আসুন আমরা সবাই একটি পরিচয়ে একাত্ব হয়। পরিচয়টি হলো 'বাংলাদেশী'।
গতকাল সিঙ্গাপুর আসলাম। কিভাবে সেটাই বলছি। তবে কখনও ভাববেন না বাংলাদেশ বিমান সবসময় খারাপ এবং আজীবন খারাপ থাকবে।
আমি কাউকে নিরুৎসাহীত করতে চাইনা। অনেক বিবেচনায় বাংলাদেশ বিমান আমার ভাল লাগে। এখানে শুধুমাত্র এবারকার অভিজ্ঞতা বলবো । উদ্দেশ্য হলো, আমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগী আর একটু হলেও যদি মঙ্গল হয়। তবে যারা অতি দেশপ্রেমিক সত্ত্বেও (ভয়ে ও খারাপ বলে) বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমন করেন না তাদের মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই।
আমার অভিজ্ঞতা তিক্ত হলেও আশা করি আবার বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমন করবো।
#একমাস আগে কথা ছিল ৩ জানুয়ারী রাত ৩.১৫ মিনিটে বিমান ছাড়বে। কারন টিকিটটি নিয়েছিলাম সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার সময়। যাহোক হঠাৎ মনে হলো একটু জেনে নিই-সময় ঠিক আছে তো, বিমান বলে কথা। ঠিক তাই- সময় বদলেছে, ভোর ৬.৩৫ মিনিটে।
নিজেদের দেশের বিমান নিজেদের মাটি থেকে ছাড়বে, তা আবার ভোর বেলাতে! এযেন আগে থেকেই বলে দেয়া 'খবরদার কেও আসবেনা এই বিমানে'। আপনারাই বলুন এটা কোনো সময় হলো? ঢাকার যা অবস্থা তাতে রাত্রে বিমান বন্দরে আসতে গেলে সবকিছু ছিনতাই হবার আশঙ্কা ১০০%। যাইহোক, অনেক কষ্ট করে রাত ৪ টাই উত্তরা থেকে রওনা দিলাম। ভাগ্য ভাল কাকার গাড়ী ছিল। যাদের নেই তারা এসেছিল রাত ১২টার মধ্যেই।
এতে উনাদের কষ্ট হলেও বিমান বন্দরের মশাগুলোর কিন্তু ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো। কারন টগবগে যুবকদের রক্ত ভক্ষন করতে তারা বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েকজন বললেন 'আর ভাই বলেন না- সেই রাত ১০ টা থেকে বসে আছি-মশার কামড়ে নাভীশ্বাস উঠে গেছে, বসতেও পারিনা-শোবারতো প্রশ্নই নেই।
যাহোক, পৌছানোর পর দেখি বিমান ছাড়বে ৭.১৫ মিনিটে। নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য ব্যাগগুলো মেশিনে দিতেই হলো আর এক ভেজাল।
পুলিশ আমার ব্যাগ সন্দেহ করেছে। যথারীতি খুলুন-দেখান-এবার যান। ভারী ব্যাগ, অনেক কষ্ট করে জিনিষপত্রগুলো সাজিয়ে ছিলাম। সব বের করা হলো, পাওয়া গেল ছোট্ট একটি ডিকশোনারী। ওটাই নাকি সন্দেহের কারন।
বললাম- সন্দেহ অমূলক নই-ওটা আমার অস্ত্রই বটে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা, তারপর আবার কষ্ট করে ব্যাগটা ঠিক করলাম।
আশেপাশে কারোর মধ্যে কোনো তোড়জোড় নেই! অবাক হলাম। বোর্ডিং পাশ দিবে তারাও কেও নেই। হঠাৎ খাটো ধরণের এক বড় অফিসারের আগমণ।
এই কে কোথায়, কি ব্যাপার সবাই কোথায়, একি অবস্থা, এরা কি কেও চাকরী করে না নাকি-- ইত্যাদি প্রলাপ বকছেন উচ্চ স্বরে। বোঝলাম উনি কত বড় অফিসার সেটাই আমাদের বোঝাচ্ছেন। একে একে ৩-৪ জন চলে আসলো। তখনও সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন। অফিসার আবার বকাবকি শুরু করলেন।
গায়ে জ্যাকটে কেনো? আপনার পোষাক কোথায়? কোথায় ঘুমাচ্ছিলেন বলুন। আর ২ জন কোথায় ঘুমাচ্ছেন। দাড়ীওয়ালা একজন অন্যজনের তদবীর করতে যেয়ে ব্যাপক ঝাড়ী খেলেন। আমরা মশার কামড়ের সাথে উনার অফিসারগীরি উপভোগ করলাম গভীর বাঙ্গালীত্ব বুকে নিয়ে।
যাক অবশেষে টিকিট দেয়া শুরু হলো।
প্রথমেই ওজন ফেকড়া। ৯০% এর লাগেজ অতিরিক্ত জিনিষে ঠাসা। অফিসারের ব্যাপক ধমকানীর জবাব এবার আসতে শুরু হলো ডিউটিরত কর্মীদের কাছ থেকে। পিছন থেকে উপভোগ করলাম-কিভাবে অফিসারের কাছ থেকে খাওয়া রাগ এবার যাত্রীদের ওপর উগরানো হচ্ছে। ৫ জন পর আমার সিরিয়াল।
টিকিট পেলাম। এবার ইমিগ্রেশন। ওমা ওখানেতো কেও নেই। ইমিগ্রেশন পুলিশ গেলো কোথায়!
বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। গ্লাসের এপার থেকে দেখলাম একজন মাথা নীচু করে ঝিমাচ্ছেন।
গেটে একজন বসে আছে-লেখালেখি দেখার জন্য। দেখালাম, কিন্তু উনি ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। আমরা বেশ কজন হবার পর উনি বললেন যান ভিতরে গিয়ে লাইনে দাড়ান। তখন প্রায় ৬.৩০ বেজে গেছে। বুঝলাম ৭.১৫ তেও বিমান উড়বে না।
দাড়িয়ে আছিতো আছিই। কেও নেই। ৩০ মিনিট পর এক এক জন যেনো আসছেন মৃত্যু কুপ থেকে। অবশ্য কিছুক্ষন আগে দেখলাম একজন গেল উনাদের ডাকতে। আবার শব্দও পাচ্ছি 'মোবারক ভাই ওঠেন, মখলেস ওঠ ওঠ'।
পুলিশগুলো সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। কি অবস্থা-ভাবুন একবার। আমি যে লাইনে আছি সেখানে তখন পর্যন্ত কেও নেই, যদিও পাশের লাইন থেকে প্রায় ১০ জন ভিতরে ঢুকে গেছেন। একজন আসলেন অবশেষে। দেখে মনে হচ্ছে উনি এখনও ঘুমের মধ্যে আসেন।
কথা বলতে সাহস পেলাম না। কিছুক্ষন কি সব ঘাটলেন, মনে হয় কোনো দরকারী ফাইল খুজে পাচ্ছেন না। ২০ মিনিট পর আমার পালা। কাজ হলো। আবার বসে থাকলাম।
এবার ফাইনাল নিরাপত্তা চেক। একবার উকি দিয়ে দেখি কেও নেই। বসে থেকে আবারও বিমান বন্দরের মশাগুলোকে সকালের নাস্তা করার সুযোগ করে দিলাম। ভাবলাম, খা-এবার খেয়ে নে। এই দেশে মানুষ মানুষকে খেয়ে নেই; আর মশাতো তো মশাই।
প্রায় ১৫ মিনিট পর হন্তদন্ত হয়ে একজন ঘোষনা দিলেন যারা সিঙ্গাপুর যাবেন আসুন আর লাইনে দাড়ান। দাড়ালাম, থাকলাম আরও ১০ মিনিট। বড় অফিসার মনে হয় আসেননি, তাই অপেক্ষা।
হ্যা লাইন এগুনো শুরু করলো। অবশেষে অয়েটিং রুমে ঢুকলাম।
ভাল একটা চেয়ার দেখে বসলাম। আগে থেকেই ধারনা হলো বিমান আজ সহজে ছাড়বে না। কুয়াশার যে অবস্থা! ক্রমেই কুয়াশা বাড়ছে। আমরাও অপেক্ষা করতে থাকলাম। অবশেষে ৮ টা বাজলো।
এক অফিসারকে দেখে সবাই উঠে দাড়ালো বিমানে যাবার জন্য। কিন্তু অফিসার বললেন, কুয়াশা আছে, আমাদেরকে আরও সময় দিন্। দিলাম। ২০ মিনিট পর উঠতে পারলাম।
তখন থেকেই চিন্তা করছি কটায় পৌছাবে।
যদি সিঙ্গাপুরে ৩ টায় হয় তাহলে ভার্সিটি হোস্টেলে চেক ইন করা যাবে না, বিকাল ৫টা বেজে যাবে। যাহোক ২.৩০ মিনিটে বিমান চাঙ্গিতে নামলো। যেখানে নামার কথা ছিল সকাল ৯.১৫ মিনিটে। যাহোক ভাল লাগলো, আসতেতো পারলাম। শীত থেকে বর্ষাতে আসলাম।
আমরা যখন নামছিলাম তখন ব্যাপক বৃষ্টি বাইরে। ভয়ই পাচ্ছিলাম লেন্ডিং এর সময়।
ট্যাক্সিওয়ালাকে জোরে চালাতে বলে কোনো রকম ৪.৪৫ মিনিটে হোস্টেল অফিসে আসলাম এবং চেক ইন করলাম।
একদিন রেস্ট ও পুরাতন কাজ গুছিয়ে এইতো আবার নেমে পড়লাম ব্লগ লেখায়, আশা করি এভাবেই থাকবো আপনাদের সাথে। কিন্তু বাংলাদেশ বিমানের এই অবস্থা শেষ হবে কবে? প্রধানমন্ত্রী কোন্ ডিজিটাল দেশ উপহার দিলেন আমাদের, যেখানে শুধুমাত্র ডিজিট বদলায়, সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলায় না! সত্যিই ঘেন্যা হয় ঐসব মানুষের প্রতি যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য অন্যের স্বার্থকে পদদলিত করেন।
বাংলাদেশে এমন অমানুষের সংখ্যাই বেশি। আসুন আমরা মানুষ হয়, দেশকে ভালবাসি। #
আবার অনুরোধ, যে বন্ধুরা বাংলাদেশ বিমানের এমন হাল বলে অন্য এয়ারলাইন্স ব্যবহার করেন তাদের মন্তব্য করার দরকার নেই। আপনারা সম্ভবত দেশপ্রেমিক তবে দেশে থাকতে চান না, বাংলাদেশ বিমানকে সমালোচনা করলে ক্ষ্যাপে যান অথচ বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমন করেন না। আমি বাংলাদেশ বিমানের সমালোচনা করি, ভাল চাই, এবং আগামীতে ভ্রমন করারও আশা রাখি।
এটা বোটেও বৈপ্যরিত্য নয়, বরং আত্মসমালোচনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।