আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশের প্রায়োগিক আন্দোলন শুরু #যশোরের দু’গ্রামে ৬০ পরিবারে পরীক্ষামূলক ছাগলদান



যশোর: শাহনাজ বেগম। বয়স চল্লিশের মত। চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। এসেছেন তাদের এলাকার ছোট্ট স্কুলমাঠটিতে। আজ তাদের মাঝে বিলি করা হবে ছাগী।

৩০ পরিবারের মধ্যে ছাগীগুলো দেবে মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। যশোর সদরের আরবপুর ইউনিয়নের একটি আদর্শ গ্রাম সুজলপুর। এখানকার ছোট্টস্কুল মাঠে শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে আসেত্ম আসেত্ম গ্রামের কতিপয় দরিদ্র মানুষ সমবেত হন। আসেন ঢাকা থেকে মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ নামক সংগঠনটির আহ্বায়ক রইসউদ্দিন আরিফ, সদস্যসচিব রুহুল আমিনসহ যশোরের বিশিষ্ট কয়েকজন। শাহনাজ বেগমের স্বামী নূর ইসলাম।

পেশায় ভ্যানচালক। ছেলে সোহাগ ছোটদোকানি, মেয়ে বিউটি স্থানীয় একটি হাইস্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। একটি ছাগী তার জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি যা বললেন তাতে বিমোহিত না হয়ে পারা যায় না। শাহনাজ বলেন, মাসছয়েক আগে তিনি তার সাংসারিক প্রয়োজনে দুটি ছাগলের বাচ্চা (খাসির) বিক্রি করেন ৩৪শ’ টাকায়। যা দিয়ে তিনি একটি বাছুর কিনতে পারতেন।

গ্রামে ছাগল-গরু পোষা তেমন কষ্টের না। খাবারের জন্য বেশি ভাবনা-চিনত্মাও লাগে না। তার মতে, এই ছাগী ছয়মাসে দুটি বাচ্চা দেবে। মানে বছরে পাওয়া যাবে চারটি। যদি বেঁচে থাকে তবে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয় এ থেকে একটি গাইগরু কেনার।

তিনি মনে করেন, সৎ আশা থাকলে, ঠিকমত লালনপালন করলে এখান থেকে অনেক বড় কিছু পাওয়া সম্ভব। অপর একজন ছাগল নিতে এসেছেন, নাম তার বাশকী রানী। স্বামী পরিত্যক্তা এই মহিলা তার বাবা পাঁচু দাশের সাথেই থাকেন। তিনি বলেন, যারা ছাগল দিচ্ছেন তাদের মজার দুটি শর্ত। একটি হচ্ছে দানের এই ছাগী বিক্রি বা খাওয়া যাবে না, এবং দ্বিতীয় পত্তনে এই মা ছাগলের থেকে পাওয়া একটি হালোন (মেয়েছাগল) মুক্তিআন্দোলনকে দিতে হবে।

অপর শর্ত হচ্ছে তারা দুটি আমগাছ ও কাঁঠালগাছ সরবরাহ করবে যা তাদের বাড়িতে লাগাতে হবে। এ দুটি শর্ত আমরা মেনেই এখানে এসেছি। শাহনাজ, বাশকী, ববিতা, মাধুবালার মত ত্রিশ পরিবারের সদস্য এসেছিলেন সুজলপুরের স্কুলমাঠে। আরো আসেন স্থানীয় গণ্যমান্যরা। একইভাবে একই ইউনিয়নের পাকদিয়া গ্রামের ৩০ পরিবারের সদস্যদের মাঝে দেয়া হয় ত্রিশটি ছাগী।

কথা হয় মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশের মুখপত্র বিশিষ্ট সাংবাদিক কলাম লেখক বেনজীন খানের সাথে। তিনি বলেন, অভাবি মাত্রই পরাধীন। খাদ্যে সার্বভৌমত্ব বজায় থাকলেই কেবল খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত হয়। এই জীবনে তাত্ত্বিক ও পারলৌকিক আলোচনা অনেক হয়েছে। এখন তার প্রয়োগের সময়।

