আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিপুরার মন্ত্রীর ঢাকায় গোপন সফরে সাবরুম-রামগড় পয়েন্টে ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

কি বলব

শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে সাবরুম-রামগড় পয়েন্টে ফেনী নদীর ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারত এই ব্রিজের ওপর দিয়েই পণ্য সরঞ্জাম নিয়ে যাবে তার মূল ভূখন্ড থেকে স্থল বেষ্টিত পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরাসহ অন্যান্য রাজ্যে। ভারতকে করিডোর দেয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ। অতি গোপনীয়তার সাথে ত্রিপুরার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরী গত সপ্তাহে ঢাকায় এসে এ বিষয়ে চূড়ান্ত দেন-দরবার সেরে গেছেন। বাংলাদেশের কোন সংবাদ মাধ্যমে জিতেন চৌধুরীর এই গোপন সফরের খবর প্রকাশিত না হলেও ভারতীয় মিডিয়ায় তার সফরের ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত খবর পরিবেশিত হয়েছে।

ভারতীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আগামী মাসেই ফেনী নদীর ওপর সাবরুম (ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে)-রামগড় (বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত) পয়েন্টে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। দু'দেশের অফিসিয়ালরা এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতীয় পণ্য ও যন্ত্রপাতি এই ব্রিজ পার হয়ে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে যাবে ত্রিপুরাসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য ৭ অঙ্গরাজ্যে। খবরে বলা হয়, জিতেন চৌধুরী গত ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং বাণিজ্য মন্ত্রী ফারুক খানের সাথে ঢাকায় সাক্ষাৎ করেছেন। এই সাক্ষাতে উভয় দেশের বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক উন্নয়নে কতিপয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের সিনিয়র কয়েকজন কর্মকর্তা যৌথভাবে এ মাসের শেষেই রামগড় ও সাবরুম এলাকা পরিদর্শন করবেন। তারপরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঐ পয়েন্টে ফেনী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। জিতেন চৌধুরী ঐ পত্রিকাটির সাথে টেলিফোন আলাপে একথা জানিয়ে বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ করতে ১৩ কোটি ভারতীয় রুপি খরচ হবে। এতে শুধু ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহই লাভবান হবে না, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহই লাভবান হবে। বাংলাদেশের মন্ত্রীদ্বয়ও ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাথে বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং জনগণের মাঝে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।

যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনে বাংলাদেশের মন্ত্রীরা আগ্রহী। ভারতীয় পত্রিকার খবরে আরো তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাবরুম-রামগড় সীমান্তবর্তী প্রস্তাবিত এই ব্রিজটির দূরত্ব মাত্র ৭৫ কিলোমিটার। ব্রিজটি নির্মাণে বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে বলে জিতেন চৌধুরী ভারতীয় ঐ মিডিয়াকে জানিয়েছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারই এই ব্রিজ নির্মাণের অর্থ দিবে বলেও জানিয়েছেন ত্রিপুরার মন্ত্রী।

সাবরুম ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি সীমান্তে অবস্থিত। এই ব্রিজ নির্মিত হলে আমদানি রফতানি ছাড়াও পর্যটন শিল্পেরও উন্নয়ন ঘটবে বলে জানান ঐ মন্ত্রী। বাংলাদেশে তার ঐ সফরকালে আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ বিষয়েও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে বিভাগ এই আখাউড়া থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরবর্তী ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে বলে জানান মন্ত্রী। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে সম্পাদিত ৫০ দফা যৌথ ইশতিহারে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সাবরুম-রামগড় সীমান্তকে অন্যতম কানেকটিভিটির পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়। ফেনী নদীর ওপর এই পয়েন্টে ব্রিজ তৈরি হলে ৫০ দফার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারত তার দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ ভূখন্ড দ্বারা অনেকটা বিচ্ছিন্ন ল্যান্ডলক এলাকা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ অঙ্গরাজ্যেই চলছে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন। ভারত এটাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে আসছে। এই অঞ্চলে সৈন্য, রসদ, গোলাবারুদ পাঠাতে ভারতকে ২ থেকে আড়াই হাজার কিলোমিটার বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দিতে হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে করিডোর সুবিধা পেলে তা অনেক সহজ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সমুদ্রপথে পাঠাতে পারলে রামগড়-সাবরুম পয়েন্ট দিয়ে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ভারত ত্রিপুরা পৌঁছতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারত মূল ভূখন্ড থেকে পণ্য ও সরঞ্জাম উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে নিয়ে যাওয়া ছিল ভারতের দীর্ঘদিনের দাবি। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার সেই দাবি ১৬ কলায় পূর্ণ করতে যাচ্ছে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।