আওয়ামী লীগ কর্মী ইব্রাহিম অপমৃত্যু মামলা গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিবি কর্মকর্তারা সংসদ ভবন এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গতকাল। এদিকে ইব্রাহিম মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের গাড়িচালক কামাল হোসেন, পিএস সোহেল, মাইক্রোবাসের মালিক মিঠু এবং চালক মিজানকে গতকাল আটক করা হয়। রাতে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) হেফাজতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এমপি শাওনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ডিবি সূত্র জানিয়েছে। গত শুক্রবার রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় অপমৃত্যুর মামলাটি দায়ের করেন এমপি শাওনের গাড়িচালক কামাল হোসেন কালা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (তেজগাঁও জোন) উপ-পুলিশ কমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর সমকালকে বলেন, মামলার তদন্তের প্রয়োজনে জব্দ করা গাড়িসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুই ডিবির নতুন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিবির এডিসি মনিরুজ্জামান বলেন, ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর দায়েরকৃত অপমৃত্যু মামলায় যেসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই মামলার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মামলার তদন্তভার গ্রহণের পর একটি টিম ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করেছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে মামলার বাদী এবং এমপি শাওনের গাড়িচালক কামালসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত এবং ইব্রাহিমকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় মাইক্রোবাসে থাকা ৪ জনকে ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদেরও ডিবি কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুপুরে সমকালকে বলেছিলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি পেলেই আটক ৪ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। এমপি শাওনের নিরাপত্তারক্ষী দেলওয়ারসহ ঘটনাস্থলে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে।
আগামীকাল বুধবার (আজ) তাদের ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।
ডিবির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শেরেবাংলা নগর থানায় দায়েরকৃত অপমৃত্যু মামলার এজাহারের বক্তব্যই বলে যাচ্ছে চালক কামাল হোসেন। এখনও সে নতুন কোনো তথ্য দেয়নি। এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাইক্রোবাস চালক মিঠু জানিয়েছে, এমপি শাওনের গাড়ির পেছনেই তার ভাড়া করা মাইক্রোবাসটা রাখা ছিল। একটু দূরেই তিনি ছিলেন।
হঠাৎ দেখেন কয়েকজন মিলে একজনকে তার গাড়িতে তুলছেন। তিনি কাছে এসে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় ইব্রাহিমকে তোলা হচ্ছে। তারপর তিনি, চালক কামাল ও সোহেল ইব্রাহিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গাড়ি চালায় মাইক্রোবাসের চালক মিজান। জিজ্ঞাসাবাদে মিঠু আরও জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ ইব্রাহিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর ইব্রাহিমের সঙ্গেই ছিলেন সোহেল।
আর বাকিরা কেন হাসপাতাল ত্যাগ করলেন প্রশ্নের জবাবে তারা জানিয়েছেন, সাংসদ নূরুন্নবীকে বিস্তারিত জানানোর জন্য তারা হাসপাতাল থেকে আবারও সংসদ ভবন এলাকায় যান।
ডিবির এডিসি মনিরুজ্জামান সমকালকে বলেন, কোথায় গুলির ঘটনাটা ঘটেছে, কেউ ইব্রাহিমকে গুলি করেছে কি-না, কীভাবে হলো বা কারণটা কী_ এসব প্রশ্ন সামনে রেখে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া চালক কামাল ও মিঠুর বক্তব্য খতিয়ে দেখা হবে। ওই এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশের চার কনস্টেবলকে খুঁজে বের করা হয়েছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মাইক্রোবাসের চালক মিজানকেও জিজ্ঞাসাবাদে হাজির করা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শাওনের গাড়িচালক কামাল গুলিস্তান থেকে মালিবাগ হয়ে কুড়িলগামী যাত্রীবাহী মিনিবাসের শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। কামাল এসব রুটের পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সমিতির নামে চাঁদা আদায় করে। এছাড়া রমনা থানা মোটরচালক লীগের সভাপতি। কামাল এক সময় রমনার মীরবাগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী পাপ্পুর সহযোগী ছিল।
পাপ্পু ছাড়াও মালিবাগ এলাকার একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর অস্ত্রের বাহক ছিল কামাল। এমপি শাওনের গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত রমনা এলাকার অধিকাংশ দখল কার্যক্রমের সঙ্গে সে জড়িত থাকত বলেও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, পিএস পরিচয়ধারী সোহেল এমপি শাওনের আত্মীয়। নির্বাচনের সময় সোহেলের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে অলিখিত পিএস বানিয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন শাওন।
সূত্র আরও জানায়, মিঠু রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী।
তার বাড়ি শাওনের নির্বাচনী এলাকা ভোলার লালমোহনে। এলাকায় সে শাওনের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেই পরিচিত।
ইব্রাহিম মৃত্যুরহস্যের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তার স্ত্রী রীনা ইসলাম। তিনি গতকাল মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, 'আমার ধারণা কামাল এবং দেলওয়ারকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই ইব্রাহিমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। পুরো বিষয়টা এখন পুলিশের ওপর নির্ভর করছে।
তারা যদি ভালোভাবে তদন্ত করে তবে অবশ্যই ঘটনার আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। ইব্রাহিম তো বেওয়ারিশ না। তার পরিবার আছে, বাপ-ভাই আছে। তারা কেউ মামলা করতে পারত। অথচ ইব্রাহিম নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের কিছু না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবেই একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করল।
' তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে ইব্রাহিমকে একটি টেন্ডার পাইয়ে দেন শাওন। ১০ লাখ টাকা দিয়ে টেন্ডারের কাজ শুরু করেছে ইব্রাহিম। এখন আমি সব হারিয়ে পথে বসেছি। শাওন আমায় বলেছেন যে, কিছু টাকা দেবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।