ক্ষুধার্ত মানুষকে বস্তুর মাধ্যমেই কেবল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার সংগ্রামে সম্পৃক্ত করা সম্ভব। পরকালের শানিত্ম বা শাসিত্মর ভয় দেখিয়ে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনা কত দুরূহ তা আমরা দেখেছি। বেনজীন খান বলেন, অভাবমুক্ত করার কৌশল হিসেবে মুক্তিআন্দোলন যশোরের দুটি গ্রামকে মডেল হিসেবে নিয়েছে। এখানকার মানুষকে তারা তাদের সংগঠনের সদস্যদের থেকে জাকাত, ফিতরা ইত্যাদি দানের যে টাকা সংগ্রহ হয়, সেখান থেকে প্রায় এক লাখ টাকার ছাগী কিনে পরীক্ষামূলকভাবে এ দু’গ্রামের মানুষকে দেয়া হচ্ছে। যদি এর ফলাফল ইতিবাচক হয়, তবে তা আসেত্ম আসেত্ম দেশের প্রায় ৬ কোটি দরিদ্র পরিবারে বিস্তৃতি লাভ করবে।

কাঁঠাল ও আমগাছের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সেইসব মানুষকে দেশীজাতের একটি করে কাঁঠাল ও আমগাছ সরবরাহ করবো, যারা মুক্তিআন্দোলন থেকে ছাগী নিয়েছেন। এ দুটি গাছের পাতা ছাগলের খাদ্য, পরিবেশ সহায়ক, পাখিরা বসবে এসব গাছে। এই দু’গ্রামে তারা দু’বছর কাজ করবেন বলে জানান। ‘আমরা কৃষকদের বলব, তোমরা সব ধান চাষ করো ক্ষতি নেই। কেবল নিজেদের খাবার জন্যে দেশিজাতের ধানচাষ করো।

পতিত জমি বলে কোন জমি নেই-এটা বিশ্বাস করতে হবে। কেননা ঐ জমিতে তোমার গরু, ছাগল চরে। অর্থাৎ, তুমি দুধ পান করবে অথচ গবাদিপশুর খাদ্যের কথা চিনত্মা করবে না-তা হবে না। ’ বললেন তিনি। বেনজীন খান মনে করেন, উৎপাদনের উপায়ের প্রতি যদি কৃষকের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় তবেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে; কৃষক হবে স্বাবলম্বী ।

মুক্তিআন্দোলন কি একটি এনজিও-এমন প্রশ্নের জবাবে তার অভিমত, এক কথায় এটি এনজিও আবার এনজিও নয়। অর্থাৎ এটি বিদেশী সাহায্যনির্ভর কোন সংস্থা নয়, সে হিসেবে এটি এনজিও নয়। আবার সরকারি সাহায্যপুষ্ট কোন সংগঠনও নয়, কয়েকজন মুক্তমনের মানুষ যারা এ সমাজটিকে তাত্ত্বিকভাবে নয়, বৈষয়িক অর্থে পরিবর্তন করতে চাইছে, তাদেও সংগঠন। সে অর্থে একে বেসরকারি সংস্থা বা সংগঠন বলা যায়। তিনি বলেন, এরই মধ্যে গ্রামের সেইসব মানুষকে মোটিভেট করা হয়েছে যারা বুঝেছে ক্ষুদ্র্ঋণের বেড়াজালে আটকে নিজেদের আর তারা সর্বনাশ করবে না।

একটি ছাগী থেকেই ধীরে ধীরে তারা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে সহমত পোষণ করবে। একইসাথে কাঁঠাল আর আমগাছের চারা লাগানোর মাধ্যমে সবুজ বাংলাদেশের পত্তন করবে। সহমর্মিতা, ভালবাসা, দেশের প্রতি মমত্ববোধের জায়গা থেকে এসব মানুষের বোধোদয় হবে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলেই কেবল দারিদ্র্যের মারণ ছোবল থেকে তারা মুক্তি পাবে। সেই আন্দোলনে দেশের গরিব মানুষ জাগ্রত হবে- এ বিশ্বাস থেকে মুক্তি আন্দোলন বাংলাদেশের জয়যাত্রা এ বিশ্বাস সংগঠনের আহ্বায়ক রইসউদ্দিন আরিফ, সদস্যসচিব রুহুল আমিনসহ সকলের।

#

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।