যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
টিআইবি বা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানটি আর দশটা প্রতিষ্ঠানের মত নয়। এদের কাজকর্মে পুঁজি, মুনাফা বা বিভিন্নভাবে কায়দা কৌশল করে সম্পদের মালিক হওয়ার ব্যাপার নেই। তার পরও যেহেতু এটা বাংলাদেশ, এবং যেখানে দুর্নীতি সতত একটি "রাষ্ট্রীয় উৎসবের" মত ব্যাপার, সতত "অবশ্যকরণীয়" ব্যাপার, সেখানে টিআইবির কর্তা ব্যক্তি বা সেখানে কর্মরত বিভিন্ন লোকজন একেবারে দুধে ধোয়া তুলসিপাতা আমরা তেমন কোন দাবিও করছি না। কিন্তু তারা পুলিশকে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত বলায় পুলিশের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এই বিষয়টিকে এক ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। এই প্রতিক্রিয়া যদি "দেশ রক্ষা" বা "সার্বভৌমত্ব রক্ষা"র মত "পবিত্র" হয়ে ওঠে তাহলে হয়ত আগামীতে আমরা দেখব টিআইবি নামক প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি তদন্তের বদলে দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বিডি নিউজ ২৪ ডট কম এর খবরটাকে আমরা একটু ভিন্ন মাত্রায় প্রবন্ধ আকারে উপস্থাপন করছি।
পুলিশকে 'সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত' হিসেবে চিহ্নিত করা টিআইবি'র প্রতিবেদন যাদের মতের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে তাদের পরিচয় প্রকাশের দাবি তুলেছে পুলিশ বিভাগ।
এটা কেমন কথা? এই পুলিশ কর্তারা কি সাধারণ নমর্সগুলোও জানেন না! একজন সাধারণ শ্রমজীবি মানুষও জানেন যে আদালতে দাঁড়িয়ে যখন কোন সাক্ষী স্বাক্ষ্য দেয় তখন তার নিরাপত্তা, গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব আদালত তথা সরকারের উপর বর্তায়। ঠিক তেমনিভাবে টিআইবি জনসাধারণের যে অংশের স্বাক্ষ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেই স্বাক্ষ্যদাতাদের তথ্য, তাদের পরিচয়, তাদের ঠিকানা গোপন এবং সংরক্ষিত রাখা টিআইবর দায়িত্ব। আর সরকারের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা দেয়া।
ভাবতে অবাক লাগে, ক্ষমতা ব্যবহারের একচ্ছত্র অধিকার অধিকর্তা ব্যক্তিবর্গকে কতটা উদ্ধত করে তোলে!
এ ধরণের জরিপ চালানোর সময় পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বেসরকারি সংস্থাকে রাখার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপ) কমিশনার বেনজির আহমেদ।
বাহ! কি অদ্ভুত আব্দার! টিআইব বা ওই ধরণের কোন প্রতিষ্ঠান এই জাতির কলঙ্ক মোচনের যে সামান্য চেষ্টাটুকু করে সেখানেও পার্টিজান সংস্থা পুশ করা! ওই ধরণের একটি "পুলিশ মনোনীত" সংস্থা পুশ করা মানেই পুলিশের বিরুদ্ধে আর কোন অভিযোগ আলোর মুখ দেখবে না। এই ধরণের শত শত ঘটনা দেখা যায় পুলিশের অপকর্ম তদন্ত করতে যখন পুলিশেরই একটি দলকে নির্বাচিত করে দেয়া হয় তখন। কাকে যেমন কাকের মাংস খায় না, তেমনি পুলিশও পুলিশের 'মাংস' খায় না। তদন্ত হোক বা না হোক, তা কখনো আলোর মুখ দেখবে না।
দেখে না।
সোমবার বিকালে পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিচয় প্রকাশের ওই দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, "এরা জঙ্গি, না মাদকসেবি, না ব্যবসায়ী তা জানতে হবে। এরা পুলিশের সেবা পেয়েছে কি না বা এদের মধ্যে কারা পুলিশকে ঘুষ দিয়েছে তাও জানা প্রয়োজন। "
দেখুন কী অলঙ্ঘনীয় ল্যাঠা! জনগণ যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তারা পুলিশের ভাষ্যে হয় জঙ্গি, না হয় মাদকসেবী, না হয়ত ব্যবসায়ী। কেন, এরা ছাত্র, শিক্ষক, দোকানদার, কেরাণী, মুটে মজুর, রিকশাচালক, গৃহিনী, ড্রাইভার হতে পারে না? নাকি পুলিশের বিরুদ্ধে সাক্ষাৎকার দিলেই তারা বাইডিফল্ট জঙ্গি, মাদকসেবী হয়ে যায়? যেমন পুলিশ, রেব যখন এনকাউন্টার মতান্তরে বন্দুকযুদ্ধ মতান্তরে ক্রসফায়ার করে তখনও এই তোতাপাখির বুলি আউড়াতে দেখা যায়।
"মৃতদেহের পাশে একটি পিস্তল, তিনটি গুলিভর্তি ম্যাগজিন এবং কয়েকটি খালি ফেন্সিডিলের বোতল ও গাঁজা পাওয়া যায়"! এখানেও পুলিশ ধরেই নিয়েছে ওই সাক্ষাৎকারদাতারা নিশ্চিতভাবেই ক্রিমিনাল।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
তারাই তো করবেন! এতে অবাক হওয়ার কি আছে? অ্যাসোসিয়েশন বুঝতে পেরেছে আগে আনঅফিসিয়ালি পাবলিকরা এসব বলত। যুগ যুগ ধরে বলে আসছেও। তাতে করে তেমন কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি নেই, কারণ পাবলিকের কথা শুনতে হবে এমন কোন হাদিস নাই।
রাষ্ট্রীয় কোন বাধ্যবাধকতাও নাই। কিন্তু টিআইবি বলা তো পাবলিকের বলা নয়! এটা যে রেকর্ড! এটার কারণে জাতিসঙ্ঘের মিশনটিশন ছুটে গেলে কি উপায় হবে!!
