আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহবাগ আন্দোলনের আদ্যন্ত

কবিতার মাঝে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। শাহবাগ আন্দোলনের আদ্যন্ত শিরোনামে কিছু কথাকলি একেবারেই জমাট বেঁধেছে মনে হয় চিন্তার প্রায় শেষ সমারোহে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বদরুদ্দিন উমর সমেত চিন্তাবিদ ও লেখনীর নির্যাসে প্রায় তা-ই প্রতীয়মান হচ্ছে। আসলে শাহবাগ আন্দোলনে তারুণ্যের যে গণজোয়ার এসেছে স্বাধীনতাত্তোর এ স্বাধীন বাংলাদেশে তার পিছনের যোগানশক্তি কে বা কি তা’ নিঃসন্দেহে একটি সমাপনী ঈঙ্গিত দিচ্ছে বৈ কি। যেমন ধরা যাক বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন পেরিয়ে সে ‘৭১ এর গণঅভূত্থানের ডাকে যে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছিল সে আবালবৃদ্ধবণিতার নিঃশর্ত আস্ফালনে- চাহিদায় তার গোড়ার শক্তি কি ছিল- কে ছিলেন? সহজ উত্তর '৭১ পূর্ব পাকিস্তানী দুঃশাসন আর শোষণের (আর্থিক শোষণ বা Economic disparity) অবসানে বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব- বঙ্গবন্ধুর আহ্বান।

এককথায় সব শেষ হয়ে গেল। আসল স্বাধীনতা। যা’ সকলেরই জানা। কিন্তু আজ? আজও কি তাই? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী তো গেল ৪২ বছর ধরেই চলে আসছে দেখছি। গণযোয়ার তো হয়নি? আজকের গণজোয়ারের সে মুখোম্মোচন হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে।

যার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার হবে, নিরপেক্ষ রায় হবে আইনের ধারায়। কারণ আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তার নিরপেক্ষ বিচার হবেই সে যে-ই হউক। কিন্তু যে গণজোয়ার যুব-যুবাশক্তি বা তারুণ্যের যে গণজোয়ার সেদিন ‘৭১ পূর্ব গণজোয়ারের অবয়বে সে তোফায়েল, মাখন, সিদ্দিকী, রব’দের গগণভেদী চিৎকারে এসছিল তা’ ছিল বাংলা ভাষাভাষি সকল মানুষের মাটি থেকে সম্পৃক্ত সমস্ত শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে চার আনা দিস্তা কাগজের ইস্যুতে। আজও গণজোয়ার বা তারুণ্যের জোয়ার ঐ একই লাগাতার শোষণ শাসনে তার নির্যাতনের বিরুদ্ধেই এসছে।

একই আঙ্গিকে বিচারের দাবীতে সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যেই বলে আমাদের মনে হচ্ছে। কারণ ‘৫২ থেকে ঊনসত্তর অবধি সে শোষণ আর শাসনের অবসানের পথ বঙ্গবন্ধু বন্ধ করে দিয়ে গেলেও এদেশে গণমানুষের নামধারী রাজনৈতিক দলগুলো-প্লাটফর্ম গুলো আজও মানুষকে সে অব্যাহতি বিশেষ করে আর্থিক মুক্তি দিতে পারে নি-দেয়নি। এমন কোন আর্থিক মুক্তির ইঙ্গিতই জনগণ পায়নি-আমি আপনিও পায়নি। পৃথিবীতে যত শোষণ অত্যাচার অবিচার হয়েছে তার বিরুদ্ধেই জনগণ সোচ্ছার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মুক্তি চেয়েছে-মুক্ত জীবনযাপনের লক্ষ্যে, একমাত্র লক্ষ্যে।

যার ব্যতিক্রম আজও নয়। এই গণজোয়ার-এদেশের মানুষকে একটি পরিচ্ছন্ন ও নিশ্চিত মুক্ত আর্থিক ভবিষ্যৎ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বলতেই হবে। যা’ প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। কারণ এদেশে আজ কোন ন্যায় বিচার নেই। মানুষ খুন হলে বিচার পাওয়া যায় না।

