জীবন একটা বাঁশ ঝাড়........খালি মুথা আর মুথা..... ঘাস
তসলিমা নাসরিন
তার চেয়ে ঘাস হয়ে যাই চল,
তাকে বলেছিলাম, সে বলেছিল চল।
বলেছিল, তুমি আগে হও, আমি পরে।
বলেছিল, তোমার ডগায় ছোট চুমু খেয়ে তারপর আমি।
ঘাস হলাম, সে হলো না। আমাকে পায়ে মাড়িয়ে অন্য কোথাও চলে গেল।
কোথায় কার কাছে কে জানে ! ঘাসের কি সাধ্য আছে খোঁজ নেয় !
কোনও একদিন বছর গেলে শুনি
কোথাও সে বৃক্ষ হতে চেয়ে চেয়ে হয়েছেও,
আমি ঘাস, ঘাসই রয়ে গেছি, ফুল ফোটাই, দিনভর আকাশ দেখি, বাঁচি।
এদিকে দু'টো লোক ঘুরঘুর করছে, বৃক্ষ হবে, বৃক্ষ হবে ?
সে বুঝি পাঠালো বৃক্ষ হতে ? একলা লাগছে তাহলে এতদিনে ?
লোক দুটো চাওয়াচাওয়ি করে। বলে, কার কথা বলো ?
নাম বলি। জীবনে শোনেনি নাম।
তবে কেন বৃক্ষ হতে বলছো আমাকে ?
হেসে বললো, দেখতে রূপসী হবে, ফলবতী হবে।
দুর দুর করে তাড়াই তাদের। আমার ঘাসই ভালো।
ঘাস হলে দুঃখ রাখার জায়গা অত থাকে না,
ঘাস হলে কার সাধ্য আছে গায়ে চড়ে চড়ে
আঁচড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে।
আমি আমার মতো বৃষ্টি বাদলায় বাঁচি,
ঘামাচি গরমে বাঁচি।
আমার মতো রাতভর চাঁদ দেখে দেখে, চাঁদ থেকে
চুয়ে পড়া সুখ দেখে দেখে বাঁচি।
ভুল করেও কাউকে বলি না ঘাস হতে আর,
ভুল করে নিজেও কখনও বৃক্ষ হই না।
*****************************
ইচ্ছার স্বর অন্য রকম
রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
গভীর তোমার ঘৃনার তলে
বাক্যবিহীন নির্জনতায়
উদোম গাড়ল রয়েছি প'ড়েই__
সে এক রকম ইচ্ছে তোমার।
হাত পাতলেই সাগর শুন্য
চোখ খুলতেই মল্লিকা শব
রাত্রি আমার বড়ই আপন__
সে এক রকম ইচ্ছে তোমার।
শুক্লতিথীর পূর্ন চাঁদের
নিরাশীর্বাদ,মেঘের মতোন
আলতো পরশ পায়নি ললাট
সেও তো তোমার ইচ্ছে মতোন
পাড় ভাঙ্গা ঢেউ আলগা ছোঁয়ায়
নিষিদ্ধ রাত ডাকলো আবার
চেতনা ধুসর ন্যুব্জ হতাশ
রাত্রি আমার ঘুমালো পাশেই
সেও তো তোমার ইচ্ছে মতোন।
খুল্লে দুয়ার বাতাস অন্ধ
বুক ভাঙলেই দীর্ঘ নিঃশাস
সর্বপ্রকার মান অভিমান
সেও তো তোমার ইচ্ছে মতোন__
ইচ্ছে তোমার।
*****************************
দুঃখ করো না আমি আবার আসব...
