অবশেষে বুয়েটে চান্স পেল তারিক। সেই ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ওর বুয়েটে পড়ার। অবশেষে তা সত্যি হল। তারিকের খুশি দেখে কে! কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে একটু বিমর্ষ ও। অনেক আগে থেকেই শুনে আসছে বুয়েটের ছেলেদের পিছনে মেয়েরা নাকি মেগা সিটি বাসের মতই লম্বা লাইন দেয়।
সারাদিন মেয়েদের ফোন রিসিভ করে আর ডেটিং করে নাকি বুয়েটের ছেলেরা পড়াশুনার টাইমই পায় না। তাই পরীক্ষার আগে স্যারদের বলে কয়ে পরীক্ষাটা একটু পিছিয়ে নেয়। কিন্তু কিসের কী! রেজাল্ট দেবার পর পাঁচ মাস হয়ে গেল এখনও কোন মেয়ে তো ভাল একটা মাছিও ফোন দিল না!
শেষ পর্যন্ত নতুন একটা উপায় বের করল তারিক। ওর এক বন্ধুর কাছে খবর পেল টিউশনি করতে গেলেই নাকি সব ছাত্রী বুয়েটের ছেলেদের প্রেমে পরে যায়। ওদের এলাকার ফাহাদ ভাই তো এভাবেই ছয় মাস পর পর টিউশনি ও গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে আসছেন।
শেষমেষ ভেবে চিন্তে ও পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দিল। ‘পড়াব’। ও যে পড়াতে চায় সেটা মানুষকে জানাতে হবে তো। বুয়েট-ইলেকট্রিকাল এইসব লেখার সাথে সাথে ফোন নম্বরটাও দিল। পরের শুক্রবার দৈনিক প্রথম আলোতে ছাপা হল বিজ্ঞাপন।
যদিওবা বিজ্ঞাপন কিন্তু পেপারে নিজের নাম ছাপা হওয়ায় নিজেকে খুব হোমরা-চোমরা মনে হতে লাগল তারিকের।
যা হোক বিকেল হতে না হতেই তারিকের মোবাইলে একের পর এক ফোন আসতে লাগল। বিজ্ঞাপনে কাজ হচ্ছে দেখে তারিক খুশি হলেও এখনো পর্যন্ত পছন্দমত টিউশনি না পাওয়ায় কিছুটা বিরক্তও তারিক। ওর চাহিদা খুব সামান্য। টাকা পয়সা কোন বিষয় না।
জাস্ট একটা সুন্দরী ছাত্রী চাই। কিন্তু কেন জানি শুধুমাত্র ছাত্রদের মা-বাবারাই ওকে ফোন করার জন্য বেছে নিলেন। ও ফোন ধরে প্রথমেই স্টুডেন্টের স্কুল-কলেজের নাম জানতে চায়। ছেলেদের স্কুল হলে খুঁজে পেতে একটা অজুহাত দিয়ে না করে দেয়। যেমন একজনকে বলল আংকেল আমার বাসা হতে যাত্রাবাড়ি অনেক দূর হয়ে যায়।
কিংবা আন্টি আমি আপনার ছেলেকে ডেইলি এক হাজার টাকা অনারিয়াম পেলে পড়াব। এসব শুনে আর গার্ডিয়ানরা বেশিদূর এগোন না।
রাত আটটার দিকে আবার ফোন বেজে উঠল তারিকের। অনেক আশা নিয়ে আবারো ফোন রিসিভ করল সে। সালাম দিয়ে প্রথমেই কোন স্কুল জানতে চাইল সে।
আইডিয়াল স্কুল শুনে তো মহা ঝামেলায় পড়ল। ছেলে না মেয়ে বুঝবে কীভাবে। শেষমেষ জিজ্ঞেস করেই ফেলল ছেলে না মেয়ে। ছেলে শুনে আবার অযুহাত খোঁজা। আংকেল বনানী তো আমার বাসা থেকে অনেক দূর।
আংকেল বলে, প্রব্লেম নেই। আমি গাড়িতে করে তোমাকে পৌঁছে দেব। এখন কি বলবে। টাকা কত নেবে শুনে তারিক বলল পার ডে বারশ না হলে পড়াবে না। ভাবল এই কথা শুনে ব্যাটা ভাগবে।
কিন্তু কিসের ভাগাভাগি। উনি বলে, ওকে! খাইছে। উপায় নাই। তারিক বারশ কেন বার হাজার ডেইলি পেলেও কোন ছেলেকে পড়াতে রাজি নয়। দ্রুত ফোন কেটে দিল সে।
কিন্তু লোকটাও নাছোড়বান্দা। আবার কল দিল তারিককে। তারিক ফোন ধরে বলে, হ্যালো আংকেল কিছু শোনা যাচ্ছে না। বলে এবার মোবাইল অফ করে দিল। মেজাজটাই গেল বিগড়ে।
ছাত্রী তো পেলই না উল্টো মোবাইল অফ করে রাখা।
পরদিন সকালে ভয়ে ভয়ে মোবাইল অন করল সে। অন করার কিছুক্ষণ পরই ফোন। তারিকের মেজাজটাই গেল আবার খারাপ হয়ে। নাহ্ সিমটাই চেঞ্জ করতে হবে ব্যাটার যন্ত্রণায়।