যে যুবক মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম হয় তার চাকুরী হয় না। মামার জোর, টাকার জোর, এই জোর সেই জোরে-ই চলছে ৪২ বছর যা’ ’৬৯ এর তোফায়েল, মাখনরাও সেদিন চায়নি। মানুষ এদ্দিন একটা ক্ষেত্র খুঁজেছে মুক্তির। আর সে মুক্তির শেষ উচ্চারণ-শেষ মারণাস্ত্র আজকের শাহবাগ চত্ত্বরের এ গণজোয়ারের। কারণ গণজোয়ার এত সহজে কোন দিন কোন দেশে হয়নি।

স্বাধীনতার পর কোন দেশে এ অল্প সময়ে হয়নি। ইউরোপীয় সামন্ত যুগে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের (Reformation) পর প্রতিসংস্কার আন্দোলনে (Counter-reformation) যার ধারা ছিল পৃথিবীতে ভিন্নতর নিষ্পেষণের। কিন্তু এ ডিজিটাল পৃথিবীতে জাতির পিতার স্বাধীনতার দেশে ৪২ বছর পর আবার গণজাগরণ এক অভাবিত আচরণ এবং নিঃসন্দেহে মানব মুক্তির আর্তি। এক ভয়ানক আর্তি বৈ কি। আমি নিশ্চিত সে ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের একজন অন্ধ ও যৌক্তিক অনুসারি হয়ে আমিও তাই বলছি।

স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমাকে তাই বলতে আমার মনন উদ্বুদ্ধ করছে। আর তারই শেষ পরিণতি হউক আজকের এ নতুন প্রজন্মের সমস্ত আকূতি-আর শাসন নিষ্পেষণের আর নির্র্যাতনের সু-সমাপ্তির মাধ্যমে। সুমতি হউক সকল রাজনৈতিক দলের। সুমতি হউক আরেকবার- শেষ বার সে কল্যাণকামী বা Welfare state of "Democracy is for the people, by the people & of the people" এর সে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সঙ্গায়। শিক্ষা হউক রাজনীতিবীদ সমেত এদেশের মানুষনামী শোষণকারী সকল হায়েনাদের।

এ গণজোয়ার মানুষের আত্মার আর্তির- সকল বাঙ্গালীর আর্থিক মুক্তির। এক্ষণের উগ্র রাজনীতির আস্ফালন থেকে মুক্তির। যার মুক্তি একমাত্র রাজনৈতিক ঐক্যেই সম্ভব। আবার বলছি সকল ইস্যুর সমাধান একমাত্র রাজনৈতিক দল বিশেষ করে আওয়ামীলীগ, বিএনপির ঐক্যমতেই সম্ভব এবং নিজ ও দলীয় স্বার্থ ছেড়ে দেশের মানুষের সার্বিক স্বার্থেই সম্ভব। যেখানে নতুন প্রজন্মের নতুন মুখরা আজকের শিক্ষা নিয়ে আসবে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এ গণজোয়ারের শপথে।

পুরাতন পাপে আবিষ্ট জরাজীর্ণদের বাদ দিয়ে। ইউরোপীয় প্রতিসংস্কার আন্দোলনের মতোই একটি স্থায়ী শান্তির প্রতীক হয়ে। সে ঈধঃযড়ষরপরংস এর গোঁড়ামীর মাথায় সে Catholicism বা প্রতিবাদীদের শান্তির বাণী নিয়ে যা’ সমগ্র পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছে সে চড়ঢ়ব দের নাগপাশ ছিন্ন করে। আর তাই আজ জনতার ধিক্ক্ এ ৪২ বছরের চোরা-গুপ্তা অপশাসনের। তাই সকল অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে আজ ‘৭১ রোত্তর স্বাধীনতার সে নির্লোভ সোনালী দিনের অপেক্ষায় আবারও আমাদের সোনার এ দামাল ছেলেদের এক স্বপ্নীল দেশের প্রত্যাশায়-স্বার্থক হউক এ জণজাগরণে যুদ্ধাপরাধীর বিচার সমেত সকল অপশক্তির তিরোধ্যনে।