কিরণশঙ্কর সেনগুপ
দুঃখ করো না আমি আবার আসবো
আমি ব্যর্থ নই, শূণ্য নই
বৃক্ষ থেকে ঝরে যাওয়া শুকনো ফুল
কিংবা উড়ে যাওয়া কীটদষ্ট পাতা নই ;
আমি অন্ধকারে মিশে আছি
তাই অদৃশ্য,
আমি হাজার দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে কাঁপছি,
তাই উধাও :
আমি দারুণ ক্ষোভের ধূম্রজালে আচ্ছন্ন
তাই দেখতে পাচ্ছ না ;
কিন্তু একদিন ঝরণার জলের শব্দ শোনা যাবে,
বাঁশি বাজার শব্দ ;
সে দিন সব বিষাদ সরিয়ে আমি আসব,
আমি আসব |
*****************************
গৃহত্যাগী জোছনা — হুমায়ূন আহমেদ
প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার
আকাশের দিকে তাকাই।
গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে?
বালিকা ভুলানো জোছনা নয়,
যে জোছনায় বালিকারা ছাদের
রেলিং ধরে ছুটোছুটি করতে করতে বলবে,
ও মাগো! কি সুন্দর চাঁদ!
নব দম্পতির জোছনাও নয়,
যে জোছনা দেখে স্বামী গাড়
স্বরে স্ত্রীকে বলবে;
দেখো দেখো,
চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর।
কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাঁতে
জোছনা নয়,
যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে ।
কবির জোছনা নয়,
যে জোছনা দেখে কবি বলবেন,
কি আশ্চর্য রুপোর থালার মত চাঁদ।
আমি সিদ্ধার্থের মত
গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি।
যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত
দরজা খুলে যাবে।
ঘরের ভেতর
ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর।
প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব, আর হাঁটব।
পূর্নিমার চাঁদ ....স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে,
চারিদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ
ডাকবে ... আয়, আয়, আয় । ।
*****************************
হিসেব
তসলিমা নাসরিন
কতটুকু ভালোবাসা দিলে,
ক তোড়া গলাপ দিলে,
কতটুকু সময়, কতটা সমুদ্র দিলে,
কটি নিরঘুম রাত দিলে, কফোটা জল দিলে চোখের –সব যেদিন ভিসন আবেগে
শোনাচ্ছেলে আমাকে, বোঝাতে চাইছিলে আমাকে খুব ভালোবাসো, আমি বুঝে নিলাম
তুমি আমাকে এখন আর একটুও ভালোবাসোনা।
ভালোবাসা ফুরোলেই মানুষ হিসেব কষতে বসে, তুমিও বসেছো।
ভালোবাসা ততদিনই ভালোবাসা
যতদিন এটি অন্ধ থাকে, বধির থাকে,
যতদিন এটি বেহিসেবি থাকে। ।
*****************************
ভালোবাসা বলতে এখনো তোমাকেই বুঝি
ঘৃণা বলতে এখনো তোমাকে
সংসার বলতে এখনো তোমাকে বুঝি
সুখ বলতেও আমি এখনো তোমাকে
কত টুকু পশু আছে, কতটা হিংস্রতা
কতটা দানব থাকে একজন মানুষের দেহে
তোমাকে আমল ছুঁয়ে যেনে, আমি সমস্ত জেনেছি
তোমার তকের নিচে কত টুকু ক্লেদ
কতটা দ্রুদতা
চোখের তারায় তুমি কতটা লুকোও পাপ
শরীলের ঘ্রাণ শুকে শুকে আমি সকল বুঝেছি
স্বপ্ন বলতে এখনো তোমাকেই বুঝি
কষ্ট বলতে এখনো তোমাকে
চুম্বনে তোমার লালা থেকে চুষে নেই
সংক্রামক ব্যাধি
তোমাকে আরোগ্য করি
তোমাকে শুশ্রূষা করি
তোমাকে নির্মাণ করি আমার বিনাশে
জীবন বলতে এখনো তোমাকে বুঝি
মৃত্যু বলতেও আমি এখনো তোমাকে।
এইটার নাম ও কবির নাম আমি জানি না যদি কারও জানা থাকে তো বলবেন।
সংগ্রহঃ Shimul Mustapha Fan Club ফেচবুক পেজ থেকে।
উৎসর্গঃ যারা অকপটে বলতে পারে জীবন বলতে এখনো তোমাকে বুঝি
মৃত্যু বলতেও আমি এখনো তোমাকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।