আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপজাতিরা খায় ব্যাঙাচি, বাঙালিরা খায় ব্যাঙের পা: কে কার চেয়ে বেশি?

নীরব বয়ান

পাঠক ভাইবোনেরা, আমার লেখার শিরোনাম দেখে ঘাবড়াবেন না। অনুরোধ করবো, একটু ধৈর্যসহকারে লেখাটা পড়বেন। আমার এলোমেলো ভাবনাগুলো সাজিয়েগুছিয়ে লিখতে পারছি না। তাই লেখাটাও একটু এলোমেলো মনে হতে পারে। গত ২৮ নভেম্বর, ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের প্রথম পাতায় প্রকাশিত জনৈক ইনাম আহমেদের একটি লেখা “Lonely hills, deadly hunters” (নি:সঙ্গ পাহাড়, ভয়ংকর শিকারী) এবং সে লেখার উপর জনৈক পাঠক মার্ক আকামত (Mark Akamat)এর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আজকে আমার এ লেখা।

গত ২৮ নভেম্বর ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের প্রথম পাতায় “Lonely hills, deadly hunters” (নি:সঙ্গ পাহাড়, ভয়ংকর শিকারী) শিরোনামে জনৈক ইনাম আহমেদের একটি লেখা প্রকাশ করা হয়। ঐ প্রতিবেদনের সাথে ইনসেটে শিকার করা এক বানর হাতে একজন শিকারীর ছবি ছাপা হয়েছে (নিচের ছবি দেখুন)। নি:সঙ্গ পাহাড়ের বেচারা ‘উপজাতি’ শিকারী জানে না তাকে “ভয়ংকর শিকারী” অভিহিত করে প্রকৃতিপ্রেমী এক শহুরে বাঙালি খুবই দরদ নিয়ে ইংরেজি দৈনিকে খবর ছাপিয়েছে। বেচারা ইংরেজী তো দূরের কথা, হয়ত বাংলাও ঠিকমত বুঝে না, বলতেও পারে না। এ অবস্থায় যদি এক প্রকৃতি দরদী বাঙালি ‘ভয়ংকর শিকারী’ বলে গালি দিয়ে ইংরেজী পত্রিকার পাতা ভরিয়ে ফেলে তাহলে মুর্খ ‘উপজাতি’ শিকারীর করার কিছুই নেই।

তাকে যদি সব বন্যপশুপাখী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের জন্যে দায়ী করা হয়, তার করার কিছুই নেই, বলারও নেই। বোবার মত কী বলতে গিয়ে কী বলেছে আর ইনাম সাহেব কী বুঝেছেন সে হয়ত জানে না। জানবেও বা কী করে? বেচারা শিকারী তো অন্ধ, সে দেশের আইনও জানে না, পড়তেও জানে না। সে জানে না বন্যপশুপাখী মারা দন্ডনীয় অপরাধ। জানলেও বা কী হবে সে তো নি:সঙ্গ পাহাড়ের “পাহাড়ী”, যা ইনাম সাহেবের ভাষায় deadly hunter. ইনাম সাহেব একটুর জন্যে ‘জঙ্গলী’ বলেননি।

তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস বেচারা “জঙ্গলী” শিকারী জানে, কোন মানুষের কোন জঙ্গলী আকাংখা ও সীমাহীন লোভের কারণে তার ‘জঙ্গল’ উজার হয়ে যাচ্ছে; জঙ্গল উজার হওয়ার কারণে তার শিকারগুলো যেমন বানর, হরিণ, বনমুরগী ইত্যাদি হারিয়ে যাচ্ছে। বেচারা “জঙ্গলী শিকারী” জুমের ফসল শেষে একটু অবসর পেলে মাঝে মধ্যে হয়ত দেশীয় গাদা বন্দুক কাঁধে নিয়ে শিকার করতে যেতো। বেচারা হয়ত জানতো না সেদিন এক যুগপত ঘটনা ঘটবে - ইনাম সাহেব থিন্ডুর পাহাড়ে ট্রেকিং-এ যাবে আর তার যাবার পথে শিকার হাতে নিয়ে সে তার কাছে ধরা পড়বে, ক্যামেরাবন্দী হয়ে যাবে। বেচারা জঙ্গলী শিকারী হয়তো জানতো না, ঢাকায় ফিরে অট্টালিকায় কোন এক সুন্দর দামী সোফায় (হয়ত সে কাঠগুলো বান্দর থেকেও আসতে পারে) বসে ইনাম সাহেব তাকে নিয়ে, পাহাড়ী জঙ্গলীদের নিয়ে ইংরেজী দৈনিকে লেখা লিখবেন; বন্যপ্রাণী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্যে ‘পাহাড়ীদের গোষ্ঠীসহ’ দায়ী করবেন। সে হয়ত জানতো না, একটি বারের জন্যেও ইনাম সাহেব তার লেখায় কাঠখেকো জঙ্গলীদের কথা উল্লেখ করবেন না।

