ক্যাচাল ভালো লাগেনা ক্যাচাল মুক্ত ব্লগ ক্যাচাল করতে চাইলে মেইল করেন md_naeem_islam@ovi.com অথবা ক্যাচাল ফেবুতে করতে চাইলে www.facebook.com/md.naeem.islam2
যে দল জিততে চায় না, সে দল জিতবে কেন? কাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ৯ রানে হারের পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা এমনই। সাদা চোখে বাজে, (বোধ হয় বলা উচিত জঘন্য) ব্যাটিং-ফিল্ডিংকে দায়ী করছেন অধিনায়ক থেকে শুরু করে সবাই। তবে ব্যর্থতার অন্ধকারে যেন বাংলাদেশকে ঠেলে-ঠুলে নিয়ে গেছে জেতার অনিচ্ছা। নইলে ক্রমাগত ব্যাটিংবান্ধব হয়ে ওঠা উইকেটে কেন ২১০ রান তাড়া করতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়বে অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ ম্যাচে উড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশ?
জেতার অনিচ্ছার সঙ্গে আবার ম্যাচ ফ্লিসিং গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। যেমনটা নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর বাংলাদেশ দলের সামর্থ্য নিয়ে 'ভুল ধারণা' মনে গেঁথে নিয়েছিলেন সবাই।
যে ভুল কাল ম্যাচের পর ধরিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, 'নিউজিল্যান্ড সিরিজেও কিন্তু আমরা দল হিসেবে ভালো ব্যাটিং করিনি। তার মানে পাঁচটা ম্যাচ হলো আমরা বাজে ব্যাটিং করছি। ' আসলেই তো! নিউজিল্যান্ড সিরিজের ব্যাটসম্যান সাকিবের সঙ্গে অন্যরা জোড়াতালি দিয়ে জিতিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। কাল সাকিব একাই লড়েছেন। বাকিদের চারজন রান আউট হয়েছেন।
কেউ কেউ রোমাঞ্চকর লেট কাট কিংবা জায়গায় দাঁড়িয়ে তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। তাই ম্যাচের পর জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা ক্রমাগত 'বাণী চিরন্তনী' শুনিয়ে গেছেন, '২০৯ করেও জেতার
আত্মবিশ্বাস ছিল। তা না থাকলে তো আমাদের বাড়ি চলে যাওয়া উচিত!'
সত্যিই তো। জেতার আত্মবিশ্বাস কিংবা ইচ্ছা না থাকলে মাঠেই নামা উচিত নয়। তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েসের শুরু কিন্তু এ অবিশ্বাসের জন্ম দেয়নি।
হাতের চোট কাটিয়ে ফেরার ম্যাচে তামিম একটু রয়ে-সয়ে খেললেও বল নষ্ট করছিলেন না। শুরুর জড়তা কাটিয়ে স্বভাবজাত স্ট্রোক প্লের দিকে ঝুঁকেওছিলেন এ বাঁহাতি। অন্যদিকে তামিমের সঙ্গী ইমরুল কায়েস তো সাকিবের সঙ্গে বাংলাদেশ দলে ধারাবাহিকতার অন্যতম উদাহরণ। ২০১০ সালে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান করা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান তিনি। সারা বিশ্বের তালিকায় সপ্তমে থাকা ইমরুল তামিমের পাশে সতর্ক ব্যাটিং করে গেলেও বাজে বল ছাড়ছিলেন না।
হারের দুঃস্বপ্ন তখন বাংলাদেশের ত্রিসীমানায়ও নেই।
এল একসময়। তাও দুঃস্বপ্নের মতোই। ক্রিস্টোফার পফুর বল লেগ স্টাম্পে পিচ করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে তামিমের প্যাডে লাগে। অনেক চিন্তাটিন্তা করে আম্পায়ার এনামুল হক মনি এলবিডবি্লউর যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটি নিয়ে সবাই বিস্তর হাসাহাসি করেছে।
দারুণ কিছু করে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখা তামিমের মনের অবস্থা না হয় অপ্রকাশিতই থাকল! যাক, কি আর করা! তামিমের তাণ্ডব না হয় পরের ম্যাচেই দেখা যাবে। আজ অন্য কেউ ম্যাচটা শেষ করে দিক।
দিলেন শেষ করে। তবে সব সম্ভাবনাকে উল্টে দেওয়া 'শেষ' এটা। বাংলাদেশের এক দিনের ম্যাচ পরিকল্পনায় অদ্ভুত একটা বৈপরীত্য আছে।
