একবার আপনারে চিনতে পারলে রে , যাবে অচেনা রে চেনা
শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর আমাদের ধূর্ত রাজনীতির এক জটিল ফাঁদে পেঁচিয়ে গেছে(প্রায়)। এ্ই ফাঁদের নাম ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। শুরু থেকেই বিশেষ একটি চক্রের পক্ষ থেকে একে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছিল। শেষ পযন্ত তারা মোটামুটি সফল হয়েছে এই আস্তিক-নাস্তিক বিতর্ক আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সূত্র ধরে। শাহবাগ প্রজন্ম ও এই ফাঁদে ভাল ভাবেই পা দিয়েছে।
নিজেদের ধার্মিক প্রমানের জন্য তারা এখন প্রানান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। যদিও এই আন্দোলনের সাথে ধার্মিক-অধার্মিকের সম্পর্ক নেই। কিন্তু সম্পর্ক যে নেই সেটাই কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা করছেন না। (এখানেই ধার্মিকের সাথে ধর্মান্ধদের পার্থক্য। ধার্মিকরা বুদ্ধি কাজে লাগান, ধর্মান্ধরা বুদ্ধি কাজে লাগান না)।
এবং সবশেষে কাদের মোল্লা বা অন্য কোন যুদ্ধাপরাধী নয় আপাতত প্রজন্মের দৃষ্টি মাহমুদুর রহমানের দিকে। এই মূহুর্তে বলতে পারি মাহমুদুর রহমান সফল। গত কয়েক বছর ধরে উনি এই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছেন। হি ইজ এ ক্রেইজি এ্যটেনশন সিকার। এই ক্ষেত্রে তার সাথে তসলিমা নাসরিন, জয়নাল হাজারী বা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের বিশেষ মিল পাই।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকবে কি থাকবেনা এটা সেনসিটিভ ইস্যু। জামাতীরা এই চান্সটাই নিয়ে নিয়েছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে খড়্গটা শুধু জামাত নয় আরো অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ওপরও পড়ে। ফলে এক্ষেত্রে জামাত এবং অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলগুলো এক লাইনে এসে যায়। এতে জামাতের সুবিধা, কারণ তাদের দল ভারী হয়।
অপর দিকে এটাই প্রজন্ম চত্বরের অসুবিধা। কারণ তাহলে প্রতিপক্ষের কলেবরটা বেড়ে যায়্, শক্তিও বেড়ে যায়। বিষয়টা মোটা দাগে দেখলে অহেতুক সেধে সেধে শত্রু বাড়ানো। এটাই শাহবাগ আন্দোলনের টেকনিক্যাল সমস্যা। সমস্যাটা আওয়ামীলীগেরও।
কারণ শাহবাগ থেকে তারা চূড়ান্ত ফায়দাটা লুটতে চায়। তারা বিপদে পড়তে চায়না এবং তারা ইসলামবিরোধী তকমাটাও গায়ে মাখতে চায়না। এটা আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক হিসাব। তবে শাহবাগের তরুনদের আদর্শিক লড়াই কিন্তু সেটা না। শুরু থেকেই তারা সকল ধর্মান্দ্ধ প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে।
কারণ জামাতদের মত দলগুলো তাদের সকল কুকর্মের বৈধতা খোঁজে ধর্মের আবরনের ভেতরে। ভবিষ্যতেও তারা বা তাদের মত আর কেউ যাতে রাজনীতির কূট কৌশল হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়টা ও তো নিশ্চিত হওয়া জরুরী।
কিন্তু ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা কি আদৌ সম্ভব? আসল উত্তরটি হলো ‘না’। সম্ভব না। কারণ তারা সাধারণ মানুষ কে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে এই সব ইসলাম ভিত্তিক দল আর ইসলাম ধর্ম সমার্থক।
তারা না থাকলে এদেশে ইসলাম ও থাকবেনা। ঠিক যেমনভাবে বলা হতো পাকিস্তান না থাকলে এদেশে ইসলাম থাকবেনা। কিন্তু তারপরও অনেক কথা আছে। বাংলাদেশে এই মূহুর্তে ধর্মভিত্তিক দল কয়টি আছে। এক জামাতে ইসলামী ছাড়া বাকিদের নাম হয়তো কেউ ঠিকমত বলতেও পারবেনা।
ইসলাম প্রেমীরা যে ধর্মভিত্তিক দল না থাকলে ভাবছে এদেশ থেকে ইসলাম উঠে যাবে, মজার ব্যাপার হলো সেই তারাই আসলে রাজনৈতিক দল হিসেবে এদের একেবারেই পুছে না। এদের অধিকাংশ দলই নাম বা ব্যানার সর্বস্ব। ইসলামী দলের মধ্যে এক জামাত-এ-ইসলামই যা একটু এগিয়ে। রাজনীতি নিয়ে যারা বিভিন্ন জরিপ করেন তাদের মতে এদেশের টোটাল ভোটের মাত্র ২ শতাংশ পায় জামাত। বাকিদের অবস্থা শোচনীয়।
এদের অধিকাংশেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এদের অনেকেই দুইটি আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনা। তাহলে কি এই ইসলামী জনতা কিংবা তাদের ভাষ্য মত ৯০ শতাংশ মুসলিমই আসলে এদের উপর ভরসা করতে পারেনা? এটা কি দ্বৈত আচরণ নয়?
বিএনপি ধর্মভিত্তিক দলগুলো চালু রাখার ব্যাপারে খুব সোচ্চার। জাতীয় পার্টি তো আরো সরেস। এরা এদেশে জনপ্রিয় দল।
অথচ এরা কিন্তু নিজেদের ধর্মভিত্তিক দল বলে ঘোষণা করেনা। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার কথা ও বলেনা। তাহলে এটা কি স্ববিরোধীতা নয়? হিপোক্রেসী নয়? আওয়ামীলীগও এই হিপোক্রেসীর মধ্যেই আছে। এই হিপোক্রেসীর শিকার কারা? এদেশের সাধারণ মানুষ, ধার্মিক-অধার্মিক সকলেই।
যে মানুষগুলি গত শুক্রবারে উন্মত্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাস্তায় এরাও কিন্তু এদেশের মানুষ।
সাধারণ মানুষ। এভাবে মসজিদের গালিচায় আগুন লাগানো বা সাংবাদিক মারাটা এদের হবি না। ওরা আমার মতই আম পাবলিক । ওরাও শান্তিপ্রিয়্, আমি অন্তত এটা বিশ্বাস করি। এরা সবাই ধর্মব্যবসায়ী নয়।
অধিকাংশই হয়তো কোন উপার্জনই করেনা। এরা অধিকাংশই মাদ্রাসার ছাত্র। এরা আসলে কোন দলই করেনা। জামাতে ইসলামী না, নেজামে ইসলামী না, হেফাজতে ইসলামও না। তবে এদের ক্ষেপিয়ে দেওয়া খুব সহজ।
তাই যখন তখন যে কোন ব্যানার ওয়ালা এদের ব্যবহার করে। যতদিন ধর্মভিত্তিক দল থাকবে ততদিন এরা ব্যবহৃত হতেই থাকবে। আমরা ধর্ম নিয়ে যখন তখন উন্মত্ত হইনা। মসজিদের গালিচা পোড়াই না। তবে আমরাও কোন না কোন ভাবে ব্যবহৃত হই।
এখানেই আমাদের সাথে ওদের মিলটা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।