>>>বৈশাখের ঐ রুদ্র ঝড়ে আকাশ যখন ভেঙ্গে পড়ে, ছেঁড়া পাল আরও ছিঁড়ে যায়...<<<
আজ মহাজোট সরকারের ২ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারী শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতা বুঝে নেয় মহাজোট সরকার। সেই মহাজোট সকরারের ২ বছরের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, অথবা দলেরই কোন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এই দুই বছরের সফলতা, ব্যর্থতা অথবা আলোচনা-সমালোচনা বিশ্লেষণ করেছে "দৈনিক সংবাদ"। আসুন আমরা "দৈনিক সংবাদের দৃষ্টিতে নিচে দেখি "মহাজোট সরকারের ২ বছরে মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী"।
মহাজোট সরকারের ২ বছরে মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী
মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আজ দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে।
দুই বছরে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সফলতা দেখিয়েছেন। আবার কেউ কেউ আলোচিত হয়েছেন। আলোচিত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকে সফলতার জন্য নিরলস চেষ্টা করে চলেছেন। অনেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অন্যদিকে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিষ্প্রভের কারণে এখনো আলোচনায় আসতে পারেননি।
মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় চমক দেখান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমু, আবদুল জলিল, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনসহ অনেককেই মন্ত্রিসভায় স্থান দেননি। অন্যদিকে অনেককে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান দেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমালোচিতও হন। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন।
সফল : মহাজোট সরকারের দুই বছরে চারজন মন্ত্রী নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সফলতা দেখিয়েছেন। এদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নিজ মন্ত্রণালয়ে সফলতা দেখিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, বছরের প্রথম দিনেই পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, এমপিওভুক্তি ইত্যাদিতে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গত ২ বছরে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে।
তিন দফায় টিএসপি সারের দাম কমানো, সারে ভর্তুকি, ডিজেলের মূল্য কমানো, কৃষি কার্ড বিতরণ, পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন ইত্যাদি কৃষি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন। ডা. দীপু মনি বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে ৬৪টি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তি সই করতে সক্ষম হয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক খাদ্য মজুত, ফেয়ার প্রাইজ কার্ড বিতরণ, ওএমএস কর্মসূচি ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।
আলোচিত : দুই বছরের ব্যবধানে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আলোচনায় এসেছেন।
তারা বেশ সক্রিয়ভাবে তাদের কর্মকা- পরিচালনা করে চলেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ, পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান প্রমুখ।
আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমের জন্য জনগণের মাঝে আলোচিত হন। পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নেতৃত্বে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বাংলাদেশকে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিট (আইটিইউ)-এর সদস্যপদ লাভে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া তিনি টেলিফোন কলরেট কমানো ও অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে উদ্যোগ নেন। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন রাজধানীর ফ্লাইওভার নির্মাণ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি নির্মাণে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের গতবারের হজযাত্রী পরিবহন ব্যবস্থাপনায় সফলতার পরিচয় দেন। এছাড়া তিনি পর্যটন বোর্ড গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন। নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সদরঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ, ওয়াটার বাস চালু, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ইত্যাদি কার্যক্রমে সফলতা দেখান।
পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার বিভিন্ন প্রকল্প একনেকে উত্থাপনের বিষয়ে সক্রিয় রয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানা চালু, জাতীয় শিল্পনীতি প্রণয়ন ইত্যাদি কার্যক্রমে সফল হয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, জাতীয় শিশু নীতি, মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি প্রদান, উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ ইত্যাদি কর্মসূচিতে সফলতা দেখিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রী।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নিরাপদ পানি সরবরাহ ইত্যাদি কর্মসূচিতে সফলতা দেখিয়েছেন। গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান ড্যাপ বাস্তবায়ন নিয়ে নানা হাঁকডাক করলেও পরবর্তীতে তাকে এ নিয়ে আর কোন কথা বলতে দেখা যায়নি।
সমালোচিত : আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার (অব.) এনামুল হক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার প্রমুখ। এছাড়া সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ভূমিকাও ছিল সমালোচিত।
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বিভিন্ন স্থানে অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী গত দুই বছর সক্রিয় থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে খুব বেশি সফলতা আসেনি। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান কথার ফুলঝুরি ছোটালেও দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হননি। বিভিন্ন সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় তিনি সমালোচিত হন। অন্যদিকে পিপিপি বাস্তবায়ন, সরকারি কোম্পানির শেয়ারবাজারে প্রবেশ, এমপি-মন্ত্রীদের সম্পদের হিসাব দাখিল ইত্যাদি করতে না পারায় সমালোচিত হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিকাশে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়েন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
জনগণের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সুবিধা এখনো নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি করতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক। এছাড়া দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বস্তুত দুই বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভূমিকা ছিল সবচেয়ে নিষ্প্রভ। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সমালোচিত হন। দুই বছরের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারেননি দীপঙ্কর তালুকদার।
ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা ভূমি প্রশাসনের দুর্নীতি এখনো দমন করতে পারেননি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এখনো স্থানীয় সরকারকে কার্যকর ও গতিশীল করতে পারেননি। উপজেলা নির্বাচনের পর তিনি নানাভাবে সমালোচিত হন। এছাড়া তিনি মন্ত্রণালয়ে খুব কম আসার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন। অন্যদিকে সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এখনো প্রশাসনে কাঙ্ক্ষিত গতি আনতে সক্ষম হননি।
অনালোচিত : সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে পারেননি। এসব মন্ত্রী সাধারণ মানুষের আলোচনাও এখনো আসতে পারেননি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির, ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, প্রতিমন্ত্রী মোতাহের হোসেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাজাহান মিয়া, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ড. ইয়াফেস ওসমান, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার প্রমুখ। তবে তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে পানিসম্পদ মন্ত্রী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, আবদুল লতিফ বিশ্বাস ও তথ্য এবং প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বেশ সক্রিয় রয়েছেন। -তৌহিদুর রহমান
-------------------*****-------------------
বি. দ্র. "মহাজোট সরকারের ২ বছরে মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী" শিরোনামের সংবাদটি (ছবিসহ) হুবহু "দৈনিক সংবাদ" ০৬ জানুয়ারী ২০১১ থেকে সংগৃহীত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।