...........অন্তরালে থাকব, তবুও ভাববো তোমায়......ভাববো তুমি ছিলে আমার কবিতার বনলতা সেন......
১. নাপিতের বিভ্রান্তিঃ
কোন এক শহরে সবাই নিয়মিত চুল কাটে। ওই শহরে একজনই নাপিত আছে। তার চুল কাটার ব্যাপারে সে নিজস্ব এক নিয়ম অনুসরণ করে, সে শুধু ওইসব লোকেদের চুল কাটে যারা নিজেরা নিজেদের চুল কাটেনা। এখন প্রশ্ন হল সে নিজের চুল কাটবে কি না?
ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করলে যে পয়েন্টগুলো চলে আসে তা হলোঃ
ঃ- নাপিত নিজের চুল কাটে না। অতএব তার নিজের নিয়ম অনুসারে সে তার নিজের চুল কাটতে পারবে বা সে তার নিজের চুল কাটে।
ঃ- নাপিত তার নিজের চুল কাটে। অতএব তার নিজের নিয়ম অনুসারে সে তার নিজের চুল কাটতে পারবে না।
ঃ- সে কখনই তার নিজের চুল কাটে না।
বাকিটা পাঠকের কাছে...
২. বেরির প্যারাডক্সঃ
ধরা যাক, ১ সংখ্যাটাকে আমরা ব্যাখ্যা করতে চাই বাংলা ভাষায়। তাহলে বলা যেতে পারে "যে সংখ্যার সাথে অন্য কোন সংখ্যা গুন করলে দ্বিতীয় সংখ্যাটির কোন পরিবর্তন হয় না।
" এটা বললে যে কেউ বুঝবে আমি ১ কে বোঝাচ্ছি। তেমনি "ক্ষুদ্রতম মৌলিক সংখ্যা" দ্বারা ২ কে আমরা বুঝতে পারি। আবার "বাংলাদেশের জেলার সংখ্যা" বললে আমরা সহজেই বোঝতে পারি ৬৪ কে বোঝান হচ্ছে।
খেয়াল করলে দেখা যাবে তিনটি বাক্যই কিন্তু ২০ এর চেয়ে কম সংখ্যক শব্দ দ্বারা গঠিত। তাহলে আমরা বলতে পারছি ১,২,৬৪ তিনটি সংখ্যাকেই ২০ এর চেয়ে কম শব্দের বাক্য দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
কিন্তু বাংলা ভাষায় নিশ্চয়ই শব্দ সংখ্যা সসীম। এই সসীম শব্দ দ্বারা নিশ্চয়ই অসীম সংখ্যক বাক্য গঠন করা সম্ভব নয় যাদের শব্দ সংখ্যা ২০ বা তার চেয়ে কম। কিন্তু ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যার (১,২,৩,৪,....) সংখ্যা কিন্তু অসীম। তাহলে অবশ্যই কিছু ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা রয়ে গেলো যাদের ২০ বা তার চেয়ে কম সংখ্যক শব্দের বাক্য দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এইরকম যাদের ২০ বা তার চেয়ে কম সংখ্যক শব্দের বাক্য দ্বারা প্রকাশ সম্ভব নয় তাদের আমরা একটা সেট হিসাবে চিন্তা করলে তার একটি ক্ষুদ্রতম উপাদান থাকবে।
মনে করি সেই ক্ষুদ্রতম সংখ্যাটি হল X। তাহলে X এর জন্যে আমরা বলতে পারি "ক্ষুদ্রতম সংখ্যা যাকে ২০ সংখ্যক শব্দের কমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। "
কিন্তু এই বাক্যাংশের জন্যে নিচের দুটি বক্তব্য সত্যঃ
ঃ- শব্দ সংখ্যা মাত্র ১০
ঃ- এই বাক্যাংশ দ্বারা কেবলমাত্র X কেই স্পষ্টরূপে প্রকাশ করা সম্ভব
এই যা! ২০ শব্দের কমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না এমন ক্ষুদ্রতম সংখ্যাকে কেবল ১০ সংখ্যক শব্দেই ব্যাখ্যা করা যায়। তাহলে তো "২০ শব্দের কমে ব্যাখ্যা করা যায় না" এমন সেটের কোন অস্তিত্বই থাকা সম্ভব নয়। ২০ শব্দের কমে গঠিত বাক্য সংখ্যা হতে পারে সসীম কিন্তু স্বাভাবিক সংখ্যা তো অসীম।
কিন্তু তবুও আমি বলতে পারছি না যে এমন কোন স্বাভাবিক সংখ্যা থাকতে পারে যাকে ২০ শব্দের কমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। কারণ এমন শব্দের মধ্যে যেটি সবচেয়ে ছোট তাকে ১০ শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। উফ!!!!!