তামিম যান আর ক্রিজে আসেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। যাঁর ফিল্ডিংটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে পীড়াদায়ক। আর ব্যাটিংটা শ্রমিকশ্রেণীর। প্রচণ্ড খেটে-খুটে একদিন রান করবেন তো পরের বেশ কয়টা ম্যাচে অধিনায়কের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে থাকবেন। সাকিব কাল ফুঁসলেনও, 'যে ব্যাটসম্যান রান করে না, আবার বাজে ফিল্ডার, তাকে একাদশে রাখা খুব কঠিন।
' ২০ বলে ১০ রান করে আউট হওয়া জুনায়েদ এ মন্তব্য শুনে থাকলে তাঁরই মঙ্গল। একদিকে তিনি বল নষ্ট করছেন, সে সংক্রমণে ফর্মে থাকা ইমরুলও একসময় রানের গতি বাড়ানোর চাপ গায়ে নিতে শুরু করে থাকবেন। রেমন্ড প্রাইসকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তাঁর সীমানার ওপারে পাঠানোর ইচ্ছার প্রভাবক এ ম্যাচ পরিস্থিতিই। জিম্বাবুয়ের এ বাঁহাতি স্পিনারকে সুইপ শটে বাউন্ডারি দিয়ে মোহাম্মদ আশরাফুলের শুরুটাকে মনে হচ্ছিল দর্শক দুয়োর পাল্টা জবাব! কিন্তু ৯ বল পরই এশিয়ান গেমস ফাইনালের 'অ্যাকশন রিপ্লে' দেখিয়ে দ্বিগুণ সমালোচনা কুড়িয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। সেই লেট কাট করতে গিয়ে বোল্ড।
তবে বোলার আফগানিস্তানের করিম নন, জিম্বাবুয়ের অফ স্পিনার প্রসপার উতসেয়া।
এতক্ষণ ড্রেসিং রুমে বসে সঙ্গীদের ভুল-ভাল দেখছিলেন। এরপর ক্রিজে এসে আশরাফুলের বাজে আউটের পর মুশফিকুর রহিমের 'অশোভন' আউট দেখে আর আবেগ গোপন রাখতে পারেননি সাকিব। ব্যাট বাতাসে ছুড়ে অধিনায়কের উষ্মার দৃশ্য মনে থাকলে পরের ম্যাচে জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রাইসকে তুলে মারার ভুল না করারই কথা মুশফিকের।
৯৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশের দিকেই ম্যাচকে টেনে রেখেছিলেন সাকিব।
তাঁর ব্যাটিংয়ে এ বিপর্যয়ের এতটুকু ছাপও পড়েনি। উল্টো কিথ দাবেংওয়ার এক ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মেরে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়েকেই। ফর্মের তুঙ্গে থাকা অধিনায়ককে স্ট্রাইক দিতে সোহরাওয়ার্দী শুভর আত্মাহুতিকেও তাই বড় ক্ষতি মনে হয়নি। এমনকি সাকিবের 'কল' নিয়ে দ্বিধার খেসারত দিয়ে মাশরাফির রান আউটের ক্ষতিও মনে হচ্ছিল পুষিয়ে যাবে। কিন্তু পুরো ম্যাচে নিজের একমাত্র ভুলে ৫৩ বলে ষোড়শ ওয়ানডে ফিফটি করা সাকিব শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেওয়ার পর 'আইসিইউ'তে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা।
৬ বল বাকি থাকতে শফিউল ইসলামের রান আউট মর্গেই পাঠিয়ে দেয় বাংলাদেশকে!
অথচ টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়ের দারুণ শুরুর কি করুণ পরিণতি ঘটিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা! প্রথম 'পাওয়ার প্লে'তে আক্রমণে এসে উইকেট নিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। সব মিলিয়ে ৪১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যাচের সফলতম বোলার। ব্যক্তিগত একটি অর্জনও এ ম্যাচে ছুঁয়েছেন এ বাঁহাতি স্পিনার। ওয়ানডেতে দেড় শ উইকেট পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি বোলার তিনি। সোহরাওয়ার্দী শুভ ও মাহমুদুল্লাহও হতাশ করেননি।
আর অধিনায়কের বাঁ হাতে তো নিয়ন্ত্রণও বরাবরই ছিল। যে কারণে ২০ ওভারে ১ উইকেটে ৭৬ রান তোলা জিম্বাবুয়ে পরের পাঁচ ওভারে ১৪ রান তুলতেই খুইয়ে বসে আরো ৩ উইকেট। সেখানে পিচ্ছিল পথ ধরে আর খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। মিডল অর্ডারে ক্রেইগ আরভিনের সঙ্গে বাংলাদেশের দৃষ্টিকটু ফিল্ডিংয়ের যোগফল চিগুম্বুরার আত্মবিশ্বাস। যে আত্মবিশ্বাসের কথা লাঞ্চের সময় স্টেডিয়ামের লাউড স্পিকারে শোনা গেলে নিশ্চিতই হাসত মাঠে খেলতে নেমে পড়া স্কুলের খুদে ক্রিকেটাররাও!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।