তবে জানলেও বেচারা “জঙ্গলী শিকারী” কী আর করতে পারতো। সেই বানর, ছাগল ও দইওয়ালার গল্পের কথা বলতে হয়। বানর দই খেয়ে যায়, আর দই খাওয়ার অপরাধে দইওয়ালা ছাগলকে পেটায়। বেচারা উপজাতি শিকারী! সে তো দই খাওয়া দাঁড়িওয়ালা ছাগলের মত, কিন্তু ইনাম সাহেবের কলমের খোঁচায় সে হয়ে গেলো ভয়ংকর শিকারী। ঘটনা এখানে শেষ নয়।

ইনাম সাহেবের লেখার উপর জনৈক পাঠক মার্ক আকামত (Mark Akamat) যা মন্তব্য করেছেন তা পড়লে চোখ উল্টে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়। জানিনা আকামত সাহেবের পরিচয় কী, তবে অনুমান করছি, তিনিও ইনাম সাহেবের মত এক শহুরে ভদ্র বাঙালি। আকামত সাহেবের ইংরেজী গালি নি:সঙ্গ পাহাড়ের ‘উপজাতি শিকারী’র কানে লাগবে না, পৌঁছবেও না। কিন্তু ডেইলি স্টার পড়ে একটু আধটু ইংরেজী জানা এ অধম অডঙ চাকমার তা হজম করতে খুব কষ্ট হয়। আকামত সাহেব মন্তব্য করেছেন, “Killing of wild animals in the whole Ctg. Hill Tracts is rampant. In the name of traditional rights of indigenous peoples all tribes people in the country are killing and eating all animals present in the forests including TADPOLES. So, when members of the public collect signature campaign to give constitutional recognition to these ethnic groups of people they should also get a line in the constitution that all wildlife have the right of survival in addition to the ethnic people in our hills. (“পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধে বন্যপ্রাণী নিধন চলছে।

ঐতিহ্যগত অধিকারের নামে এসব উপজাতির লোকজন সারাদেশে বনের বন্যপ্রাণী মারছে আর খাচ্ছে। এমনকি ব্যাঙাচিও বাদ যায় না। তাই, যখন কেউ এসব নৃ-জনগোষ্ঠীর লোকজনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্যে দস্তখত সংগ্রহ কর্মসূচী চালায় তাদের উচিত হবে এসব নৃ-জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি আমাদের পাহাড়ে বন্যপ্রাণীদের বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানে একটি লাইন হলেও অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা যেন রাখেন”। ) আহা! আকামত সাহেব। আপনার মন্তব্য দেখে আমার ঢোঁক গিলতে কষ্ট হচ্ছে।

বার বার মনে হচ্ছে, আপনার মত মহান বন্যপ্রাণী দরদী আর কেউ নেই। কী বলবো বুঝতে পারছি না। তারপরও বলি। সুমন চট্টোপাধ্যায় গান সেঁধেছেন, “এদেশে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া অপরাধ, ঘুষ খাওয়াতে নয়”। ঠিক তেমনিভাবে আকামত সাহেবকে বলতে হয়, উপজাতিদের ব্যাঙাচি খাওয়াতে অপরাধ, কিন্তু বাঙালিদের ব্যাঙের পা বিক্রি করে খাওয়াতে নয়।