৩. কোন খামটি নেবেন?
মনে করুন, আপনাকে দুটি খাম দেয়া হল। এর একটিতে যে পরিমাণ টাকা আছে অন্যটিতে তার দ্বিগুন পরিমাণ টাকা আছে। আপনাকে যে কোন একটি খাম খুলে দেখার কথা বলা হলো।
আপনি একটি খাম খুলে দেখলেন যে ওটাতে ১০০ টাকা আছে। এখন আমার প্রশ্ন হল আপনি কি ওই খামটি নেবেন নাকি অন্যটা নেবেন?
আমি ধরে নিলাম আপনি সম্ভাব্যতা সম্পর্কে জানেন না কিছু। সেইক্ষেত্রে অন্য খামটিতে কি পরিমাণ টাকা আছে আপনার সেটা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। হতে পারে সেটা ৫০ হতে পারে সেটা ২০০। সেইক্ষেত্রে আপনি যে কোনটা পছন্দ করতে পারেন।
এইবার ধরে নেয়া যাক সম্ভাব্যতা সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট পরিমাণ জানা আছে(অথবা সামান্য হলেও জানেন)। আপনি ভেবে দেখলেন অন্য খামটিতে ৫০ টাকাও থাকতে পারে ২০০ টাকাও থাকতে পারে। দুটো থাকার সম্ভাবনাই সমান, ০.৫, তাহলে অন্য খামটি থেকে আপনি যে পরিমাণ টাকা আশা করতে পারেন তা হল -
০.৫*৫০ + ০.৫*২০০ = ১২৫
বাহ! এতো ১০০ টাকার চেয়ে বেশি, জলদি জলদি খামটা বদলে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে!!!!
কিন্তু ঘাপলা তো একটা রয়েই গেলো। বুদ্ধি খাটালে দেখা যাবে অন্য খামটির কোন বিশেষত্ব নেই আসলে। ধরা যাক, কোন একটা খামে A পরিমাণ টাকা আছে তাহলে একই যুক্তিতে অন্য খামটিতে আশা করা টাকার পরিমাণ হবে-
০.৫*(A/২) + ০.৫*(A*২) = ১.২৫
এইটা A এর চেয়ে বড়।
তার মানে আপনি যখনই কোন খাম নেবেন, কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে অন্য খামে আশা করা টাকার পরিমাণ বেশি হয়ে যাবে।
এ তো বিরাট হ্যাপা!!!
সাধারন মানুষ সম্ভাব্যতা না জেনে ভাল সিদ্ধান্ত নেবে আর গণিত বিশারদেরা আজীবন "এই খাম না ওই খাম" করতে থাকবে!!!
আপনি হলে কি করতেন????
