনল হবো না
অনল যখন ঘর দহনে পোড়া পোড়া লাল ছড়ালো
কে যে আমার মনের ভেতর এতো এতো রং ছড়ালো
সাধনসঙ্গী হলে তোমার দাও ভরসা পাগল হবার
পালে পালে বইছে হাওয়া, আমি মাঝি জল ছায়ার
গান ১১
রহম কর একটু আমায়, দয়া কর খোদা
নসিবে রাখিও খোদা স্বর্গচ্যূত ক্ষণ
আসো জগৎরক্ষা আন্দোলনে আমরা শামিল হই
কিসমতে রাখিও খোদা, সৃষ্টির খেদমত
আমারে দিও গো দয়াল, লালনের ভাব
মিলন মুহুর্তে আজ মিলনমিত্রকলি
গান ১২
মাগো খোদার কাটা আর বলো না, আমি দয়াল-দ্বীনের পথ ধরেছি
জাহির যেন হয় না পেয়ার, আমি তোমার মনমাধুরীর রঙে রাঙাই আমার ভূবন .....
রঙ খেলেছি ভাব মিছিলে
মেঘ-মশাল ভাবে আমি তোমার প্রেমে মজে আছি
এক দিওয়ানা হাজার কুতুব
শহর ঘুরে রঙের মিছিল, মেদিনী আজ মন কেড়েছে
শালবনে আজ মেঘ জমেছে
পাতায় পাতায় মুক্তি জমে, জল যেন আজ জীবন ফানা
ফানা কর খোদা আমায়, তোমার কাছে নিয়ে গেলে ভুলে যাবো জীব যন্ত্রণা
গান ১৩
দেহে যে নাই দেহতত্ত্ব, খাঁচার প্রতিক আর নেবো না
চিহ্ণ আমার চেনা-শোনা, বঙ্গ দেশে অনেক খনা
কেন আসে না।
আলোর ঘরে আলেয়ার জন্ম
ফকির লীলা পাগলা ফজল
প্রভাত গর্ভবতী। সে ভরপেট আলো নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজতো কোন প্রভাতফেরি নেই! আলো পেটে ধরার কী যে জ্বালা! আলোর ঘরে আলেয়ার জন্ম ।
ফণার সীমানায় যত বাজে বীণ
প্রভাত ফুটিয়া থাকে, অবুঝ ফুলের মতো
ফুল বলেছে, পুরো ফুটবে না
একজন মানুষের জন্য তার অপেক্ষা
পাখী বলেছে, উড়াল-উতল দিনে
চিঠি তার ঠোঁটে থাকবেই .....।
মেয়েটি বলেছে, সে পুড়ে মরবে না, পুড়িয়ে দেবে অনল
শিখা হয়ে ঘুরে বেড়াবে
প্রভাতী বলেছে, আলো প্রসব করবে
দুনিয়া বলেছে, ওহে ! আমি গোলাকার ভবে
আমার শরীরে ভাঙে জল- তবু খেয়া আমি যে তোমার
ত্বরার কেরামতি আমারই জানা । ।
আমারই ভেতরে আছে আমারই বেদনা
জলেরে ভাবিয়া পর পার হয়ে যেয়ো না খেয়া । ।
ফকির লীলা পাগলা ফজল ভেবে ভেবে মরে
কোথায় কেমন কে যে আছে খোদার ফজিলতে ।
।
আফ্রিকার আকাশ আজ জ্যোতিষ্ক শোভিত
মিলনে জন্ম যাহার দেশতত্ত্ব বোধে
আপন মিলন ধারায় ছিদ্দত ঘুচিবে । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।