বয়ে আনুক এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক স্বপ্নীল-স্বাধীন ভূমির। আবির্ভূত হউক দ্রুত সে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার। মোদ্দাকথা হলো রাজনীতির পরিধি মানেই যুগোপযোগী অকুতোভয় সিদ্ধান্ত-যৌক্তিকতা। আর এগুলোর অবসানেই-অনুপস্থিতিতেই আসে রাষ্ট্রে অরাজকতা-অনৈতিকতা-বখাটের দৌরাত্ম সমেত সব। সেগুলোকে সৎ সাহসের সঙ্গে নির্মুল করাই রাষ্ট্র নায়কদের কাজ।

যেমন করেছিলেন প্রাচীনকালের বিশ্ব সম্রাট অশোক মধ্যযুগীয় সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি, সম্রাট আকবর সমেত বিশ্ব বরেণ্য রাজাবাদশাগণ। এদেশে আওয়ামীলীগ, বিএনপি দু’টোই মুক্তিযোদ্ধার দল। তাদের মিলনে বা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এহেন দুর্বৃত্তপনার অবসান কোন ব্যাপারই নয়। অথচ তাঁরা দূর থেকে তাদের স্ব-স্ব প্লাটফর্মে যার যার বাক্যুদ্ধ করে আর যার যার পেটুয়া বখাটেদের পেট ভরায়। ফলে সে ’৫২ থেকে ’৭১ এর স্বাধীনতাত্তোর ৪২ বছরেও শোষণের-অপশাসণের কোনই পরিবর্তন হয়নি।

আজ বোধ হয় নবপ্রজন্ম তথা গণজোয়ারের দামাল ছেলেরা এটা সম্যক উপলদ্ধি করেছে ভুক্তভোগী হয়েই। এ দুটো দল মিলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে যত অপশাসন এই ৪২ বছরে হয়েছে তার সব কিছুর সমাধান করবে এটাই এ গণজোয়ারের আদ্যন্ত বা উজ্জ্বল দীপ্তীর শেষ ঝঁলক। পৃথিবীর ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় এহেন দুর্বিত্তায়নের নাগপাস থেকে কোন জাতিকে নির্মুক্ত শান্তিপ্রদান কোন ব্যাপরই নয়। তার চেয়ে অনেক বড় বড় বিদ্রোহ যেমন সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে অদম্য শিবাজী সমেত বুড়ি বুড়ি প্রমাণ ইতিহাসে রয়েছে। যেগুলোর অবসান করেও রাজারা প্রজাকে ঘুমোতে দিয়েছে।

ভয়াল ঠগি দমন করে রাজারা প্রজাকে শান্তিতে রেখেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের এদেশের দু’টো মুক্তিযোদ্ধের দলকেই তাদের হীনশক্তিকে জিঁইয়ে রাখতে এহেন জাতীয় দুর্ভোগের মূল শক্তি বলা যায়। আমরা চায় তাদের সুমতিতে ’৭১ এর আর শাহবাগের আজকের প্রজন্মের জাগরণে স্বার্থক সমাপ্তি হউক-জাতিকে এক অন্ধকরাচ্ছন্ন পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধার করা হউক। জাতিকে সার্বিক মুক্তি দিয়ে নির্ভিক-বলিষ্ঠ পদক্ষেপে। এছাড়া ৪২ কেন তিন ৪২ গেলেও তার কল্পনা হবে বৃথা-শুধুই বৃথা।

শাহবাগের আন্দোলনের আদ্যন্ত ’৭১ এর সে বঙ্গবন্ধুর ডাকেরই প্রতিফলন আমি বলব। সেদিন আবালবৃদ্ধবণিতা তথা সমস্ত বাঙালী জাতির মুক্তির জন্যে পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে-সুন্দর দেশ প্রাপ্তির আশায় গণজাগরণের সূচনা করেছিল। তার কোন কিছুই এ ৪২ বছরে হয়নি বিধায় কোন স্বস্তিঃর ঐক্যমতে জাতি রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে পায়নি বলে আজ শাহবাগে সে গণজাগরণেরই পুনরাবির্ভাব ঘটেছে মাত্র। আর এখানেই আজকের শাহবাগ গণজাগরণ তার আদ্যন্তের দাবীদার। কারণ কোন দেশে কোন জাতিই তার সোনার হরিণ স্বাধীনতার পর এভাবে যুগ যুগ একটা জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করে জনগণকে নিষ্পেষিত করেছে, হয়রানি করেছে তার প্রমাণ নেই।