৪. থমসনের বাতিঃ
থমসন সাহেবের বাতিটা এমন একটি বাতি যা একটা নির্দিষ্ট সময়ে হয়ত শুধু জ্বলে থাকতে পারে বা নেভানো থাকতে পারে। এটাকে সুইচের মাধ্যমে জ্বালানো বা নেভানো যায়।
ধরা যাক, থমসন সাহেব একটা স্টপওয়াচের চালু করে দিয়ে বাতিটিকে জ্বালিয়ে দিলেন। ঠিক ১ মিনিট পর সেটাকে নিভিয়ে দিলেন।
আবার ৩০ সেকেন্ড পর সেটাকে জ্বালিয়ে দিলেন আবারো ১৫ সেকেন্ড পর সেটাকে নিভিয়ে দিলেন। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে ২ মিনিট পর বাতিটি কি জ্বলন্ত অবস্থায় থাকবে নাকি নেভানো অবস্থায় থাকবে?
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো,
১ মিনিট + ৩০ সেকেন্ড + ১৫ সেকেন্ড + ৭.৫ সেকেন্ড + ... ... ... = ২ মিনিট
ধরা যাক, ২ মিনিটের মাথায় বাতিটি জ্বালানো ছিল। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি একটা ক্ষুদ্র সময় Δt আগে বাতিটি জ্বালানো হয়েছে এবং এর মাঝে বাতিটি আর নেভানো হয়নি। মানে ঠিক (২ - Δt) মিনিটের মাথায় বাতিটি জ্বালানো হয়। এখন, এটা লক্ষণীয় যে ২ - Δt < ২ সুতরাং এটা অবশ্যই সময় ব্যবধানের ধারায় সসীম সংখ্যক পদের যোগফল হবে, মানে,
২ - Δt = ১ মিনিট + ৩০ সেকেন্ড + ১৫ সেকেন্ড + ৭.৫ সেকেন্ড + ... ... ... (n তম পদ পর্যন্ত)
এখন এ সমীকরণের উভয় পাশে (n + ১) তম পদ যোগ করে পাই,
২ - Δt + (n + ১) তম পদ = ১ মিনিট + ৩০ সেকেন্ড + ১৫ সেকেন্ড + ৭.৫ সেকেন্ড + ... ... ... n তম পদ + (n তম পদ)/২
এটা স্পষ্ট যে সমীকরণের ডানপক্ষ যেহেতু এখনো সসীম ধারাকে নির্দেশ করছে সেহেতু ২ - Δt + (n + ১) < ২; বুন্তু এটাও ঠিক যে, ২ - Δt + (n + ১) > ২; মানে [২ - Δt + (n + ১) তম পদ]-এ বাতিটি নেভানো অবস্থায় ছিল।
এটা আমাদের পূর্বানুমানের সাথে বৈপরীত্য প্রকাশ করছে। সুতরাং ২ মিনিটের মাথায় বাতিটি জ্বলে থাকতে পারে না।
এই রকম যুক্তি দিয়ে দেখানো যায়, ২য় মিনিটের মাথায় বাতিটি নিভেও থাকতে পারে না।
তাহলে????
৫. ব্যনারডেট এর প্যারাডক্সঃ
গ্রিক পুরাণে প্রমিথিউস নামে এক টাইটান ছিলেন। তিনি দেবতাদের কাছে থেকে আগুন চুরি করে মানুষের কাছে এনে দেন।
এতে দেবতার রাজা জিউস ক্ষেপে যান ভারী। ফলস্বরুপ অসীম সংখ্যক দৈত্য দিয়ে তিনি এক সেনা গঠন করেন।
১ম দৈত্যকে নির্দেশ দেন "এক ঘন্টার মধ্যে প্রমিথিউস না মরলে তুমি তাকে মেরে ফেলবে। " ২য় দৈত্যকে নির্দেশ দেন "আধা ঘন্টার মধ্যে প্রমিথিউস না মরলে তুমি তাকে মেরে ফেলবে। " ৩য় দৈত্যকে বলেন "পনের মিনিটের মধ্যে প্রমিথিউস না মরলে তুমি তাকে মেরে ফেলবে।
" এভাবে অসীম সংখ্যক দৈত্যকে নির্দেশ দিয়ে তিনি অলিম্পাসের চূড়ায় বসে তার ছেলেপুলেদের সাথে খোশগল্প করতে লাগলেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে দৈত্যরা জিউস এর কাছে ফিরে এলো।
এতে অন্য দেবতারা বেশ রুষ্ট হলেন। আরে এভাবে যদি জিউস যাকে তাকে যখন তখন মেরে ফেলার নির্দেশ দেন তাহলে দেবতাদের আর মন ইজ্জত থাকলো কোথায়। তারা জরুরী সভা ডাকলেন।
সেখানে অন্য সব দেবতা জিউসকে বললেন, "যে দৈত্য প্রমিথিউসকে মেরেছে তাকে আপনি শাস্তি দিন, তাহলে মোটামুটি মাথাটা বাঁচানো যাবে। "
জিউস বললেন, "সেটা সম্ভব নয়"
- "কেন?"