উপজাতিরা বছরে হয়ত কয়েকবার ব্যাঙাচি ধরে রান্না করে খায়, তখন আকামত সাহেবের মত বাঙালিরা ধুয়া তুলে “বন্যপ্রাণী মারছে আর খাচ্ছে”। কিন্তু তারা কী কখনো প্রশ্ন করেন ব্যাঙাচি রান্না করে খাওয়া নাকি ব্যাঙের পা বিক্রি করে খাওয়া বেশি অপরাধ? তারা কী কখনো প্রশ্ন তুলেন বাঙালিরা কী পরিমাণ ব্যাঙের পা ফ্রোজেন করে ইউরোপ-আমেরিকায় বিক্রি করে খায়? কখনো কী প্রশ্ন তোলেন, সেটেলার বাঙালিরা কীভাবে পাহাড়ের পর পাহাড় দখল করে বন ধ্বংস করে? কখনো কী প্রশ্ন তোলেন কাঠখেকো ব্যবসায়ীরা (যাদের অধিকাংশই বাঙালি) জঙ্গল উজার করে কীভাবে কাঠ পাচার করে? যাক, বলতে চাচ্ছিলাম ব্যাঙাচি খাওয়া ও ব্যাঙের পা বিক্রি করা নিয়ে। আকামত সাহেবের মন্তব্য পড়ে কৌতুহল জাগলো কী পরিমাণ উপজাতিরা ব্যাঙাচি খায়, আর কী পরিমাণ ব্যাঙের পা বিক্রি করে বাঙালিরা টাকা কামায় আর সেই টাকায় পেট চালায়। ব্যাস! ইন্টারনেটে গবেষণা শুরু করলাম। যা তথ্য পেলাম তা রীতিমত ভয়ংকর।

আকামত সাহেবের মত বাঙালিদের জ্ঞাতার্থে বাঙালিদের ব্যাঙের পা খাওয়া সম্পর্কে নিচে গবেষণার প্রধান প্রধান তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হলো। বাংলাপিডিয়ার সূত্র অনুসারে বাংলাদেশে ২২ প্রজাতির ব্যাঙ আছে। সবই বন্য প্রজাতির। এদেশে ব্যাঙ চাষ করা হয় না। তাইওয়ান, চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াতে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাঙ চাষ করা হয়।

ধর্মীয়ভাবে বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। ইসলাম ধর্মে ব্যাঙ খাওয়া হারাম। তবে ব্যাঙের পা রপ্তানিতে বাংলাদেশের স্থান প্রথম দশের মধ্যে ছিল। এ তথ্য হলো, গত দেড় দশক আগের। বর্তমানে কোন অবস্থায় আছে জানা যায়নি, তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ফ্রোজেন ফুড আইটেমের মধ্যে ব্যাঙের পা এখনো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত।

বুঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাঙের পা’র গুরুত্ব এখনো কমে যায়নি। ব্যাঙের পা’র চাহিদা সবচেয়ে বেশি ইউরোপ ও আমেরিকাতে। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি চাহিদা আছে ফ্রান্সে। সেখানে বছরে গড় চাহিদা ৩০০০ - ৪০০০ টন। এ চাহিদার বড় যোগান আসে এশিয়া দেশসমূহ হতে বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া থেকে।

চীন ও ভিয়েতনাম থেকেও রপ্তানি করা হয়। হিসাব করে দেখা গেছে, ১ কেজি ব্যাঙের পা’র জন্যে গড়ে ২০ থেকে ৫০ টা ব্যাঙ লাগে। এই হিসেবে ইউরোপ ও আমেরিকাতে ১৯৮৭ সালে ৬০,০৮০,০০০ - ১৫০,২০০,০০০ টি ব্যাঙ এবং ১৯৯৩ সালে ৯৪,০০০,০০০ - ২৩৫,০০০,০০০ টি ব্যাঙ রপ্তানি করা হয় (তথ্যসূত্র: Veith et al, 2000, Biodiversity and Conservation, Vol 9, pp.333–341). আগেই বলা হয়েছে, এসব যোগান আসতো এশিয়ার দেশসমূহ হতে। বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ ব্যাঙের পা রপ্তানি করা হয়, এবং ব্যাঙের পা বিক্রি করে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাঙালিরা উপার্জন করে সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছি। বাংলাপিডিয়ার সূত্র অনুসারে, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে ব্যাঙের পা বিক্রি করে বাঙালিরা ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১৮২ কোটি টাকা) আয় করেছিলেন(এখানে উল্লেখ্য, বাঙালিরা বলছি এ কারণে ব্যাঙের পা ব্যবসায় কোন ‘উপজাতি’ কখনো জড়িত ছিলনা এবং এখনো নেই)।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কী পরিমাণ বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙের পা রপ্তানি করা হয়েছিল সিসিএম (Consortium for Conservation Medicine)তার একটা হিসেব দিয়েছে: সাল পরিমাণ (টন হিসেবে) ১৯৮৭ ২৩১৮ ১৯৮৮ ২৮২৪ ১৯৮৯ ২৬৮৫ ১৯৯০ ৭৩৯ ১৯৯১ ৩১৮ ১৯৯২ ৭৭১ ১৯৯৩ ৭০০ ১৯৯৪ ৭০০ বাংলা পিডিয়াসূত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙের পা রপ্তানি বন্ধ আছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলেছে, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ব্যাঙের পা রপ্তানির উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তা ছিল সাময়িক। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পেছনে দুটো প্রধান কারণ ছিল। প্রথমত, ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার। কীটনাশক ব্যবহারের কারণে খেতের অনেক পোকা মরে যায়।

