ঘুনে খাওয়া হৃদয়টাকে নিয়ে চলতে চলতে আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে নিজেকে..
জীবনের আলপথ বেয়ে বেয়ে কেটে গেল অনেকটা সময়। পেছনে ফেলে আসা বয়স্ক অতীতও কেন জানি না পিছু পিছু চলে আসে, বার বার নিষেধ সত্ত্বেও। হিসেবের খাতায় কবিতার ব্যর্থ আনাগোনা। চাওয়া-পাওয়ার মস্ত ঝুলিটাতে শূণ্যতার আঁধার তার অবশিষ্ট ঘুমটুকুন ঘুমিয়ে নিচ্ছে।
শিশিরের স্নিগ্ধ পরশে ঘুম ভেঙে যাওয়া ঘাসের উজ্জল হাসি দেখে সূর্য্যি মামাও কেমন স্নিগ্ধ কোমল আলোয় ভরিয়ে তুলছে চারিদিক।
দিঘীর কালো জলে সদ্য ফোটা পদ্মফুলটির মাঝে দিশেহারা ক্লান্ত পথিক যেন শ্রান্তির শেষ আশ্রয় খুঁজে পেলো জীবনের এই পরম বেলায়।
একটা বাঁশী দূর হতে সুরে সুরে ডেকে চলেছে অনেকক্ষণ ধরে। সেই সুরের রেশটুকু ভেতরে একটা অচেনা ঝড়ের আভাস সৃষ্টি করছে, যেন খুব শীঘ্রই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। ভাবনার সুগভীর সাগর হাতড়িয়ে কয়েকটা ফেলনা নুড়ি পাথর আর কিছু টুকরো স্মৃতির মেঘ ছাড়া কিছুই মিলল না। নুড়ি পাথরগুলোকে কেন জানি না, অনেকটা আমার মতই মনে হলো।
ফেলনা। আচ্ছা, আমি কি সত্যিই ফেলনা? তাই হবে হয়তো। নয়তো কেন শুধু নুড়ি পাথরই পেলাম। আরতো কিছু পেলাম না। অনেকে কত মনি-মুক্তো পায়, কত সুখের স্মৃতি-বাকসো মাথায় করে নিয়ে যায়, কত আনন্দ বৃষ্টি পকেটে করে ঘুরে বেড়ায়।
আমিই শুধু পারি না। ইদানিং ভালো একটা সান্তনা খুঁজে পেয়েছি। আমার ভাগ্যটাই এমন, এটা ভাবতেই মনটা অনেকটা শান্ত হয়ে যায়। কিছুক্ষণ শান্ত থাকিও বটে, কিন্তু তারপর আবার সেই একঘেয়ে যন্ত্রণার পুণরাবৃত্তি। আবারও জীবনের আলপথে কাঁটার অস্থির আঘাত।
দুপুরেই সন্ধ্যা আকাশের আগমন দেখতে দেখতে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছি দিন দিন। দিঘীর সুকোমল পদ্ম এখন আর টানে না আমায় আগের মতন। বাঁশীর সুরটাও বড় বেসুরা হয়ে উঠেছে। অবশিষ্ট ভালো লাগা বিষয়ও কেমন অসহ্য যন্ত্রণায় পরিণত হচ্ছে। দিন যাচ্ছে রাত যাচ্ছে আমিও যাচ্ছি।
ঘুম ঘুম ঘুম। এই যে, শুনছো, ঘুমের দেশের পাখিরা... আমায় তোমরা সঙ্গী করবে? আমিও তোমাদের মতন ঘুম দেশে উড়তে চাই। তোমাদের সাথে আমায়, নাও না ভাই............
নেশাগ্রস্ত হৃদয়টা ইদানিং একটু বেশিই বেপড়োয়া হয়ে গেছে। কোন কিছুই মানতে চাচ্ছে না। দিন নেই রাত নেই, সারাক্ষণ শুধু যাই যাই।
স্মৃতির পিছু পিছু অনেক দূরে যাই। যতই ভুলে থাকতে চাই, হৃদয়ের ভুল বর্ণমালাগুলো ততই স্মৃতির গান গেয়ে গেয়ে সব অস্থির করে তোলে। চারিদিকে সমস্ত স্থবিরতা কেটে যায়। স্মৃতির পাখিটা বিভৎস চিৎকারে কষ্টের সাগরে দেয় ঝাঁপ, আর তার একান্ত সঙ্গী হয় কথা না শোনা হৃদয়।
সুখের ঝকঝকে মুখোশের আড়ালে বিষাক্ত লকলকে দুঃখকে কতদিন লুকিয়ে রাখা যায় তা আমার জানা নেই।
দিনতো অনেক গেলো। দুঃখকে আর কত লুকিয়ে রাখবো? মাঝে মাঝে মন চায় দুঃখগুলোকে দু'হাতে গলা টিপে মেরে ফেলি। আবার ভাবি, দুঃখগুলোইতো আমার জীবনের শেষ সঞ্চয়। দোটানা দ্বিধার অন্তরালে হারিয়ে যেতে থাকে সময়, যদিও তা অত্যন্ত ধীর গতিতে। সময়ের পিছু পিছু একদিন আমিও হারিয়ে যাবো।
চলে যাবো সবার আড়ালে, নিভৃতে নিশ্চিন্ত ঘুমে। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।