বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে দই তৈরি হয় না এমন জায়গা নেই। তবে স্বাদ আর মান বগুড়ার দইকে নিয়ে গেছে এক অনন্য অবস্থানে। এ জেলার প্রায় ১০০ দোকানে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার দই বেচাকেনা হয়। সে হিসেবে বছরে বিক্রি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। প্রবাসীদের আগ্রহের কারণে বগুড়ার দই পেঁৗছাচ্ছে কানাডা, ফিলিপাইন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ বহু দেশে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, দই রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। শুরু হয়েছিল বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর এলাকায়। ১৯৬০-এর দশকের দিকে গৌরগোপাল পালের সরার দই তৈরি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। বগুড়ার নবাব পরিবার ও সাতানি পরিবারের কাছে দই সরবরাহ করতেন এ কারণে সে সময় তাঁর দই 'নবাববাড়ির দই' নামে পরিচিতি পায়। এখন নবাববাড়ির পাশেই গৌরগোপালের ছেলে দিবাকর চন্দ্রপাল 'গৌরগোপাল দধি ভাণ্ডারে' বসে দই বিক্রি করছেন।
স্বাধীনতার পর দই তৈরিতে শহরের গৌরগোপাল, মহরম আলী ও বাঘোপাড়ার রফাত আলীর নাম ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ছোট ছোট মাটির পাত্রে (স্থানীয় ভাষায় হাড়া) ফেরি করেই দই বিক্রি হতো।
গৌরগোপাল ও মহরম আলীর পর বগুড়ার দইঘরের আহসানুল কবির দই তৈরি ও বাজারজাতকরণে নতুনত্ব আনেন। তিনি ছোট ছোট হাঁড়িতে দই বানানো শুরু করেন। প্যাকিং ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায়ও আনেন অভিনবত্ব।
বগুড়ায় মনোরম ও সুসজ্জিত শোরুমে দই বিক্রির চল শুরু তার মাধ্যমেই। সেটা ১৯৯০-এর দশক শুরুর দিকের কথা। দইঘরের ম্যানেজার আবুল খায়ের জানান, প্রবাসীদের আগ্রহে মাঝেমধ্যে বিশেষভাবে প্যাক করে বিদেশেও পাঠানো হয় তাঁদের দই।
বর্তমানে বগুড়া শহরের চেলোপাড়ার কুরানু, নবাববাড়ির রুচিতা, কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া, বিআরটিসি মার্কেটের দইবাজার, মিষ্টিমহল, সাতমাথার চিনিপাতাসহ ২০/২৫টি দোকানে দই বিক্রি হয়। আবার শহরের বাইরে বাঘোপাড়ার রফাত, শেরপুরের রিপন দধিভাণ্ডার, সৌদিয়া, জলযোগ, বৈকালী ও শুভ দধিভাণ্ডার থেকে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হয়।
দই-মিষ্টির দোকান এশিয়ার ম্যানেজার দিপু আলী জানান, আগে কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা দই বিক্রি করেন পাত্রের মাপে। এশিয়ার স্পেশাল দইয়ের দাম সরাপ্রতি ১১০ টাকা। এছাড়া সাধারণ দই প্রতি পাত্র ৮০/৯০ টাকা ও সাদা দই ৮০ টাকা। এছাড়া বাজারে প্রতি হাঁড়ি দইয়ের মূল্য ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর সরার দই বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয় বগুড়ার দই।
বগুড়া দইঘরের মালিক আহসানুল কবির বলেন, তাঁরা বগুড়ার দইয়ের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে প্রতিযোগিতার বাজারে কিছু লোক মান নিয়ে আপস করায় বগুড়ার দইয়ের সুনাম ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।