যা’ আজ আমাদের অনুভব করতেই হবে। মানতেই হবে। জাতীয় ঐক্য বা যার মাধ্যমেই সবকিছুর সমাধান সম্ভব। কেয়ারটেকার বা যেকোন স্থায়ী সমাধানেরও পথ সম্ভব। দগুলোকে আজ সমমনা ও ত্যাগী কর্মীদের আহ্বানে ঐক্যমতে আসতে হবে।

সে ফালতু মিয়া আর মন্তু মিয়াদের বাদ দিয়ে-স্তুতিবাদকারীদের বাদ দিয়ে। দেখবেন ’৭১ এর স্বপ্ন স্বার্থক হবে, দ্রুত এদেশ ঐক্যমতে পৌঁছবে সব অপশাসন শোষণ আর বিচার সম্মন্ন করে এক প্রকৃত সোনার দেশে পরিণত হবে। যেখানে বিশ্বচিড়ে বাঙালি ’৭১ এর স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে সেখানে বাঙালি জাতি ঐক্যমতে এহেন সমস্যাগুলোকে এক পলকে সমাধান করতে পারবে। যা’ আজ গণদাবী বা গণজোয়ার যাই বলি। আর আজকের এ প্রজন্ম তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রাপ্তির আশায় ’৭১ এর সে নির্মল প্রাপ্তির আশায়-ই নির্মল মনে খোলা মনে জড়ো হয়েছে তাদের আস্তানায়।

শৃঙ্খলের নাগপাসকে মুক্ত করে একটা প্রকৃত স্বাধীন নির্মল স্বপ্নীল দেশের আশায়। প্রজন্ম চত্ত্বরে আজকের নবজাগরণ তাই বলছে। কোন একক রাজনৈতিক দল বা রাজনীতি জাতীয় দর্শন-বঙ্গবন্ধুর ’৭১ এর দর্শন আর যাই বলি কার্যকরি করতে পারে না। ইতিহাসে নেই। যেকোন জাতীয় দর্শনকে সার্বজনীন ভাবে সমর্থন ছাড়া জাতীয় মুক্তি সম্ভব নয়।

আজকের প্রজন্ম চত্ত্বরের জাগরণ স্বার্থক হউক। একজনকে আরেকজন ব্যঙ্গ করে, জাতীয় স্বার্থে প্রতিপক্ষ হয়ে সার্বিক মুক্তি কখনই আসতে পারে না। একথা আজ সর্বজনবিদিত। দ্বিধাবিভক্ত না হয়ে ঐক্যমতের এ সম্মিলন আজ তাই বড্ড্ই জরুরি। আর তা’ একমাত্র জাতিয় স্বার্থে।

যে ঐক্যমত সারা জাতিকে-আপনাকে আমাকে সার্বিক সমস্যা থেকে দেবে এক অমেয় শান্তি-আত্মার প্রশান্তি। এ প্রজন্মের গণজাগরণ এ প্রশান্তির ডাকই দিচ্ছে। সমস্ত কালিমা দূর করে ’৭১ এর সে মূলমন্ত্রকে প্রতিফলিত করে আবার। ওরা আজ দীর্ঘ উপেক্ষিত স্বাধীনতার স্বাধ চায়-প্রাপ্তি চায়। কাজেই এ জাগরণ নিরপেক্ষ-ন্যয্য জাগরণ।

তাই অন্যথায় সে পঙ্কিলতা আর অনিশ্চিৎ অঁন্ধকার গোঁহারই আভাস দিচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি। (প্রফেসর মোঃ মুখলেছুর রহমান), ময়ূখ, ৮৭৫, কলেজপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মোবাইলঃ ০১৭১৫-৯৫২৭৩৩। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.