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক একেএম শহীদুল হক টিআইবি'র প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, "এর পেছনে যড়যন্ত্র আছে বলে আমি মনে করি। এটা রহস্যজনক এবং অন্য কোন উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে। "
নিশ্চই স্যার। ষড়যন্ত্র তো একটা অবশ্যই আছে।
আর সেই ষড়যন্ত্রের নাম দায়বদ্ধতা। টিআইবি প্রতি বছর বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতির খতিয়ান এবং সে কারণে অর্থনীতির উন্নয়নের অন্তরায়গুলো তুলে ধরে। সেই ধারাবাহিকতায় পুলিশ আসবে এটা তো ন্যাচারাল সিলেকশন! যেখানে যেখানে দুর্নীতি হয় সেই সেক্টরগুলোই তো "অপারেশন" তালিকায় উঠে আসবে। এর পেছনে আর কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা আমাদের জানা নেই, তবে টিআইবিকে স্বচ্ছ আর জবাবদিহিতার ভেতর থাকতে হলে যেখানে যেখানে দুর্নীতি হয় সেখানে হাত দিতেই হবে। এবং তা নির্মোহভাবেই।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রতিবেদন সম্পর্কে পুলিশ বিভাগ যে মন্তব্য করেছে তা রাজনৈতিক। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। তবে আমরা যেসব গবেষণা করি তা বিজ্ঞানসম্মত, বস্তুনিষ্ঠ এবং আর্ন্তজাতিক মানের। "
"আমরা জনগণের অভিজ্ঞতা ও মতামত প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। "
দ্যাটস গুড! মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে।
পিপলস ওয়ান্ট রাইট টু নো।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে পুলিশকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসাবে চিহ্নিত করে ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশকে সর্বাধিক ঘুষগ্রহীতা বলেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এই খতিয়ান আরো বাড়তো যদি টিআইবি আরো বেশি সময় নিয়ে একেবারে রুট রেভেল পর্যন্ত গবেষণা বিস্তৃত করত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন রোববার টিআইবি'র ওই প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন।
এই মন্ত্রী সাহেবার বিষয়ে কিছু বলতেই বিরক্ত লাগে। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি কি করে একটি সংস্থার লোকজনের মুখে ছাই ঘসে দেয়ার কথা প্রকাশ্যে বলতে পারেন!
সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একেএম শহীদুল হক বলেন, "পুলিশের বিরুদ্ধে এই নেতিবাচক প্রতিবেদনে অনেকের মনোবল ভেঙে গেছে যার প্রভাব আগামী পৌর নির্বাচন ও বিশ্বকাপের পড়তে পারে। "
খুবই খোঁড়া এবং খেলো অজুহাত। একারণে যদি মনোবল ভেঙ্গেই যায় তাহলে অমন ঠুনকো মনোবলের কি দরকার? মনোবল ছাড়াই পাবলিক যে হারে প্যাদানি খাচ্ছে তাতে করে মনোবল কমে গেলে বরং পাবলিক কিছুটা রেহাই পায়।
আন্তর্জাতিকভাবে যখন পুলিশের সুনাম বাড়ছে, জাতিসংঘ মিশনে পুলিশ সাফল্য দেখানোয় যখন চাহিদা বাড়ছে সেসময় এধরণের 'প্রচারে' পুলিশে কালিমা লেপন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোখলেছুর রহমান।
বলেছিলাম না! এই সেই আসল কথা! আন্তর্জাতিক মিশন! জাতিসঙ্ঘ! যে করেই হোক ওই "সুনাম" রক্ষা করতেই হবে, তা না হলে ডলার এবং টাকা উভয় কারেন্সিতে বেতনের কি হবে!! ডলার, বাড়ি, গাড়ি, জমি. ফ্ল্যাট. ডুপ্লেক্স.....ব্লা ব্লা।
এ প্রতিবেদন বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে শহীদুল হক জানান, "এ ব্যাপারে সংগঠনের সব সদস্যের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। আইনজীবিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। "
লে হালুয়া! আইনের আশ্রয় নিয়ে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার? শেষে আবার কেঁচে না যায়!
শহীদুল হক দাবি করেন, "টিআইবি পুলিশ, জনপ্রশাসন এবং বিচার বিভাগকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিয়ে প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি অঙ্গের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে ক্ষুণ্ণ করে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের ষড়যন্ত্র করছে কি না তা বিবেচনার দাবি রাখে। "
এটা নিয়ে এখন দেশজুড়ে গবেষণা ,পর্যবেক্ষণ, বাদানুবাদ, চাপান উতোর চলতেই পারে।
আইনি লড়াইও চলতে পারে। তবে সেটা পুলিশ, সরকার তথা এই জাতির কোনই মঙ্গলে আসবে না, বরং বিশ্বের দরবারে নিজেদের ভীষণ রকম হাস্যস্পদ করে তুলবে। ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজা পুলিশের ট্রেনিং ,চাকরি এবং নৈপুণ্যের একটি অংশ। সুতরাং এব্যাপারে মোটেই অবাক হওয়ার সুযোগ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।