ব্যাঙেরা সেসব পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। ফলে কীটনাশকের বিষক্রিয়া ব্যাঙের গা থেকে মানুষের গায়েও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে কারণে ইউরোপ ও আমেরিকা বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙের পা আমদানীর ব্যাপারে কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ চুক্তি। এ আইনের আওতায় কিছু কিছু প্রজাতির ব্যাঙ প্রায় “বিপন্ন প্রজাতির” মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

সেগুলো রক্ষার জন্যে আন্তর্জাতিক আইনে বিধিনিষেধ আরো করা হয়। যা হোক, এসব হলো আইনের বিষয়। কিন্তু বাস্তবে কী ঘটছে? এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছিলাম। সর্বসাম্প্রতিক অবস্থার উপর সঠিক কোন গবেষণা প্রতিবেদন পাওয়া না গেলেও ঐসব প্রতিবেদনে ব্যাঙের পা’কে ফ্রোজেন ফুড আইটেমের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙের পা রপ্তানির জন্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ রয়েছে, যেমন ফ্রগ লেগস এক্সপোর্ট প্রা: লিমিডেট।

ধরে নেওয়া যায়, যদি বাংলাদেশ থেকে যদি ব্যাঙের পা রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ থাকে তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। সেই যাক, আমার মূল বক্তব্য হলো আকামত সাহেবের মন্তব্য নিয়ে, ‘উপজাতিরা’ ব্যাঙাচি খায় বলে তার খোঁচা মারা নিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কে বেশি ব্যাঙ হত্যা করে? ‘ব্যাঙাচি খেকো উপজাতিরা’ নাকি ব্যাঙের পা বিক্রয়কারী বাঙালিরা? নিচের ছকে দেখা যাক, পরিসংখ্যান কী বলে। বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙ রপ্তানির হিসাব সাল পরিমাণ (টন হিসেবে) কেজি হিসেবে মোট ব্যাঙের সংখ্যা* ১৯৮৭ ২৩১৮ ২৩১৮০০০ ৪৬,৩৬০,০০০ ১৯৮৮ ২৮২৪ ২৮২৪০০০ ৫৬,৪৮০,০০০ ১৯৮৯ ২৬৮৫ ২৬৮৫০০০ ৫৩,৭০০,০০০ ১৯৯০ ৭৩৯ ৭৩৯,০০০ ১৪,৭৮০,০০০ ১৯৯১ ৩১৮ ৩১৮,০০০ ৬,৩৬০,০০০ ১৯৯২ ৭৭১ ৭৭১,০০০ ১৫,৪২০,০০০ ১৯৯৩ ৭০০ ৭০০,০০০ ১৪,০০০,০০০ ১৯৯৪ ৭০০ ৭০০,০০০ ১৪,০০০,০০০ মোট ২২১,১০০০,০০০ *গড়ে প্রতি কেজি ব্যাঙের পা’র জন্যে ২০ থেকে ৫০টা ব্যাঙ মারতে হয় (তথ্যসূত্র: Veith et al, 2000, Biodiversity and Conservation, Vol 9, pp.333–341)। এখানে সর্বনিম্ন পরিমাণটা (২০ টা ব্যাঙ/কেজি) ধরে হিসেব করা হয়েছে।

লেখাপড়া না জানা কোন ব্যাঙাচি খেকো ‘উপজাতির’ পক্ষে উপরের ছকে বর্ণিত সংখ্যাগুলো মেলানো খুবই কঠিন হবে। তবে আমার মনে হয়, এ হিসেবটা দেখলে আকামত সাহেবের চোখ বড় বড় হয়ে যাবে। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল - এই ৮ বছরের মধ্যে বাঙালিরা পেট চালানোর জন্যে কমপক্ষে ২২ কোটি ১১ লক্ষ ব্যাঙ মেরেছিল। যা গড় করলে প্রতিবছর ২ কোটি ৬৩ লক্ষ করে ব্যাঙ মারা হয়েছিল। এটা কী চাট্টিখানি কথা! এত সংখ্যক ব্যাঙ হত্যার জন্যে দায়ী কে? প্রশ্ন জাগে, আকামত সাহেবের মত “গড় বাঙালিরা” এ বিষয়ে কী কখনো প্রশ্ন তুলেছেন? এখন কথা বলা যাক, ব্যাঙাচি খেকো ‘উপজাতি’দের ব্যাঙাচি খাওয়া নিয়ে।