কিন্তু, দেখল না অন্য নাম্বার। কিছুটা বিরক্ত হয়েই ফোন ধরল। হয়ত আবার কোন ছাত্রের বাবা-মা হবে। কিন্তু এবার বুঝি ঈশ্বর তারিকের ডাক শুনলেন। স্লামালেকুম বলার পরই ওপাশ থেকে ভদ্রমহিলা বললেন, তুমি কি আমার মেয়েকে পড়াতে পারবে? ভি,এন,সিতে পড়ে ও।
একে তো মেয়ে তারুপর আবার ভি,এন,সি! শুনে তারিক তো পারলে একশ হাত লম্বা লাফ দেয়। ভদ্রমহিলা তারিককে বিকেলে কথা বলার জন্য বাসায় আসতে বললেন। তারিক তো দুপুর হতেই সেজেগুঁজে ফুলবাবু হয়ে বিকেলের অপেক্ষা করতে লাগল। তারিকদের বাসার কাছেই ওদের বাসা। তারিক ভাবল ভালই হল।
কিন্তু বাসায় গিয়ে শুনল সামনের মাস থেকে মিরপুর গিয়ে পড়াতে হবে। ওখানে থাকবে সে। হোক ধানমন্ডি হোক মিরপুর কোন ব্যাপার না। তারিক পড়াবেই। বলল, অ্যান্টি কোন অসুবিধা নেই।
আমি যেতে পারব। অ্যান্টি তারিককে টাকা-পয়সার কথা জিজ্ঞেস করলেন। তারিক বলে, অ্যান্টি আপনি খুশি হয়ে যা দেন। অনেক চাপাচাপি করেও তারিকের মুখ থেকে অ্যান্টি টাকার কথা বের করতে পারলেন না।
যা হোক পরদিন হতে তারিক পড়াবে বলে ঠিক হল।
অ্যান্টি মেয়েকে ডাক দিলেন, সাদিয়া এদিকে এস তো। তারিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। তারিক তো সাদিয়া দেখে পুরো থ। এত সুন্দরী মেয়ে জীবনে দেখে নাই সে। মনে মনে নিজের ভাগ্যের তারিফ করতে লাগল।
জিজ্ঞেস করল, কোন কোন সাবজেক্ট পড়াতে হবে? অ্যান্টি বললেন, মেইনলি অংক, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি। আর তোমার কি বায়লজি ছিল? তারিক বলে, শুধু বায়লজি নয় অ্যান্টি আমার বাংলা, ইংরেজি সবই ছিল। সাদিয়ার যে কোন বিষয়েই প্রবলেম হলেই যেন আমাকে দেখায়। মনে মনে বলল, পড়াশনার বাইরের প্রবলেম হলেও আপত্তি নেই।
এমন সময় কলিংবেল বাজল।
একজন টাক মাথা ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। নিশ্চয় সাদিয়ার বাবা। তারিক সালাম দিল, স্লামালেকুম আংকেল। কিন্তু আংকেল কোন জবাব দিলেন না। একটু অবাক হল তারিক।
লোকটা কি সালাম শুনতে পায় নি।
অ্যান্টি পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। তারিক ও হল হাসান। সাদিয়ার হাজবেন্ড। খুব ব্রিলিয়ান্ট ছেলে।
ক্যালটেক থেকে গ্রাজুয়েশন আর মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। আগামী মাসে মিরপুরে সাদিয়াকে নিয়ে উঠবে। তাই তোমাকে মিরপুরে গিয়ে উঠতে হবে।
তারিক নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। বলে কী! এই টাকলা আংকেল সাদিয়ার জামাই! ব্রিলিয়্যান্টের খ্যাতা পুঁড়ি।
এই রকম টাকলা আংকেলের বউ মানে একজন অ্যান্টিকে পড়ানোর জন্য ডাকা হয়েছে ওকে। ভাবতেই তারিক বিষম খেল। বলে, অ্যান্টি পানি খাব।
পানি খাবার পর তারিক বলে, অ্যান্টি আমার বাসা থেকে তো মিরপুর অনেক দূর। আপনি বরং অন্য কাউকে দেখেন।
অ্যান্টি বললেন, সে কী তুমি না বললে তোমার প্রবলেম নেই? না মানে ইয়ে অ্যান্টি রাস্তায় যা জ্যাম। আচ্ছা অ্যান্টি আমি না হয় আপনাকে রাতে কনফার্ম করি? অ্যান্টিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উঠে দাঁড়াল ও।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তারিক ভাবে, ধ্যাত পুরো বিকেলটাই মাটি গেল। কাল হতে আবার নতুন উদ্যমে ছাত্রী খোঁজার কাজে লেগে যেতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।