সপ্তদশ শতাব্দী তে পর্তুগিজ রা যখন গোয়া তে পা রাখা শুরু করলেন ,তখন তাদের সাথে তাদের নিজেস্ব গান ,নিজেস্ব খাবার ,এককথায় নিজের সংস্কৃতিও গোয়া তে আমদানি করলেন । ফলাফল টা প্রাথমিক অবস্থায় ভালো ছিল না । স্থানীয় বাসিন্দা রা তাদের প্রথমে ভালো চোখে দেখল না ,কিন্তু ধীরে ধীরে ভারতে আসা অনান্য মানুষ দের মতো তারাও ভারতীয়দের সাথে মিশে গেলেন । পারস্পরিক সাংস্কৃতিক আদান প্রদান বাড়তে থাকলো । ক্রমেই ভারতীয় আধ্যাত্বিকতা প্রভাব বিস্তার করলো পর্তুগিজ দের উপর ।
শুরু হলো সাম বেদের মন্ত্র গুলি গিটার এবং ড্রামের সাথে গাওয়া । এই ট্র্যাডিসন চলতে থাকলো । এর সাত্থে যোগ হলো সাইকোলজিকাল এফেক্ট । আধ্যাত্বিকতা,আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ,সাইকোলজিকাল এফেক্ট মিলে মিশে যেটা দাড়ালো সেটা ১৯৬০ -৭০ এরকম সময়ে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হল । তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৯০ সালে জার্মানি তে এই নতুন ধরণের মিউজিকের খোল নালচে একটু আদল বদল করে যে মিউজিক টি তৈরি হলো তারই নাম ট্রান্স ।
পপ ,রক ,জ্যাজ ,ব্লুজ ,এর পরে সবচেয়ে নবীনতম মিউজিক জেনার হলো ট্রান্স । ট্রান্স মিউজিকের ফর্মাল ডেফিনেসন হলো -
যার মধ্যে পৃথিবীর সুরেলা তম গানের(হাউস মিউজিক ) থেকেও বেশি সুর থাকবে ,আবার একই সাথে সবচেয়ে দ্রুততম তাল (বিটস ) থাকবে । সাধারনত ১২০ টা বিট পার মিনিট এর বেশি হতে হয় ।
ট্রান্স এর উপর ধর্মের প্রভাব -মূলত হিন্দু এবং ইহুদি ধর্মের প্রভাব দেখা যায় ।
ট্রান্স এর মধ্যে একটা সাইকোলজিকাল ব্যাপার সব সময় ছিল ।
একটা অদ্ভুত ঘোর লাগা পরিবেশ সৃষ্টি করে । নিজেকে যেন অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় । একই রিদম প্রথমে বিরক্তিদায়ক মনে হলেও পরে সেটাই মানিয়ে যায় ,আর বারবার শুনতে ইচ্ছে করে । ট্রান্স এর জাদু সবচেয়ে ভালো ভাবে উপলব্ধি করা যায় যদি হেডফোনে শোনা যায় । স্পিকারে সেই জাদুটা পাওয়া যায় না ।
এর কারণ টা লুকিয়ে আছে binaural beats এর মধ্যে । ধরুন আপনি হেড ফোনে গান শুনছেন আপনার এক কানে যদি ৪০ Hz এর শব্দ তরঙ্গ আসে আবার অন্য কানে যদি ৫০ Hz এর শব্দ তরঙ্গ আসে ,তাহলে binaural beats হলো ১০ Hz(৫০-৪০)। তখন আমাদের মস্তিস্ক এই দুই ধরণের বিট কে মিক্স করে ফেলে ,এবং যা সেই ঘর লাগার মুখ্য কারণ । আমাদের শরীর কে পুরোপুরি রিলাক্স করে দেয় এবং একটা স্বর্গীয় অনুভুতির সৃষ্টি হয় ।
তবে মনে রাখতে হবে binaural beats যেন ৩০ Hz এর বেশি না হয় ।
তাহলে দুটো কানে আলাদা আলাদা দুটো বিট শোনা যাবে । কোনরকম মিক্স হবে না ।
binaural beats অনেক রকমের হয় । তরঙ্গের পার্থক্য অনুসারে আলফা ,বিটা ,গামা । যখন ৭-১৩ Hz হয় তখন ওই বিট কে বলে আলফা বিট ।
সাধারনত এই আলফা বিটই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ট্রান্স মিউজিক এ ।
আমরা যখন ঘুমাই তখন ভোরের দিকে আমাদের চোখের মনি একদিক থেকে অন্য পাশে নাচতে থাকে । একে বলে রেপিড আই মুভমেন্ট । এই সময় আমাদের সারাদিনের চিন্তা ভাবনা র সলেউসান মস্তিস্ক অটোমেটিক করতে থাকে । আলফা বিট এই রেপিড আই মুভমেন্ট এর সময় কাজ করে ।
যা আমাদের প্রবলেম সল্ভিং পাওয়ার কে বাড়িয়ে দেয় ।
মোটামুটি এই হলো ট্রান্স মিউজিকের জাদুর রহস্য । ট্রান্স নতুন ধরণের মিউজিক বলে এর পরিচিতি খুবই কম । এটি ভারত,ইসরাইল ,জার্মানি ,আমেরিকা নেদারল্যান্ড এবং ব্রাজিল এ জনপ্রিয়
ট্রান্সের মূলত অনেক স্তর আছে । তার মধ্যে চারটে প্রধান ।
এত কিছু এক সাথে জানলে মাথা আউলিয়া যাবার যোগার হয় । উদাসী স্বপ্ন ভাই এর একটা লিংক দিলাম ,ওখানে স্তর গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা আছে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।