‘উপজাতিরা’ কী পরিমাণ ব্যাঙাচি খায় বাঙালিরা গবেষণা করেননি। সে রকম কোন গবেষণা প্রতিবেদন চোখে পড়লো না। তাই বলতে পারছি না, ‘উপজাতি’রা বছরে কী পরিমাণ ব্যাঙাচি খায়। তবে ‘উপজাতিরা’ ব্যাঙাচি খায় না - একথা বলতে পারি না। তারা অবশ্যই ব্যাঙাচি খায়।

কিন্তু তাদের রসনায় বছরে ক’বার ব্যাঙাচি জুটে? বেচারা ‘উপজাতিরা’ ছোট ছোট ডোবা চেঁছে কিংবা ছোট নদীর খাড়ি থেকে ফলুই (বাঁশের চিলতে তৈরী এক প্রকার ছাঁকনি)দিয়ে পানি ছেঁকে ব্যাঙাচি ধরার সুযোগ পায়, তাও বছরে দু’একবারের বেশি হওয়ার কথা নয়। কেননা, প্রাকৃতিকভাবে ব্যাঙেরা তো আর সারাবছর ডিম দেয় না, ডিম দেয় বছরের একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে, বিশেষত বর্ষা ঋতুতে। দ্বিতীয়ত, (সমতলের ‘উপজাতিদের’ কথা বাদ দিলে) পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘উপজাতিদের’ তো ব্যাঙাচি খেতে পাওয়ার সুযোগ আরো কম। কারণ, খাল-বিল-ডোবাহীন পাহাড় পর্বতে তো আর ব্যাঙাচি উৎপাদন হওয়ার কথা নয়। উপত্যকার আনাচে-কানাচে ধানি জমির আশেপাশে ছোট ছোট খাড়ির পানিতে একটু আধটু ব্যাঙাচি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

তাই কেউ কেউ কদাচিত ব্যাঙাচি খাওয়ার সুযোগ পেলেও পেতে পারে। তাই বলে এই একটু আধটু ব্যাঙাচি খাওয়া নিয়ে ‘উপজাতি’দের আকামত সাহেবের মত গড় বাঙালিদের কাছ থেকে খোঁচা খেতে হবে? খাওয়া নিয়ে খোঁচা মারা এটা কেমন কথা? হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। তবে আকামত সাহেবের মত বাঙালিদের খোঁচা খেয়ে আজ অনেক প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে। ইসলাম ধর্মের অনুশাসন অনুসারে, মুসলমানদের ব্যাঙ খাওয়া হারাম। আর নিজেও না খেলেও সেই হারাম ব্যাঙ বিক্রি করে ঐ পয়সা খাওয়া কী জায়েজ? বাঙালি ব্যবসায়ীরা নিজেদের আন্ডাবাচ্চা-বউ-পোলাপান ভরনপোষণ তথা বৈদেশিক মুদ্রা কামানোর জন্যে মারে কোটি কোটি ব্যাঙ, আর ‘উপজাতিরা’ মারে এক-দুইবেলা খাবারের জন্যে।

যারা কোটি কোটি ব্যাঙ মারে তাদের ব্যাপারে আকামত সাহেবদের কোন রা নেই, আর যারা এক-দুইবেলা ব্যাঙাচি খায় তাদের পরিচিতি হয়ে যায় ‘ব্যাঙাচি খেকো উপজাতি’। সত্যি সেলুকাস! বিচিত্র আকামতদের মানসিকতা! আকামত সাহেব তার মন্তব্যে আরো একটি দাবী তুলেছেন। সেটা হলো আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি সংবিধানে বন্যপশুপাখিদের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তার এই দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আরো একটি বিষয় যোগ করতে চাই - কেবল ব্যাঙাচি খেকো, বানর খেকোদের শাস্তির বিধান রাখলে হবে না, যারা বন খেকো, যারা কোটি কোটি ব্যাঙের হত্যাকারী তাদের বিরুদ্ধেও সংবিধানে কঠোর ব্যবস্থা রাখা হোক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।