- "কারণ, আমার বা আপনার কারো পক্ষেই আসলে খুঁজে বের করা সম্ভব নয় কে আসলে প্রমিথিউসকে মেরেছে। "
- "এটা কিভাবে সম্ভব?"
- "দেখুন, ১ম দৈত্যকে বলা হয়েছিল ১ ঘন্টার মধ্যে প্রমিথিউস না মরলে তারপর তাকে মারতে। ২য় দৈত্যকে সময় দিয়েছিলাম আধা ঘন্টা, ৩য় দৈত্যকে ১৫ মিনিট ইত্যাদি।
এখন খেয়াল করে দেখুন, যেকোন দৈত্যের পরই আরো অনেক দৈত্য আছে যারা ঐ দৈত্যের চেয়ে কম সময় অপেক্ষা করছিলো প্রমিথিউসকে মারার জন্যে।
বিষয়টা অনেকটা এরকমঃ
যদি n তম দৈত্য t সময় অপেক্ষা করে প্রমিথিউসকে হত্যা করে বলে ধরে নেই তাহলে (n + ১) তম দৈত্য আসলে t/২ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করেই প্রমিথিউসকে মেরে ফেলেছে। সুতরাং n তম দৈত্যের পক্ষে আর প্রমিথিউসকে মারা সম্ভব না। "
- "তার মানে??"
- "আমার দৈত্যদের মাঝেই কেউ একজন প্রমিথিউসকে মেরেছে তবে কে মেরেছে সেটা বের করা সম্ভব না। "
!!!!!!!
কেমন হল ব্যাপারটা ???
আরো কিছু ছোট প্যারাডক্সঃ
ঃ- এই বাক্যটি সত্য হলেই কেবল ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিদ্যমান।
ঃ- সাঁতার শিখার আগে তুমি কিছুতেই পানিতে নামতে পারবে না।
ঃ- শহীদুল্লাহ হলের এক ছাত্র বললো, ওই হলের সব ছাত্রই মিথ্যে কথা বলে।
ঃ- আধুনিকায়নের অনুশীলন করো সবখানে, এমনকি আধুনিকায়নেও।
ঃ- আমি জানি যে আমি আসলে কিছুই জানিনা।
ঃ- ওই রেস্টুরেন্টে কেউ যায় না, কারণ ওটাতে সবসময় ভিড় থাকে।
ঃ- মানুষ ইতিহাস থেকে এইটা শিখে যে, মানুষ ইতিহাস থেকে কিছুই শিখেনা।
ঃ- এই বাক্যটা মিথ্যে।
ঃ- আমি যদি ভুল না হই, পৃথিবী এক হপ্তার ভিতর ধংস হয়ে যাবে।
ঃ- এই মেসেজটা পেয়ে থাকলে ফোন করো আমাকে, না পেয়ে থাকলে টেনশন করো না আমি ঠিক আছি।
ঃ- Please ignore this sentence...
ঃ- প্রত্যেকটা সুত্রেই ব্যতিক্রম আছে, এইটা ছাড়া।
আর সব শেষে সেই পরিচিত "ডিম আগে না মুরগী আগে??"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।