আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইব্রাহিম খালেদ ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের টক শো - প্রসংগঃ ইসলামী ব্যাংকিং

গতকাল সময় টিভিতে সম্পাদকীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জনাব আফজাল এবং বিশিষ্ট ব্যাংকার জনাব ইব্রাহিম খালেদ। প্রসংগঃ ইসলামী ব্যাংকিং। আলোচনায় বক্তারা ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং তা কতটা শরীয়া সম্মত তা নিয়ে বিশ্লেষন করেন। জনাব ইব্রাহিম খালেদ একজন স্বনামধন্য ব্যাক্তি হিসেবে বাংলাদেশে সুপরিচিত। পুরো আলোচনায় তিনি খুবই অল্প বক্তব্য দেন এবং বলেন যে, "প্রোফেট" যেহেতু ইসলামী ব্যাংকিং করেননি তাই এ ধরনের ব্যাংকিং "বিদয়াত"।

সত্যি অবাক হতে হয় তার মত একজন ব্যক্তি যিনি আমাদের রাসুল (সাঃ) কে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নাম নিয়ে উল্লেখ না করে একাধিকবার প্রোফেট বললেন, তিনিই কিনা আবার ইসলামী ব্যাংকিং কে বিদয়াত বলে ফতওয়া দিয়ে দিলেন। আমার প্রশ্ন তিনি কি জানেন, আমাদের রাসূল (সাঃ) তার জীবনের সিংহভাগ অংশ ব্যবসা করে কাটিয়েছেন এবং তিনি বিবি খাদিজা (রাঃ) এর সাথে যে নিয়মে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন তার অনুকরনেই বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাননীয় মহাপরিচালক, যিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছেন, যার অপসারনের দাবীতে মুসল্লীরা ব্যপক আন্দোলন-বিক্ষোভ করেছেন তিনিই মূলত কালকের আলোচনার মূল প্রাণ ছিলেন। টক শো টিতে কাল তিনি একাই কথা বলে গেছেন পুরো সময়। তিনি নিজেই কাল বলেছেন তিনি নিজে মাদ্রাসা শিক্ষিত নন।

শতকরা ৮২ % মুসলমানের এই দেশে যখন তার মত শিক্ষিত লোকের ইসলামী ফাউন্ডেশনের মত সংস্থার কর্ণধার হন তাহলে বোঝাই যায় তার থেকে জাতি কি পেতে পারে। তিনি বলে গেলেন, কিভাবে ইসলামী ব্যাংকের টাকা কম্পেনসেসনের নামে জঙ্গী অর্থায়নে ব্যবহারিত হয়। বলে গেলেন, ইসলামী ব্যাংক মানুষের সাথে কিভাবে প্রতারণা করে। তিনি ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া কাউন্সিল কে সাধারন একটা সমিতির সাথে তুলনা করেন। এ কাউন্সিলে যারা আছেন তারা নাকি ইংরেজী বোঝেননা।

তার আলোচনায় মূলত ডঃ আবুল বারাকাতের দেয়া বক্তব্যেরই প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। তিনি নিজে ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে কতটুকু জানেন জানিনা কিন্তু যে ধরনের বক্তব্য তিনি দিলেন তা নিতান্তই ইসলামী ব্যাংকের প্রতি বিষোদগার ছাড়া কিছুই না। ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া কাউন্সিল বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এবং এ কাউন্সিলের সদস্যরা প্রত্যকেই ধর্ম, ইসলামী আইন, শরীয়া ও অর্থনীতি সম্পর্কে অগাধ পান্ডিত্য রাখেন, যা জাতীয় আলেম সমাজ দ্বারা স্বীকৃত। এ কাউন্সিলের সদস্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও অধ্যাপক আছেন, অথচ জনাব আফজাল বললেন তারা নাকি ইংরেজী জানেননা।

ব্যাংকের যে অর্থ সরাসরি সুদের সাথে মিশ্রিত হয়ে যায়, তা কম্পেনসেশন হিসেবে সরিয়ে রাখা হয় জনগনকে সুদের হাত ত্থেকে বাচিয়ে রাখার মানসে। এবং প্রতি বছর আলাদা অডিট করা হয় এই সুদের মাত্রা কিরূপ তা নির্ণয়ে। ব্যাংক সর্বধা সচেষ্ট থাকে এ ধরনের সুদ থেকে মুক্ত থাকতে। আলোচনার পরিসমাপ্তিতে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এ মর্মে পরিসমাপ্তি টানেন যে, ইসলামী ব্যাংকিং বলতে আসলে কিছু নেই। সত্যি পরিতাপ!!!! ইসলামিক ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) যেখানে ইসলামী ব্যাংক কে স্বীকৃতি দিয়েছে, যখন সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকের জোয়ার চলছে, বিশ্ব মন্দার মাঝেও ইসলামী ব্যাংক দাপটের সাথে টিকে আছে, সেখানে তিনি বলে ফেললেন ইসলামী ব্যাংকিং বলতে আসলে কিছু নেই।

তার শিক্ষার পরিধি কতটুকু তা সহজেই অনুমেয়। উপরে তিন আলোচকই দেশের স্বনামধন্য ব্যাক্তিদের কাতারের। অথচ ইসলামী ব্যাংকিং এর মত বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত ধারনাকে এমন অবিবেচক ও অজ্ঞদের মত নিরূপন করায় জাতি হিসেবে আমরা হতাশ। অবাক করার বিষয়, ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনায় ইসলামী ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি কি রাখা উচিত ছিলোনা? তাহলে আমরা তাদের বক্তব্য শুনতে পারতাম। তাহলে কি বলব এধরনের আলোচনা করার মানে জনগঙ্কে বিভ্রান্ত করা।

দেশের ৭ টি ইসলামী ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো কে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া ? ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল নিয়ম পরিপালন করে যদি ব্যাংকিং করে থাকে। এখাতে কোন অনিয়ম হলে তা দেখার দায়িত্ত্ব হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু তা না করে পুলিশের সামনে দিয়ে যেভাবে ব্যাংকে হামলা-ভাংচুর হচ্ছে, মিডিয়াতে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে তাতে সত্যি আমরা শংকিত। আমাদের চাওয়া হচ্ছে, যা কিছু অন্যায় তার তদন্ত ও বিচার হোক, নিরীহ জনগনের টাকায় দীর্ঘদিনের যে ব্যাংক বিশ্বের ১০০০ ব্যাংকের তালিকায় উঠে এসেছে তার উপর অযাচিত মিথ্যাচার ও হামলা সচেতন জনগন হিসেবে কারো কাম্য নয়। এ ব্যাংকের কেউ অন্যায়ের সাথে জড়িত হলে তার শাস্তির দাবী করছি ও ব্যাংকিং সেক্টরকে রক্ষার জোরালো দাবী করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.